পার্বত্য
চট্টগ্রাম কি আবারও অশান্ত হয়ে উঠছে-এমন প্রশ্ন ক্রমেই জোরালো হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছে, আঞ্চলিক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত দলগুলো কি শান্তিচুক্তিকে
অস্বীকার করছে? সেখানে কেন এত খুনাখুনি? কেন এত অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি?
জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত এক বছরে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও
বান্দরবান জেলায় সন্ত্রাসীদের হাতে কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। নিরাপত্তা
বাহিনীর অভিযানে একে-২২, একে-৪৭ রাইফেলসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার
হয়েছে। গত বুধবার রাতে বান্দরবানের রুমা উপজেলার বথি ত্রিপুরাপাড়ার
কাছাকাছি একটি দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর গুলি চালায়
সন্ত্রাসীরা।
এতে একজন সেনা সদস্য নিহত এবং অপর একজন আহত হন। এ সময়
পাল্টা গুলিতে নিহত হয় তিন সন্ত্রাসী। জানা গেছে, নিহত সন্ত্রাসীরা সবাই
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মূল অংশের সশস্ত্র ক্যাডার। এর এক দিন
পরই শুক্রবার ভোরে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার দুর্গম জারুলছড়িতে গোপন
আস্তানার খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল অভিযান চালাতে গেলে সন্ত্রাসীরা
সেনা সদস্যদের ওপর গুলি চালাতে থাকে। সেনাবাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়। এক
পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও দলিল-দস্তাবেজ ফেলে রেখেই
পালিয়ে যায়। জানা গেছে, এরা সবাই ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা
ইউপিডিএফ (প্রসীত) দলের সন্ত্রাসী ছিল।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন,
শান্তিচুক্তির পরও আঞ্চলিক দলগুলো গোপনে তাদের আগের ধারা বজায় রেখেছে। এর
মধ্যে দলগুলোতে বিভক্তিও এসেছে। তারা নিজেদের আধিপত্য এবং কোটি কোটি টাকার
চাঁদাবাজিসহ অবৈধ বাণিজ্য অক্ষুণ্ন রাখতেই সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। অবৈধ
অস্ত্রের চোরাচালান এবং দেশব্যাপী অস্ত্রবাণিজ্যেও এদের বড় ভূমিকা রয়েছে।
পাশাপাশি বড় কোনো রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত ২৬ ডিসেম্বর
ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি এলাকার বাসিন্দা আপেল
ত্রিপুরা অমিত (৩৩) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।
সে সময় তাঁর কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা
হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যে ২৭ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে
উদ্ধার করা হয় ১৫টি মর্টার শেল, ২৫টি বুস্টার ও ৫১০ রাউন্ড অটো মেশিনগানের
গুলি। এ ধরনের অস্ত্র ও গুলি সাধারণত সামরিক বাহিনীই ব্যবহার করে থাকে। তাই
প্রশ্ন উঠছে, এসব অস্ত্র ও গুলি কি পার্বত্য চট্টগ্রামে বড় কোনো নাশকতার
জন্য ভিন্নপথে আনার অপচেষ্টা হচ্ছিল? সম্প্রতি দুর্গম পার্বত্যাঞ্চলে
স্থানীয়ভাবে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির বেশ কিছু কারখানাও আবিষ্কৃত হয়েছে। সব
মিলিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম নতুন করে নিরাপত্তার শঙ্কা তৈরি করছে বলেই মনে
করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন
কোনো অঞ্চল নয়। এখানকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
তদুপরি এটি যখন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্রমেই হুমকি হয়ে উঠছে, তখন
পার্বত্যাঞ্চলের শান্তি রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। অবৈধ
অস্ত্র উদ্ধারে সর্বাত্মক অভিযানে নামতে হবে। প্রতিটি সন্ত্রাসী ঘটনার
বিচার নিশ্চিত করতে হবে।