তানভীর দিপু: মেলায় রঙিন বেলুন বিক্রি হবে, আয় হবে বাড়তি টাকা। তাই বাড়ির ভেতরেই সিলিন্ডার থেকে গ্যাস দিয়ে বেলুন ফুলাচ্ছিলেন আনোয়ার হোসেন। শুক্রবার মেলায় উঠাবেন বেলুন, কিছু বেলুন কিনতে এসেছিলেন কয়েকজন ক্রেতাও। উৎসবের আমেজেই আনোয়ারের পরিবারের ও পাড়া প্রতিবেশীদের শিশুরা এসেছিলো বেলুন ফোলানো দেখতে। কিন্তু নিমিষেই উৎসবের বিকেল পরিনত হলো আর্তনাদে। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় নাঙ্গলকোটের মোকরা ইউনিয়নে বিরুলি গ্রামে গ্যান বেলুন ফোলানোর সময় সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে ১০ শিশুসহ আহত হয় ৩০ জন। আহতদের মধ্যে বেলুন ব্যবসায়ি আনোয়রসহ ১৯ জন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। অন্যান্যদে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি অন্তত ৬ জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। আশংকাজনকদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
হাসপাতালে আহতদের দেখতে এসে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন জানান, আহতদের সকলের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তাদেরকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
মোকরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন আলমগীর জানান, আনোয়ার হোসেন বেলুন ফোলানোর জন্য যে সিলিন্ডারটি ব্যবহার করতো তা অনেক পুরোনো ছিলো বলে জানা গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বিষ্ফোরণের মূল কারণ বলে আপাতত ধারনা করা হচ্ছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য আমার ব্যাক্তিগত এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, নাঙ্গলকোটে গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে আহতদের ভিড়। শিশুদের চিৎকার আর্তনাদে ভারী হয়ে আছে পরিবেশ। একের পর এক আসতে থাকা রোগীদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। শিশুদের বেশির ভাগই সারা দেহে মারাত্মক জখম নিয়ে এসেছেন। কারো মাথা, কারো চোখ,কারো পেট থেকে রক্ত ঝরছে। বয়স্ক যারা আহত হয়েছেন তাদের অবস্থাও গুরুতর। সারা শরীরে ঝলসে যাবার মত আহত অবস্থা তাদের। একে একে ১৯ জনকে এই ওযার্ডে ভর্তি করা হয়। বেডে সংকুলান না হওয়ায় পরে রোগীদের রাখা হয় মেঝেতে।
বেলুন ব্যবসায়ি আনোয়ারের পরিবারের ৪ শিশুসহ ৬ জন ভর্তি আছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আনোয়ারের বোন ফারহানা জানান, বিষ্ফোরণে আনোয়ারের ৬ বছরের মেয়ে সহ ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছে। শিশুরা যারাই আহত হয়েছে তারা সবাই বেলুন ফোলানো দেখতে ভিড় করছিলো।
স্থানীয় এক যুবক মুন্না সবাইকে হাসপাতালে নিতে সবাইকে সহযোগিতা করে। মুন্না জানায়, শুক্রবার এলাকায় একটি মাহফিল হবার কথা ছিলো। করোনার কারনে মাহফিল বন্ধ করা হয়। কিন্তু সেখানে ছোট্ট একটি মেলা হবার কথা ছিলো বলে আমরা আনোয়ারের বাড়ির কাছেই জমির পাশে ছিলাম।হঠাৎ বিকট শব্দ শুনলাম, দেখলাম অনেক উপরের দিকে কিছু একটা উঠে আবার পের যাচ্ছে। দৌড়ে গিয়ে দেখি আনোয়ারের বাড়ির সামনে চিৎকার। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে আহত শিশুরা। তাদেরকে আরো কয়েকজনের সহযোগিতায় প্রথমে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।
তাৎক্ষনিকভাবে আহতদের যাদের নাম পাওয়া পাওয়া গেছে তারা হলো- সম্রাট (৯), মিশু(১০), সাইফুল (১০), শাহ আলম (৫৫), সামিউল হাসান(১৩), আনোয়ার(৩৫), রব(২৭), সাকিব (১৫), রুমি(১৩), মরিয়ম(১৪), নাইম, পপি(১০), বাছির (১৩)সহ অন্যান্যরা।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরে বার্ন ইউনিটের প্রধান মির্জা তায়্যেবুল ইসলাম জানান, বিষ্ফোরণে সিলিন্ডারটি গুড়ো হয়ে স্পিøন্টারের মতো শরীরে গেঁেথে সবাই আহত হয়েছে। করো কারো শরীরে সহস্রাধিক লোহার গুড়ো গুড়ো টুকরো রয়েছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কাউকে ঢাকায় পাঠানো হয়নি। তবে আহতদের স্বজনেরা যদি চায় তারা তাদেরকে নিয়ে যেতে পারবেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্বাহী পরিচালক সাজেদা খাতুন জানান,আহতদের চিকিৎসার জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ সকল সেবাদানে কাজ করছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজেরন চিকিৎসক-নার্সসহ সকলে। কোথাও কোন ধরনের অবহেলা করা হবে না।