দেশে
কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বেড়ে চলেছে জলাতঙ্কে
আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যাও। সাধারণত কুকুরে কামড়ানোর পর টিকা বা
প্রতিষেধক নেওয়া হয়। প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছর আড়াই লাখ থেকে
তিন লাখ মানুষকে প্রতিষেধক দিতে হয়।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় দৈনিকে
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ময়মনসিংহের এসকে হাসপাতালে বুধবার দুপুর
পর্যন্ত কুকুর-বিড়ালের কামড়ে আহত ৪০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ২০
জনই শিশু। জেলায় চলতি বছরের প্রথম ৫৪ দিনে কুকুর-বিড়ালের কামড়ে আহত হয় দুই
হাজার ২০০ জন। এ হিসাবে চলতি বছর প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা
নিয়েছে, যাদের ৯৫ শতাংশই কুকুরের কামড়ের শিকার। জানা যায়, কুকুরে কামড়ানো
রোগী সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা নিতে আসে ঢাকা বিভাগে, বছরে ৭০ হাজারের বেশি। এর
পরই আছে রাজশাহী বিভাগ (৪৯ হাজার) এবং চট্টগ্রাম বিভাগ (৪২ হাজার)। তার পরও
বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণ, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেই
বললেই চলে।
দেশে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা দ্রুত
বাড়ছে। খাদ্যসংকটে কুকুরগুলোর চরিত্র বদলে যাচ্ছে। অনেক মানুষও কুকুরের
সঙ্গে অবলীলায় নিষ্ঠুর আচরণ করে। শহরের, বিশেষ করে বস্তি এলাকার শিশুরা
কুকুরগুলোর কাছাকাছি বেশি হয়, সময়ে উত্ত্যক্ত করে। ফলে শিশুরাই কুকুরের
কামড়ের শিকার বেশি হয়। দেশে উচ্চ আদালতের নির্দেশে কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে।
কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের অন্য কোনো উদ্যোগও নেই। কুকুরগুলোকে জলাতঙ্কের
টিকার আওতায় আনারও তেমন কোনো কর্মসূচি চোখে পড়ে না। এসব কারণে জলাতঙ্কের
প্রাদুর্ভাবও কমছে না। আবার কুকুরের কামড় সম্পর্কে মানুষের সচেতনতারও
যথেষ্ট অভাব আছে। বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, কুকুরে কামড়ালে
প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ প্রথমেই কবিরাজ কিংবা স্থানীয় অনিবন্ধিত চিকিৎসকের
কাছে যায়। ২৯ শতাংশ জলাতঙ্কের টিকা নিলেও অনেকে কোর্স সম্পন্ন করে না।
কুকুরে কামড়ালে মাত্র ২ শতাংশ মানুষ সাবান-পানি দিয়ে ক্ষতস্থান ধোয়। এসব
কারণে জলাতঙ্কে মৃত্যুর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।
প্রাণী থেকে মানুষে
সংক্রমিত বা জুনোটিক রোগের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে জলাতঙ্ক। বাংলাদেশে
জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের কর্মসূচি থাকলেও তা খুব একটা কার্যকর নয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে তা
নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এ জন্য বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা
নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে সব কুকুরকে টিকার আওতায় আনতে হবে।
যাঁরা ঘরে কুকুর-বিড়াল পালন করেন তাঁরাও যাতে কুকুর-বিড়ালকে সময়মতো টিকা
দেন তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জলাতঙ্ক ও কুকুরের কামড় সম্পর্কে ব্যাপক
সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।