ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
পাশের হারের সাথে বেড়েছে জিপিএ ৫
এইচএসসির ফল প্রকাশ ॥ কুমিল্লা বোর্ডে পাশের হার ৯৭.৪৯ শতাংশ
Published : Monday, 14 February, 2022 at 12:00 AM, Update: 14.02.2022 12:39:24 AM
পাশের হারের সাথে বেড়েছে জিপিএ ৫রাশেদুল হাসান ফরহাদ ||২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডের পাশের হার ৯৭ দশমিক ৪৯। জিপিএ-৫ পেয়েছে বোর্ডের ১৪ হাজার ১৫৩ জন শিক্ষার্থী। এর আগের বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিলো ৯ হাজার ৩৬৪ জন। অর্থাৎ এবছর জিপিএ-৫ পেয়েছে প্রায় দেঢ়গুণ বেশি শিক্ষার্থী। এদিকে সর্বশেষ ২০১৯ সালে পরীক্ষায় বসেছিলো কুমিল্লা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। সেবার এইচএসসির পাশের হার ছিলো ৭৭.৭৪ শতাংশ। এর মাঝে করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের পরীক্ষা হয় নি। তাই সেবছর জেএসসি ও এসএসসির ফলের গড় অনুযায়ী এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হয়। তবে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হওয়ায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এবার আবারো পরীক্ষায় বসে শিক্ষার্থীরা। আর এতেই যেন হয়ে গেল ইতিহাস। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে পাশের হার যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে জিপিএ-৫ও। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলছেন ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও পিছিয়ে পড়া বিষয়গুলোতে জোর দেওয়ায় ভালো হয়েছে ফলাফল।’ অন্যদিকে ভালো ফলাফলে খুশি শিক্ষার্থীরাও।
গতকাল সারাদেশের ন্যায় এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড। যাতে এক লাখ ১৪ হাজার ৫৫৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে এক লাখ ১১ হাজার ৬৮০ জন। ফলাফলে গড় পাশের হার ৯৭.৪৯ শতাংশ। মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য এই তিন বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ১৫৩ শিক্ষার্থী। গতকাল রবিবার সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. আসাদুজ্জামান এই ফলাফল ঘোষণা করেন।
তিনি জানান, ২০১৭ সালে মোট পরীক্ষার্থী এক লক্ষ ৩৭২ এর মধ্যে পাশ করেছে ৪৯ হাজার ৭০৪, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৭৮ জন, ২০১৮ সালে মোট পরীক্ষার্থী এক লক্ষ ৩ হাজার ৬৬৬, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯৪৪ জন, ২০১৯ সালে মোট পরীক্ষার্থী ৯৪ হাজার ৩৬০ জিপিএ-৫ পেয়েছেন দুই হাজার ৩৭৫ জন, ২০২০ সালে মোট পরীক্ষার্থী  ১লক্ষ ২ হাজার ৪৩৪ জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯ হাজার ৩৬৪ জন এবং এবছর মোট পরীক্ষার্থী এক লক্ষ ১৪ হাজার ৫৫৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে এক লক্ষ ১১ হাজার ৬৮০ জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৪ হাজার ১৫৩ জন।
তবে ২০১৯ সালের তুলনায় এবার ৩৮ হাজার ৩২২ জন শিক্ষার্থী বেশি পাশ করেছে এবং জিপিএ-৫ বেড়েছে চার হাজার ৭৮৯ জন। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯৭ দশমিক ১১শতাংশ। এ বিভাগে ২৪ হাজার ৯৭৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ২৪ হাজার ২৫৩ জন। মানবিকে পাসের হার ৯৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এ বিভাগে ৫৪ হাজার ৪১৮জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, আর পাস করেছে ৫৩ হাজার ৩৬২ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৯৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ বিভাগে ৩৫ হাজার ১৬৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৪ হাজার ৬৫ জন পাস করেছেন।
ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, পাশের হারে এবছরও এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। মেয়েদের পাসের হার ৯৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বিপরীতে ছেলেদের পাসের হার ৯৭ শতাংশ। এ বছর ৪০৭টি কলেজের মধ্যে ৯৭টি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাশের কৃতিত্ব অর্জন করেছে এবং কোনও প্রতিষ্ঠানে পাশের হার শূন্য নেই।
শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জিপিএ-৫ ও পাসের হারে আমি খুবই খুশি। বিগত বছরগুলোয় যে সব বিষয়ে পরীক্ষার্থীরা পিছিয়ে ছিল সেগুলোতে জোর দেওয়ায় ফলাফল ভালো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়। শিক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসির ফলের গড় অনুযায়ী গত বছর এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পায় ৯ হাজার ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালে এই শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৭.৭৪। এর আগে ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল ৭৭.৩৩ শতাশ।
এদিকে ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, পাসের হারের দিকে সারাদেশে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কুমিল্লা। প্রথম স্থানে রয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ড; সেখানে গড় পাসের হার ৯৮.১১ শতাংশ। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী বোর্ড; সেখানে গড় পাসের হার ৯৭.২৯ শতাংশ।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পাসের হারের ফলাফলে এবার বেশ চমক দেখা গেছে। ২০২০ সালের অটো পাসের ফলাফল বাদ দিলে এর আগের অন্তত পাঁচটি শিক্ষাবর্ষের ফলাফলে পাসের হারে বেশ পিছিয়েই ছিল বোর্ডটি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, ২০১৯ সালের এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭৭.৭৪ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৬৫.৪২ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৪৯.৫২ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৬৪.৪৯ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ছিল ৫৯.৮০ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে দেশে মহামারীর প্রকোপে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। তবে ২০২১ সালে পরীক্ষা ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পরের ধাপে পাঠাতে চায়নি সরকার। ফলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের অপেক্ষায় আট মাস পিছিয়ে যায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।
স্বাভাবিক সময়ে এপ্রিলে এ পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয় গত ২ ডিসেম্বর। বিশেষ পরিস্থিতিতে এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ছয়টি পত্রে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। সময় কমিয়ে আনা হয় দেড় ঘণ্টায়।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লার ৪০৭টি কলেজের ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৯ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে ছাত্র ৫১ হাজার ৬১৫ জন এবং ছাত্রী ৬২ হাজার ৯৪৪ জন।
বাংলা ও ইংরেজির মতো আবশ্যিক বিষয়গুলোর পরীক্ষা এবার নেওয়া হয়নি। তার বদলে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে সেসব বিষয়ের মূল্যায়ন করে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল তৈরি করা হয়েছে।