ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
প্রতিপক্ষের হামলা-মামলায় পুরুষশূন্য গ্রাম
Published : Friday, 11 February, 2022 at 12:00 AM, Update: 11.02.2022 12:47:50 AM
প্রতিপক্ষের হামলা-মামলায় পুরুষশূন্য গ্রামশাহীন আলম, দেবিদ্বার ||
কুমিল্লার দেবিদ্বারে নির্বাচনে হেরে এক মেম্বার প্রার্থীর নেতৃত্বে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সকালে মোহনপুর ইউনিয়নের নোয়াদ্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর সমর্থক মো. আনোয়ার হোসেন বুধবার দুপুরে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪০/৫০ জনের নামে দেবিদ্বার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতার এড়াতে পুলিশি আতঙ্কে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে মোহনপুর ইউনিয়নের নোয়াদ্দা গ্রাম।
বৃহস্পতিবার বিকাল নোয়াদ্দা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো গ্রাম পুরুষ শূন্য। ভয়ে আতঙ্কে শিশু ও স্কুল পুড়ুয়া শিশুরা বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীদের দেখে ৫০/৬০ জন নারী সামনে এগিয়ে আসেন। তাঁদের প্রত্যেকের চেহারায় আতঙ্ক ও ভয়ের ছাঁপ। গণমাধ্যম কর্মীদের কথায় আশ্বাস পেয়ে একে একে মুখ খুলতে শুরু করেন তাঁরা। ৫০বছরের ছাফিয়া খাতুনের হাতে আহতের চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, তাঁরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুহুর্তের মধ্যেই যাকে সামনে পেয়েছে পিটিয়েছে। ঘর বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। দোকানগুলোও ভাঙচুর করেছে। হামলা ও পুলিশের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে সবাই। ছাড়া কেউ এলাকায় নেই। ঘরে শিশু বাচ্চাদের বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে। গ্রামে কোন পুরুষ নেই। সবাই মার খেয়েও পলাতক রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে আরও জানা যায়, ৫নং ওয়ার্ডের পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী ফখরুল ইসলাম নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় তাঁর নেতৃত্বে তাঁর কর্মী রজ্জব আলী, নাজমুল, সালাম, শফিকসহ ১০/১৫জন মিছিল নিয়ে এসে বিজয়ী ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলীর কয়েকজন সমর্থককে রাস্তায় পেয়ে তাঁদের ওপর হামলা চালায়। ওই হামলায় তাঁদের বেদম মারধোর করা হয়। এ ঘটনায় বর্তমান চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম, ইউপি আ.লীগের সভাপতি মো. মজিবুর রহমানসহ স্থানীয় কয়েকজন ঘটনাটি মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তাঁরা তা না মেনে পরদিন বুধবার সকালে পুনরায় নোয়াদ্দা গ্রামে হামলা চালায় ফখরুল ইসলামের লোকজন। এসময় দেশীয় অস্ত্র, লাঠি, রড, শাবলসহ হকিস্টিক নিয়ে গ্রামে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি দোকানপাট ভাঙচুর চালায়। এ হামলার ঘটনায় নোয়াদ্দা গ্রামের ১০/১২ জন গুরুতর আহত হয়। আহতের উদ্ধার করে প্রথমে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতরা হলো, মো.আবদুল মান্নান, রিপন, ইব্রাহীম, ইউনুস মিয়া, আবুল বাসার, সাফিয়া খাতুন, রমজান, আলি আজ্জম এবং সাইফুল ইসলাম।  
নোয়াদ্দা গ্রামের আশি বছরের বৃদ্ধ মো.কালু মিয়া বলেন, নির্বাচনে হেরে প্রতিপক্ষের হামলা ও পুলিশের ভয়ে এ এলাকায় কোন পুরুষ নেই। সবাই পলাতক রয়েছে। নির্বাচিত মেম্বার মোহাম্মদ আলীও ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এদিকে, এ ঘটনায়  হামলা ও ভাঙচুরের  শিকার ভুক্তভোগীদের মামলা নিতে গড়িমশি করছে পুলিশ এমন অভিযোগ করেন হামলায় আহত ও প্রতিপক্ষের মামলার আসামী মো. ইউনুছ মিয়ার স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম। তিনি জানান, প্রতিপক্ষ খুব শক্তিশালী ও সম্পদশালী হওয়ায় আমাদের একের পর এক হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা নির্বাচনে  হেরে তিন দফায় আমাদের বাড়ির লোকজনকে হামলা করেছে। আমরা এ গ্রামের লোকজন তাঁদের বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে চলাচল করায় তাঁদের ভয়ে কেউ কথা বলে না। নির্বাচনের দুইদিন পর তাঁরা পুনরায় বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের গ্রামের ওপর হামলায় চালিয়ে ঘর বাড়ি ভাঙচুর করে উল্টো থানায় আমাদের নামে মামলা দায়ের করেন। আমি বাদি হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত আমাদের মামলা রেকর্ড করা হয়নি। উল্টো লিখিত অভিযোগের এক নম্বর আসামী মো. আনোয়ার হোসেনের নাম কেটে দিতে আমার ওপর চাপ দেয় পুলিশ। তাঁরা আমাদের লোকজনের নামে মামলা দেওয়ায় গ্রাম বর্তমানে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে।
 এ ব্যাপারে বিজয়ী ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, সকলের ভোটে আমি বিজয়ী হওয়ার পর তাঁরা তা মেনে নিতে পারেনি। আমার বাড়ির লোকজনকে মারধোর করে কয়েক দফায় হামলা চালিয়েছে। হামলায় ১০/১২জন আহত হয়েছে। একজনের চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। উল্টো তাঁরা আমাদের নামে মামলা করেছে। আমি দুইদিন ধরে পালিয়ে  বেড়াচ্ছি। আমি এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য প্রার্থী মো. ফখরুল ইসলামের ফোন নম্বরে দুপুর থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চেষ্টা করেও  ফোন নম্বর খোলা পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে দেবিদ্বার বিপাড়া সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমিরুল্লাহ বলেন, মারামারি বা হামলার ঘটনায় দুই পক্ষই মামলা করতে পারেন। তবে থানায় মামলা এক পক্ষের নিচ্ছে না এটা তো আমার জানা নেই। মামলা না নেওয়ার কোন প্রশ্ন আসেনা। আপনি  বাদীকে এখনই পাঠান আমি মামলা নেওয়ার ব্যবস্থা করব।