সাবেক
সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল পরবর্তী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে
নিয়োগ পেয়েছেন। তার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন চারজন।
তারা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান,
অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা এমিলি এবং অবসরপ্রাপ্ত
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান।
সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে শনিবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এই পাঁচজনকে নিয়োগ দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।
দেশের ত্রয়োদশ সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া হাবিবুল আউয়াল নেতৃতত্বাধীন এই কমিশনের পরিচালনায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন শনিবার হলেও কবে নাগাদ তারা শপথ নেবেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে
গতবার নিয়োগের পরদিনই প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন
শুরু করেছিল কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।
নূরুল হুদা কমিশন গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেওয়ার পর থেকে সাংবিধানিক সংস্থাটিতে পদগুলো শূন্য রয়েছে।
সিইসির শূন্য পদ পূরণ করতে যাওয়া হাবিবুল আউয়াল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে ২০১৭ সালে অবসর নিয়েছিলেন।
বিসিএসের
১৯৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা তার আগে আইন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এবং সংসদ
সচিবালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সরকারি চাকরি থেকে বিদায় নেওয়ার পর
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছিলেন।
এদিকে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন
অনুষ্ঠানের সব দায় নির্বাচন কমিশনের নয় মন্তব্য করে সদ্য নিয়োগ পাওয়া
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সব দলের প্রতি
সমান আচরণ নিশ্চিত করতে তিনি কাজ করবেন। নিয়োগের প্রজ্ঞাপনের পর
সাংবাদিকরা হাবিবুল আউয়ালের ইস্কাটনের বাসায় যান। সেখানে বিভিন্ন প্রশ্নের
জবাব এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা
না পান তবে তাকে নিয়েও ‘ইমেজ সংকট’ হতে পারে।
অতীতের দুটি নির্বাচন
কমিশনের ইমেজ সংকট আছে, সেটা কাটাতে কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ইমেজ
সংকট আমাকে নিয়েও হতে পারে। আমি রাজনৈতিক নেতৃত্বের দলগুলোর সহযোগিতা না
পাই, নির্বাচনী পরিবেশ অনুকূল না হলে আপনারা আমাকে দায়ী করবেন। আমাদের চেয়ে
অনেক বড় হচ্ছে রাজনৈতিক দায়িত্ব।
“তারা যদি মনে করে নির্বাচন কমিশন
সুন্দর নির্বাচন করিয়ে দেবে, তাহলে ভুল-ভ্রমাত্মক ধারণা হবে। তাদেরকে
সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। তারা আমার কাছে সহযোগিতা চায়, আমিও
সহযোগিতা চাই।”
নিউ জিল্যান্ড হলে ‘চা খেতে খেতে নির্বাচন হয়ে যাবে’
মন্তব্য করে তিনি বলেন, কিন্তু বাংলাদেশ-ভারতে সেটা হবে না। এখনও পরিবেশ
স্ট্যাবল হয়ে ওঠেনি।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, “জোরের সাথে বলব- সব দোষ
নির্বাচন কমিশনকে দিলে আমি গ্রহণ করব না। রাজনৈতিক দলগুলোর রোল আছে, পুলিশ,
আনসার, র্যাবকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি ওদের কমান্ড করব না। আমি
এসপিকে বদলি করতে পারব না। আমি কমান্ড করলে কেউ রাইফেল নিয়ে দৌড়াবে না।
“আমার সবার প্রতি সমান দৃষ্টি থাকবে। সকলের সাথে সমআচরণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।”
তিনি
আরও বলেন, “নির্বাচনের মধ্যে কারচুপি চিরকালই হয়েছে কম-বেশি। এই জিনিসটা
যাতে কম হয়, মানুষের যাতে স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে সেটা যদি
আপেক্ষিকভাবে, ভালোভাবে নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে সফলতা। কিন্তু
অ্যাবসোলিউট সেন্সে আমি এখনও বিশ্বাস করি না সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে আসবেন বা
আসতে পারবেন। অতীতে ১০০-২০০ বছরে নির্বাচনে সেটা দেখা যায়নি।
“কিন্তু
নির্বাচনে যখন সকলে আনন্দের সঙ্গে অংশ গ্রহণ করেৃ কিছু এদিক-সেদিক হতে
পারে। অনেকে বলেন, সরকারি দল চাপ প্রয়োগ করেন। এটা ঠিক নয়। যারা সরকারি দলে
থাকেন তাদের কিছু বাড়তি সুবিধা থাকে। যদি জাতীয় পার্টি থাকত, বিএনপি থাকত।
এটাকে অব নেগেটিভলি নিলে হবে না।”
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে
তাদের বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করে নতুন সিইসি বলেন, “বিএনপির বক্তব্য শুনে
একটু হতাশ হচ্ছি, উনারা নির্বাচন করবেন না। কিন্তু আমি বলব, নির্বাচনে
আসেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
“আপনি যদি
মাঠ ছেড়ে দেন, তাহলে নির্বাচন অবাধই হবে। কোনো বাধা থাকবে না। মাঠে যদি
থাকেন, তাহলে নির্বাচন বাধা-বিপত্তির মধ্যে সকলের অংশগ্রহণটা হবে। অবাধ হল,
কেউ গেল না আমি একাই ভোট দিরয় আসলাম। সে অবাধ আমরা চাচ্ছি না।”
‘লেবেল
প্লেয়িং ফিল্ড’ ইসিকে তৈরি করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটাও আমি বলবো
অ্যাবসলিউট সেন্সে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কতটা সম্ভব হবেৃ এজন্য
পক্ষ-প্রতিপক্ষ শক্তিকে কাছাকাছি শক্তির হতে হয়। যারা অপজিশনে থাকবেন তাদের
আরও সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাহলে মানুষের ভোটাধিকার
প্রয়োগ আপেক্ষিকভাবে ভালো হবে।”