করোনাভাইরাসের মহামারী শুরুর ২২ মাসের মাথায় দেশে মোট শনাক্ত রোগী ১৬ লাখ ছাড়িয়ে গেল। এমন এক সময় এই দুঃখজনক মাইলফলকে বাংলাদেশ পৌঁছাল, যখন করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ফের বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২ হাজার ৯১৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি।
একদিনে এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর, সেদিন ৩ হাজার ১৬৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ এক হাজার ৩০৫ জনে। গত একদিনে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ১১১ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস।
গত এক দিনে দেশে মোট ২৪ হাজার ৯৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তাতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
এর আগে গত বছরের ৩১ অগাস্ট নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার এর চেয়ে বেশি ছিল। সেদিন প্রতি ১০০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১১ দশমিক ৯৪ জনের কোভিড পজিটিভ এসেছিল।
মঙ্গলবার ২ হাজার ৪৫৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন ২৭৪ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৭ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন। এই হিসাবে দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ২১ হাজার ৫৪১ জন, যা আগের দিন ১৮ হাজার ৮৯৫ জন ৭১৩ ছিল।
গত এক দিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ২৪৩৪ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের ৮৩ শতাংশের বেশি। দেশের ১৫টি জেলায় একদিনে কারও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি।
যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের দুজন পুরুষ, দুজন নারী। একজন চট্টগ্রাম বিভাগের এবং তিনজন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজনের বয়স ছিল ৭০ বছরের বেশি; আর একজনের বয়স ছিল ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে।
সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় সারাদেশকে লাল, হলুদ ও সবুজ- এই তিন ভাগে ভাগ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে ঢাকা ও রাঙামাটিকে ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’বা লাল জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দুই জেলায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১০ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশের মধ্যে।
শনাক্তের হার ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে থাকা রাজশাহী, রংপুর, নাটোর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, যশোরকে রাখা হয়েছে হলুদ জোনে। দেশের বাকি ৫৪টি জেলা আছে সবুজ জোনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে পরীক্ষা করা ২৪ হাজার ৯৬৪টি নমুনা মিলিয়ে এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ৩০১টি নমুনা।
এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। গত বছর ৩১ অগাস্ট তা ১৫ লাখ পেরিয়ে যায়। এরপর সাড়ে চার মাসে আরও এক লাখ রোগী এই তালিকায় যুক্ত হলেন।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছর ৫ ডিসেম্বর কোভিডে মোট মৃত্যু ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৫৫ লাখ ৬ হাজার ছাড়িয়েছে। আর শনাক্ত হয়েছে ৩১ কোটি ৩৮ লাখের বেশি রোগী।