নিজস্ব
প্রতিবেদক: আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের
প্রত্যাশা ব্যক্ত করে নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী
হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা প্রত্যাশা করি সবাই নির্বাচনে অংশ নিয়ে
গণতন্ত্রকে সুসংহত করবেন। যারা নির্বাচন করবেন তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ
তৈরি করার দায়িত্ব কমিশনের।
আজ সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নির্বাচন
ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন। গত রোববার
(২৭ ফেব্রুয়ারি) শপথগ্রহণের পর গতকাল প্রথম সভা করে নতুন নির্বাচন কমিশন।
এতে সিইসির সঙ্গে অংশ নেন আরও চার নির্বাচন কমিশনার।
সিইসি বলেন, গতকাল
আমরা শপথ নিয়েছি। তার আগেরদিন (আমাদের) নিয়োগ হয়েছে। আজ আমরা যে (প্রথম)
সভা করেছি, সেটা নিজেদের মধ্যে পরিচিতি পর্ব ছিল। কমিশনের কর্মপরিধি
সম্পর্কে ইসি সচিব আমাদের অবহিত করেছেন। সেজন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ
জানিয়েছি।
ভোট আয়োজনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা খুব অভিজ্ঞ নই। আমি
একেবারেই নতুন। তবে গণমাধ্যমে নির্বাচনের খবর দেখেছি। নির্বাচন ঘরে বসে
পর্যবেক্ষণ করেছি। কিছুটা অস্বচ্ছ হলেও ধারণা আছে। আমরা সততা-নিষ্ঠার সঙ্গে
নির্বাচন বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবো। আমরা কতটা সৎ ছিলাম বা দায়িত্ব পালন
করেছি, সেটি পরে মূল্যায়ন করতে পারবেন। আমরা প্রত্যাশা করি সবাই নির্বাচনে
অংশ নিয়ে গণতন্ত্রকে সুসংহত করবেন। যারা নির্বাচন করবেন তাদের জন্য অনুকূল
পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব কমিশনের। কর্মপদ্ধতি কী হবে সেটি ঠিক করিনি। তবে
জানতে কিছু জ্ঞান অর্জন করেছি। সাংবিধানিক শপথ অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের
চেষ্টা থাকবে।
‘নির্বাচন বিশাল কর্মযজ্ঞ, বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন।
যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহ থাকে। সবার আবেগ বুঝতে হয়। নির্বাচন সুষ্ঠু
করতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা রয়েছে। নির্বাচনে অনেক (দলের) কর্মী থাকে,
সেখানে দায়িত্ব পালন করতে হবে। মাঠ ছেড়ে গেলে হবে না, মাঠে থাকতে হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পালিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু প্রতিরোধ গড়ে
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনী
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিছু ধস্তাধস্তি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয়ে বলবো,
আমাদের যে সামর্থ্য-দক্ষতা কতটুকু সে অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টার সঙ্গে
আমাদের ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আগের কমিশনের দোষ-ত্রুটি নিয়ে বলতে চাচ্ছি না। কোনো শিক্ষণীয় থাকলে আমরা সেটি সংশোধন করে কাজ করবো।
নির্বাচন
আয়োজনে বিএনপির আস্থা অর্জনের বিষয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন
কমিশন দলীয় সরকারের জন্য নির্বাচন করে না। একটি সরকার তো থাকবেই। যেমন-
ওয়ান/ইলেভেনে একটা সরকার ছিল, আবার নির্দলীয় সরকারও ছিল। তাদের অধীনেও
কমিশন থাকে। এখন যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা আছে, আমরা চেষ্টা করবো, ভোটাররা
যেন ভোট দিতে পারেন, তাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করবো। বিএনপি যদি ঘোষণা
দিয়েও থাকে (ভোটে না আসার বিষয়ে), তাদের কি আহ্বান জানাতে পারবো না? কোনো
কিছুই শেষ নয়। আমরা তো তাদের চা খেতে আমন্ত্রণ জানাতেও পারি।
নতুন সিইসি
আরও বলেন, আমাদের সামর্থ্য-শক্তি অসীম নয়। এটি সব সময় আপেক্ষিক। যার যার
অবস্থান থেকে করণীয় অনুসারে কাজ না করলে হবে না। কারও ব্যর্থতা থাকলে
স্বীকার করতে হবে।
ব্রিফিংকালে নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত
জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান
হাবীব খান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান এবং ইসি
সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন।
জেলেনস্কির মতো মাঠে থাকার আহ্বান :
রাজনৈতিক
দলগুলোকে ভোটের মাঠ ছেড়ে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন
কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। নির্বাচনকেও একটি যুদ্ধ উল্লেখ করে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন,
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হয়তো দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু উনি পালাননি।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সম্মেলনে নতুন সিইসি হাবিবুল
আউয়াল এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক
দলগুলোর ভূমিকা রয়েছে। নির্বাচনে দক্ষতা ও সামর্থ্যের সঙ্গে প্রতিটি দলকে
পালন করতে হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমি বলতে চাচ্ছি, মাঠ ছেড়ে
চলে আসলে হবে না। মাঠে থাকবেন, কষ্ট হবে। এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হয়তো
দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু উনি পালাননি। তিনি বলছেন, “আমি রাশিয়ার
সঙ্গে যুদ্ধ করব।” তিনি রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধ করে যাচ্ছেন।’
সিইসি
বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রও একটি যুদ্ধ, সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
যেখানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, সেখানে কিছুটা ধস্তাধস্তি হয়। এগুলো
নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে ইসি চেষ্টা করবে।
কাজী
হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, একজনের শক্তি দেখে চলে গেলে হবে না। দাঁড়িয়ে
থাকতে হবে। নেতা-কর্মীদের কেন্দ্রে কেন্দ্রে থাকতে হবে। তারা যদি
ভোটকেন্দ্রে না থাকে, তাহলে অন্য পক্ষ অবাধে ভোট দিতে থাকবে। ইসি তা চায়
না। ইসি প্রতিদ্বন্দ্বিতা চায়।