মো. হাবিবুর রহমান, মুরাদনগর ||
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কোড়েরপাড় আদর্শ বিশ^বিদ্যালয় কলেজের মেধাবী ছাত্র নয়ন চন্দ্র দেবনাথকে (১৮) সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে খুন করা হয়েছে। শনিবার রাতে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হলে শুরু হয় শোকের মাতম। ওইদিনই উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কবিতীর্থ দৌলতপুর গ্রামে তাকে সৎকার করা হয়। নয়ন চন্দ্র দেবনাথ এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে ওই গ্রামের দিলীপ চন্দ্র দেবনাথের ছেলে। শুক্রবার ভোরে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মোমিনছড়া রেললাইনের পাশ থেকে তার মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার দু’দিন পর রেললাইনের দুই কিলোমিটার দুরে রাবার বাগান থেকে তার মাথার খুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা দিলীপ চন্দ্র দেবনাথ বাদী হয়ে সিলেট রেলওয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ দোকান মালিক দুর্জয় দেবনাথ ভৌমিককে আটক করেছে। নয়নের মায়ের দাবি, মোবাইল ফোনে বৃহস্পতিবার রাতে নয়ন তাকে জানিয়েছিল দোকান মালিক তাকে মেরে ফেলবে!
নয়নের বাবা দিলীপ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, আমি থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করতে চাইলে রেলওয়ে পুলিশ অভিযুক্ত আসামিদের নাম লিখেনি। শুধু অভিযোগ ও ঘটনার বর্ণনা লিখেছে। মামলার এফআইআর কপি এখনো পাইনি। আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই।
পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানায়, নয়ন চন্দ্র দেবনাথ ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারে উপমা ফ্যাশন নামে কাপড়ের দোকানে চাকরি করতো। দোকানের মালিক দুর্জয় বৃহস্পতিবার বিকালে নয়নের মাকে মোবাইল ফোনে জানায়, নয়ন ইদানিং অস্বাভাবিক চলাফেরা করছে। এরপর ওই রাতেই নয়ন একপর্যায়ে তার মাকে দুর্জয়ের মোবাইল ফোন থেকে কল দিয়ে বলেন, ‘আমাকে মেরে ফেলবে’। এ পর্যন্ত বলার পরই দুর্জয় ফোন কেড়ে নেয়। তখন নয়নের মা দুর্জয়কে কল ব্যাক করে বলেন, আজ রাত পর্যন্ত আমার ছেলেকে দেখেশুনে রাখেন’। দুর্জয়ের চাচা চন্দন দেবনাথকেও ফোন করে তিনি একই অনুরোধ করেন। রাত সাড়ে ১০টা থেকে নয়নের ফোন বন্ধ পান মা-বাবা।
দীর্ঘ সময় ফোন বন্ধ দেখে চিন্তিত হয়ে রাত ১১টায় দুর্জয়কে ফোন করে নয়নের কথা জিজ্ঞাসা করেন। দুর্জয় নয়নের মোবাইল ফোন বন্ধ দেখে ‘এত রাতে তাকে কোথায় খুঁজব’ বলে নয়নের মাকে জানায়। শুক্রবার দুপুর দু’টায় নয়নের ফোনে কল দেন তার মা। ফোন ধরে রেলওয়ে পুলিশের একজন সদস্য বলেন, নয়নের লাশ রেলওয়ে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
এ দিকে ঘটনার পর দুর্জয় ও চন্দন পালিয়ে যান। যদিও পরে দুর্জয়কে পুলিশ আটক করেছে। তবে প্রভাবশালী দুর্জয় ও চন্দনের ভয়ে মুখ খুলছেন না বাজারের কোন ব্যবসায়ী। শুধু অন্য দোকানের এক কর্মচারী বলেন, নয়ন খুবই শান্ত স্বভাবের ছেলে। কখনো কারও সঙ্গে ঝগড়া করেনি। কিভাবে কি হলো, মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। আর ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ মাহমুদ জুয়েল বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় চন্দনের ফোন পেয়ে থানায় গিয়েছিলাম। আর কিছু বলতে পারব না। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক।
নয়নের বাবার অভিযোগ অস্বীকার করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলিম হোসেন শিকদার বলেন, ঘটনার বর্ণনায় এজাহারের ভেতরে নাম দিয়েছেন। তারা তো দেখেননি। দুর্জয়ের দোকানে কাজ করত, এজন্য সন্দেহ করছেন। আমরা সন্দেহভাজন হিসাবে দুর্জয়কে আটক করেছি।
রেলওয়ে পুলিশ সিলেটের পুলিশ সুপার শেখ শরিফুল ইসলাম বলেন, লাশের সঙ্গে একটা মোবাইলের সিম পাওয়া গেছে। সার্বিক বিষয় মাথায় রেখেই আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে। অভিযুক্ত দূর্জয় বাঙ্গরা বাজার থানাধীন কোরবানপুর গ্রামের দিপক ভৌমিকের ছেলে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বিগত ৪ বছর পূর্বে বাঙ্গরা বাজার থানাধীন খোষঘর গ্রামের কানাই নামের দোকান কর্মচারীকে হত্যা করে লাশ বাথরুমে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে পার পেয়ে যায় তারা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সন্তানকে হারিয়ে পরিবারটি আজ নিঃস্ব! বিত্তবানদের পাশে দাঁড়াবার আকুতি জানিয়েছে।