করোনার
দুঃসহ সংক্রমণে সবচেয়ে বিপন্ন অবস্থায় পড়ে জাতির মেরুদ- শিক্ষা কার্যক্রম।
২০২০ সালের ৮ মার্চে যখন প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়, সে সময় সবার আগে
বন্ধ করে দেয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তেমন দুঃসময়ে প্রযুক্তির বিশ্বে যে
নতুন পাঠক্রম শুরু করা হয় সেটা কতখানি বাস্তবায়ন হয়েছে তেমন প্রশ্ন উঠেছে।
শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ যতখানি না করেছে তার চেয়েও বেশি প্রযুক্তিতে আসক্ত
হয়ে পড়ার দুঃসহ চিত্র বিচলিত হওয়ার মতোই। শেষ অবধি ২০২১ সালের ১২
সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া সময়ের চাহিদা ছিল। অনলাইনভিত্তিক
ক্লাস নেয়া হলেও পরীক্ষা বলতে যা বোঝায় তা কোনভাবেই করা সম্ভব হয়নি। শ্রেণী
উত্তরণ পর্বটিকেও চলমান রাখতে হয়েছে। সেখানে বিবেচনায় এসেছে মূল্যায়ন
পদ্ধতি এবং প্রতিবেদন জমা নেয়া-যা মেধা ও মনন যাচাইয়ের আবশ্যিক শর্ত।
যথারীতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা
নিতে হয়েছে। সেখানেও পড়েছে এক অনাবশ্যক স্থবিরতা। পরীক্ষা হয়েছে
বিভাগভিত্তিক- বাংলা, অংক এবং ইংরেজীকে বাদ দিয়ে। সেটা নিয়েও কম
আলোচনা-পর্যালোচনা হয়নি। তার পরও ফল বিবেচনায় প্রতিভাত হয়েছে আশার আলো।
২০২২
সালে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন করে অবরুদ্ধতার জাল বিস্তার হয়।
ওমিক্রন নামে আরও একটি ভ্যারিয়েন্ট সারাবিশ্বে দাপিয়ে বেড়াতে থাকে। শেষ
অবধি বাংলাদেশও তা থেকে রেহাই পায়নি। ফলে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি থেকে
পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশনা আসে সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম অবারিত করাও
এক বিশেষ সম্ভাবনার নির্দেশনা। তবে জানুয়ারির ২১ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা নিয়েও অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। প্রশ্ন রাখা
হয়, সব কিছু খোলা থাকার পর কেন শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি এক কোটি ২০ লাখ ব্যক্তিকে টিকা দিয়ে গণটিকার কর্মসূচীর
লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সফল হয়। তবে সেটা শুধু এক ডোজের ওপর। করোনা
সংক্রমণ এবং মৃত্যু নিম্নগামী হতে শুরু করলে পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে
দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ২ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তার স্বাভাবিক ছন্দে
ফিরিয়ে আনতে সরাসরি পাঠদান কর্মসূচীকে অবারিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ
নির্দেশনা জারি করে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী
ঝরে পড়ার শঙ্কাও দৃশ্যমান হতে থাকে। বরাবরই নিয়মিত শিক্ষার্থীর কিয়দংশ
প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। মেয়েরা বাল্যবিয়ের আবর্তে
পড়ে আর ছেলেরা কায়িক শ্রমে সম্পৃক্ত হতে বাধ্য হয়। শেষ পর্যন্ত
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় কর্মচাঞ্চল্যে গতি নেয়াও দেশের
উদীয়মান প্রজন্মের জন্য এক শুভসঙ্কেত। যারা মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
হয়েছে তাদেরও ক্লাস শুরু করে দেয়ার কথা। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী এখনও
ভর্তির আওতায় আসতেই পারেনি। একাদশ শ্রেণীর উদ্বোধনী ক্লাসে শিক্ষামন্ত্রীর
সংশ্লিষ্ট বই বিতরণ করাও এক অনন্য কর্মসূচী। সবচেয়ে স্বস্তির ব্যাপার হলো
উদীয়মান প্রজন্মকে আর ঘরে বসে অবসর সময় নষ্ট করতে হবে না। টিকা কর্মসূচী
সম্প্রসারণও এক বড় দায়িত্ব ছিল। সব মিলিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম যেন তার
স্বাভাবিক গতি থেকে আর বিচ্যুত না হয় আগামীতে।