তানভীর দিপু:
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনে নাগরিকদের প্রতিদিন ব্যবহৃত প্রায় ৫শ কেজি প্লাস্টিক
বর্জ্য সংগ্রহ করে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। এর বাইরে আরো ৫শ কেজি প্লাস্টিকই
ডোবায়, নালায় বা রাস্তার পাশে কিংবা খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয় বলে ধারণা
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর
হোসেনের। যা সিটি কর্পোরেশনের পরিবেশনের জন্য ভয়ংকর হুমকি। সবচেয়ে বেশি
প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয় ৬, ৯, ১০ এবং ১১ নং ওয়ার্ডে। এসব প্লাস্টিকের
বেশির ভাগই সাধারণ নাগরিকদের বাসা বাড়িতে থেকে ফেলা হয় ডাস্টবিন কিংবা খোলা
জায়গায়। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যরে মধ্যে বেশির ভাগই পলিথিন, মোড়ক, খাবারের
বাক্স, চায়ের কাপ, প্লেট, অন্যান্য সরঞ্জাম ও আসবাবপত্রের প্লাস্টিকের
ভগ্নাংশ।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী ড. মোঃ সফিকুল
ইসলাম জানান, প্লাস্টিক বর্জ্য শুধু জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী নয়, এর কারনে
নগরীর মাটির গুণাগুনও নষ্ট হচ্ছে। আর প্লাস্টিক বর্জ্যরে জন্য বেশির ভাগই
সাধারণ মানুষের অসচেতনতা দায়ী। সিটি কর্পোরেশনে পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং
যানবাহনের সংকট থাকা সত্ত্বে আমরা নগরীর নির্ধারিত জায়গা থেকে এসব সংগ্রহ
এবং আলাদা ভাবে ব্যবস্থাপনা করে থাকি। কিন্তু যেসব প্লাস্টিক নাগরিকরা
নির্ধারিত জায়গার বাইরে ফেলেন সেগুলো পরিবেশের জন্য অবশ্যই হুমকি সরূপ।
কুমিল্লা
সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন জানান,
কুমিল্লা নগরীর ২৭টি ওয়ার্ড থেকে প্রতিদিন আনুমানিক দেড় শ’ টন ময়লা আবর্জনা
সংগ্রহ করে ভাগাড়ে নিয়ে ফেলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। এর মধ্যে ৫ শ’ কেজিই
প্লাস্টিব বর্জ্য। নগরীর ২৭৫ টি স্পট থেকে যে আবর্জনা সংগ্রহ করা হয়- এসব
প্লাস্টিক শুধু ওইসব স্থান থেকেই পাওয়া যায়। এর মধ্যে বেশির ভাগই বোতলজাত
প্লাস্টিক। এছাড়া বিভিন্ন আসবাবপত্র বা সরঞ্জামের ভগ্নাংশ থেকে হার্ড
প্লাস্টিক ও পলিথিন জাতীয় প্লাস্টিকও সংগ্রহ করতে হয়। তবে, আশংকার বিষয় হলো
যে পরিমান প্লাস্টিক পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সংগ্রহ করে তার প্রায় সম পরিমান
প্লাস্টিক থাকে সংগ্রহের বাইরে। যা সাধারণ নগরবাসী ডাস্টবিনে না ফেলে ডোবা,
নালা, বাসা বাড়ির কোনায়, রাস্তার পাশে ফেলে দেন। সেগুলো সংগ্রহ করা
পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য সম্ভব নয়। সাধারণ নগরবাসী সচেতন না হলে দিন দিন
প্লাস্টিক বর্জ্য বাড়বেই।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ৬নং
ওয়ার্ডের বেশির ভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয় চকবাজার, হারুন স্কুল
সংলগ্ন এলাকায়। এর মধ্যে বেশির ভাগই পলিথিন। এই ওয়ার্ডের ১৩ টি ডাস্টবিনেই
মিলে এসব প্লাস্টিক। এই ওয়ার্ডের বেশির ভাগ ডাস্টবিনেই বোতলজাত প্লাস্টিক
বেশি। এই এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহকারী পরিচ্ছন্নতা দলের প্রধান শামীম
জানান, চকবাজার এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় থেকে যে পরিমান প্লস্টিক বর্জ্য
সংগৃহিত হয় এর বেশির ভাগই পলিথিন।
১১নং ওয়ার্ডের ১২ টি স্পট থেকে
সংগ্রহ করা হয় আবর্জনা। এই ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা দলের প্রধান রাজু জানান,
এই এলাকার বেশির ভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরী হয় কান্দিরপাড় ও আশেপাশের
এলাকায়। দুই তিনবার এই ওয়ার্ড থেকে যে বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় এর মধ্যে
কমপক্ষে ৭০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য থাকে। যার বেশির ভাগই পলিথিন, খাবরের
বাক্স ও বোতল। এসব পলিথিন রাস্তার পাশে বা ডাস্টবিনে ফেলা হয় বিভিন্ন
শপিংমল থেকে।
১০ নং ওয়ার্ড থেকেও প্রতিদিন সংগ্রহ করা হয় প্রচুর
পরিমান প্লাস্টিক বর্জ্য। এই ওয়ার্ডে বর্জ্যসংগ্রহকারী দলের প্রধান তফাজ্জল
জানান, প্রতিদিন গড়ে ৫০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় ডাস্টবিনসহ
মোট ২২ টি স্পট থেকে। এসব বর্জ্যরে বেশির ভাগই ঝাউতলা এলাকার বাসাবাড়ির।
বোতল, পলিথিন, হার্ডপ্লাস্টিক সবই মিলে এখানে।
৯নং ওয়ার্ড থেকেও
প্রতিদিন অন্তত ২৫ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য সংগৃহিত হয় বলে জানিয়েছেন এই
ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা দলের প্রধান ইউসুফ। তিনি জানান, এই ওয়ার্ডের আবাসিক
এলাকাগুলো থেকেই আসে সব প্লাস্টিক বর্জ্য। বেশিরভাগই বোতলজাত, মোড়ক এবং
পলিথিন।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী ড. মোঃ সফিকুল
ইসলাম আরো জানান, কুমিল্লা নগরীর প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলাদা
করে ভাবা হচ্ছে। এজন্য আলাদা প্রকল্পও তৈরী করা আছে। সিটির ভাগাড়ে
প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা
হবে। আশা করা যায়, কুমিল্লা সিটির সম্পূর্ণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এক থেকে
দেড় বছরের মধ্যে একটি পূর্নাঙ্গতা পাবে।