ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
সিটি করপোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করে নিজের বাণিজ্যিক ভবন-সাইনবোর্ড আলোকসজ্জা
Published : Thursday, 17 February, 2022 at 12:00 AM, Update: 17.02.2022 1:39:27 AM
সিটি করপোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করে নিজের বাণিজ্যিক ভবন-সাইনবোর্ড আলোকসজ্জাস্টাফ রিপোর্টার।। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি ও কর্মী ব্যবহার করে মেয়রের ভূমির মালিক হিসেবে আংশিক মালিকানাধীন বহুতল ভবন পরিচ্ছন্ন ও আলোকসজ্জার অভিযোগ উঠেছে। কুমিল্লা নগরীর রেইসকোর্স এলাকায় অবস্থিত ১৪ তলা বিশিষ্ট সুবিশাল নিশা টাওয়ারে দুই দিনব্যাপি এই কর্মযজ্ঞ নিয়ে নানা মহলে চলছে আলোচনা সমালোচনা। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও এবং কিছু স্থিরচিত্র ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। কুমিল্লা শহরের যখন যানজট নিরশনে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে, যখন সাধারণের অনুমোদনহীন সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলা হচ্ছে তখন সিটি করপোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করে নিজের ভবন পরিচ্ছন্ন ও সাইনবোর্ড আলোকসজ্জা করার ঘটনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অথচ নিশা টাওয়ার ও এর সামনের অংশ ঝকঝক করলেও আশপাশের বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানের সামনে পড়ে রয়েছে আবর্জনার স্তুপ। এ নিয়ে মনক্ষুন্ন ওইসব মার্কেটের দোকানীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকাল থেকে বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত কুমিল্লা শহরের রেইসকোর্স এলাকায় সড়কের উত্তর পাশে অবস্থিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর মালিকানাধীন ‘সেল নিশা টাওয়ারে’ পরিচ্ছন্নতা ও আলোকসজ্জার কাজ করানো হয়। এতে ব্যবহার করা হয় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের জন্য বরাদ্দকৃত একটি ভেকু- এক্সকেলেটর এবং সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন কর্মীকে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ইলেক্ট্রিশিয়ানও। মেয়রের বিল্ডিংকে ঘিরে দুই দিনের এই কর্মযজ্ঞ শেষে কর্মীদের আর্থিক ‘বকশিস’ দিয়েছেন মেয়র। এর মধ্যে ভেকু-এক্সেলেটরের চালককে এক হাজার টাকা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে নিশা টাওয়ারেরই একজন কর্মীর কাছ থেকে।
নাম প্রকাশ করার শর্তে ওই কর্মী বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে। বিল্ডিংয়ের সামনের অংশ ও সাইনবোর্ডগুলো মুছে লাল-সবুজ বাত্তি (আলোকসজ্জা) লাগানো হয়েছে।’
এই কাজে কারা কারা ছিলেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ড্রাইভার, পরিচ্ছন্ন কর্মী ও ইলেক্ট্রিশিয়ানরা কাজ করেছে। মেয়র সাহেব ড্রাইভারকে এক হাজার টাকা বকশিস দিছেন।’
বুধবার দুপুরের পর এবং সন্ধ্যায় দুই দফা নিশা টাওয়ার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পরিচ্ছন্নতার পর টাওয়ারটির সামনে অংশ ঝকঝক করছে। লাল-সবুজ আলোয় ঝলমল করছে সন্ধ্যার পরিবেশ। কিন্তু বিপরিত চিত্র অন্যান্য মার্কেট এবং দোকানগুলোর সামনে। আবর্জনার স্তুপ আর নিশা টাওয়ারের ঝলমলে আলোর কাছে ম্রিয়মান তাদের দোকানগুলো।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিশা টাওয়ারের বিপরীত পাশের এক দোকানী বলেন, মেয়র হিসেবে তিনি পুরো কুমিল্লা নগরীর অভিভাবক। তবে তিনি সবাইকে এক চোখে দেখতে পারছেন না। তিনি শুধু নিজের উন্নয়ন করেছেন। সিটিকর্পোরেশনের গাড়ি ও লোকবল ব্যবহার করে ব্যক্তিগত বিল্ডিং পরিচ্ছন্ন ও আলোকিত করেছেন, আমাদের কোনো খবর নাই। রেইসকোর্স এলাকায় যে-ই আসেন, টাওয়ারের দিকে তাকিয়ে থাকেন।  
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি ও কর্মী ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই। এ সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না; তিনি কোন এখতিয়ারে করেছেন- তাও বলতে পারছি না।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, আইনত ব্যক্তিগত কাজে সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি কিংবা কর্মী ব্যবহার করার সুযোগ নেই। একমাত্র রাষ্ট্রিয় কাজে কিংবা কোথাও উচ্ছেদ অভিযান/ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে আমরা এসব গাড়ি পাঠিয়ে থাকি। কিন্তু মেয়র মহোদয় যদি ব্যক্তিগত কাজে সেটা ব্যবহার করে থাকেন- তবে তা একমাত্রসম্ভব যদি ভাড়ার বিনিময়ে নিয়ে থাকেন। কারণ বুলডোজার এক্সকেলেটর, ইলেকট্রিক ভেহিকেল আমরা ভাড়া দিই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখেছি। তিনি সরকার নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করেই করেছেন বলে জানিয়েছেন সহকারি প্রকৌশলী (মেকানিকাল)। তাছাড়া সিটি কর্পোরেশনের অনেক কর্মী আছেন, যারা মাষ্টার রোলে কাজ করে, সেক্ষেত্রে তারা হয়তো করপোরেশনের নির্ধারিত সময়ের বাইরে ওইখানে কাজ করে থাকতে পারে। তবে আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখছি।