বিশেষ
প্রতিনিধি ॥ ‘একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য কি দারুণ অপেক্ষা আর উত্তেজনা
নিয়ে/ লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে/ ভোর থেকে
জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে/ ‘কখন আসবে কবি’?/ ...শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে/
রবীন্দ্রনাথের মত দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/ অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে
দাঁড়ালেন/....কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?/ গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি
শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি/ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।/ সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।’দেশের
স্বনামধন্য কবি নির্মলেন্দু গুণ রক্তঝরা একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন
রেসকোর্স ময়দানে বহুলপ্রতীক্ষিত শিহরণ-জাগানো কালজয়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের স্বাধীনতার ডাক সংবলিত ঐতিহাসিক বজ্রকঠিন ভাষণের মুহূর্তটি এভাবেই
তাঁর কবিতায় তুলে ধরেছিলেন।
একাত্তর সালের এই দিনে মুক্তিকামী বাঙালী
জাতিকে মুক্তির বাণী শুনিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ৭
মার্চের ভাষণ বাঙালীর পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙ্গার চূড়ান্ত প্রেরণা। দীর্ঘ ২৪
বছরের লড়াই-সংগ্রামের পর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই ভাষণেরই পরিণতি
স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫১ বছরেও মাত্র ১৯ মিনিটের
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সেই ভাষণের আবেদন এতটুকু কমেনি। প্রজন্মের পর
প্রজন্মের কাছে এই ভাষণ প্রেরণার উৎস। যতদিন যাবে নতুন প্রজন্মের কাছে ৭
অনুপ্রেরণার সারথি হিসেবে কাজ করবে।
’৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ একুশ বছর
বঙ্গবন্ধুর যে ঐতিহাসিক ভাষণটি বাজানোর ওপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা ছিল, সময়ের
ব্যবধানে স্বাধীনতার ডাক সংবলিত বজ্রকঠিন বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণটিই আজ
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণের স্বীকৃতি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে
বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও
সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কো ৭
মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে
স্বীকৃতি দেয়। ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পর বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি এখন বিশ্ব
ঐতিহ্যের অমূল্য দলিল। এ ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় বাংলাদেশের
মানুষের গৌরব-সম্মান আরেকবার আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তাই
বাঙালী জাতি আজ কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের
ভাষণ বাঙালীর স্বাধীনতা-মুক্তি ও জাতীয়তাবোধ জাগরণের মহাকাব্য, বাঙালী তথা
বিশ্বের সকল লাঞ্ছিত-বঞ্চিত নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির সনদ।
ইতিহাসের ম্যাগনাকার্টার ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালীর পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের
চূড়ান্ত প্রেরণা। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণিক দলিল এবং বিশ্বে সর্বাধিকবার প্রচারিত ও
শ্রবণকৃত ভাষণ।
আজ থেকে ৫১ বছর আগের কথা। ১৯৭১ সালে পরাধীনতার দীর্ঘ
প্রহর শেষে পুরো জাতি তখন স্বাধীনতার জন্য অধীর অপেক্ষায়। শুধু প্রয়োজন
একটি ঘোষণার, একটি আহ্বানের। অবশেষে ৭ মার্চ এলো সেই ঘোষণা। অগ্নিঝরা
একাত্তরের এইদিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নামক মহতী কাব্যের স্রষ্টা কবি,
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্রগম্ভীর কণ্ঠ থেকে ধ্বনিত
হয়েছিল স্বাধীনতার ঘোষণা।
বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতার চূড়ান্ত আহ্বানটি
দিয়েই ক্ষান্ত হননি, স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখাও
দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা মুক্তিকামী মানুষের কাছে লাল-সবুজ পতাকাকে
মূর্তিমান করে তোলে। আর এই মাধ্যমে বাঙালীর ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের
সূচনা হয়। শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধে নয়, বঙ্গবন্ধুর সেই বজ্রনির্ঘোষ আজও
বাঙালী জাতিকে উদ্দীপ্ত করে, অনুপ্রাণিত করে। মূলত রেসকোর্স ময়দানে
বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণই ছিল ৯ মাসব্যাপী বাংলার মুক্তি সংগ্রামের মূল ভিত্তি।
ঢাকার
রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মুক্তিপাগল জনসমুদ্রে
দাঁড়িয়ে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ভাষণ থেকেই মূলত স্বাধীনতার
অঙ্কুরোদগম ঘটতে থাকে এ বাংলায়। বাঙালীর নিজের দেশের হাজার বছরের স্বপ্ন
বাস্তবে রূপ নেয়ার অবশ্যম্ভাবী পরিণতির দিকে এগোতে থাকে। আজ সেই ঐতিহাসিক
দিন, ৭ মার্চ। বাঙালী জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি অনন্য সাধারণ
দিন।
দেখতে দেখতে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের বয়স ৫১-এ ঠেকছে।
সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছুই কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। বিকৃতির নিকৃষ্ট
ষড়যন্ত্রের আবহে বদলে ফেলার চেষ্টা হয়েছে স্বাধীনতার অনেক ইতিহাস। কিন্তু
এই ৫১ বছরে অনেক কিছুই বদলে গেলেও বদলানো যায়নি শুধু ১৯ মিনিটের বঙ্গবন্ধুর
ঐতিহাসিক সেই ভাষণটি। বিশ্বের অনেক মনীষী বা নেতার অমর কিছু ভাষণ আছে।
বিশ্বের মধ্যে এই একটি মাত্র ভাষণ যা যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর, ঘণ্টার
পর ঘণ্টা বেজে চলেছে- কিন্তু ভাষণটির আবেদন আজও এতটুকু কমেনি।
বরং যখনই
প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই ঐতিহাসিক ভাষণটি শ্রবণ করেন, তখনই তাঁদের মানষপটে
ভেসে ওঠে স্বাধীনতার গৌরবগাথা আন্দোলন-সংগ্রামের মুহূর্তগুলো, আত্মপ্রত্যয়ী
হয়ে ওঠে দেশপ্রেমের আদর্শে। ৫১ বছর ধরে একই আবেদন নিয়ে একটানা কোন ভাষণ
এভাবে শ্রবণের নজীর বিশ্বের ইতিহাসে নেই। নানা গবেষণার পর মাত্র ১৯ মিনিটের
বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণটি আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ
ভাষণের অন্যতম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের
১৯ মিনিট স্থায়ী এ ভাষণটি অনুবাদ করা হয়েছে বহু ভাষায়। নিউজ উইক সাময়িকী
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজনীতির কবি’ হিসেবে অভিহিত
করেছে। স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ ৫১ বছরেও ৭ মার্চের ভাষণ প্রজন্মকে স্বপ্ন
দেখায় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কিভাবে প্রতিবাদী হতে হয়, কিভাবে মাথানত না
করে অবিচল থাকতে হয়, কিভাবে এগিয়ে যেতে হয়। ভাষণটি যতবার শোনা হয়, ততবারই
নতুন ভাবনা তৈরি হয়। এর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য একেকটি স্বতন্ত্র অর্থ
বহন করে, নতুন বার্তা দেয়। ১৯ মিনিটের একটি ভাষণ দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও
সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তার জ্বলন্ত প্রমাণ এই কালজয়ী
ভাষণ।
কী হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক দিনে ॥ স্বাধীনতার জন্য সারাদেশ থেকে ছুটে
আসা পিপাসার্ত মানুষের ঢলে একাত্তরের এদিন রেসকোর্স ময়দানের চতুর্দিকে
রীতিমতো জনবিস্ফোরণ ঘটে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে নারী-পুরুষের স্রোতে
সয়লাব হয়ে যায় তখনকার ঘোড়দৌড়ের এই বিশাল ময়দান। বিকেল ৩টায় সমাবেশ শুরু
হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের ক্ষমতা হারায় সেদিনের
রেসকোর্স। রাজধানী ঢাকার চতুর্দিকে ভারি অস্ত্রে-সস্ত্রে সজ্জিত
পাকিস্তানী সামরিক জান্তারা রক্তচক্ষু নিয়ে প্রহরায়। আকাশে উড়ছে হানাদারদের
যুদ্ধ জঙ্গী বিমান। মুক্তি পাগল বাঙালীর সেদিকে ন্যূনতম ভ্রুক্ষেপ নেই।
সবার শুধু অপেক্ষা তাঁদের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু কখন আসবেন।
গণমানুষের
সেøাগানের মধ্য দিয়ে বিকেল তিনটা ২০ মিনিটে জনসমুদ্রের মঞ্চে আসেন
স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। আকাশ কাঁপিয়ে সেøাগান ওঠে- ‘বীর বাঙালী
অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘তোমার আমার ঠিকানা,
পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’। মঞ্চে
দাঁড়িয়েই বিশাল জনসমুদ্রে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে বাঙালী জাতিকে মুক্তি
সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
পাকিস্তানী সামরিক জান্তাকে বঙ্গবন্ধু সাফ জানিয়ে দেন, স্বাধীনতাকামী
জনতাকে আর বুলেট-বেয়নেটে দাবিয়ে রাখা যাবে না। তাই বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে
রেসকোর্সের মাঠে তিনি আবৃত্তি করেন বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা, ‘রক্ত
যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ।
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার
সংগ্রাম।’
মুজিবের স্বাধীনতার ডাকে রক্ত টগবগিয়ে ওঠে মুক্তিপাগল
বাঙালীর। মুহূর্তেই উদ্বেল হয়ে ওঠে জনতার সমুদ্র। মুহুর্মুহু স্লোগানে
কেঁপে ওঠে বাংলার আকাশ। নড়ে ওঠে হাতের ঝায় তাদের গর্বিত লাল-সবুজ পতাকা,
পতাকার ভেতরে সোনালি রঙে আঁকা বাংলাদেশের মানচিত্র। সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর
উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু উদাত্ত কণ্ঠে বলেছিলেন- ‘আমি যদি হুকুম দেবার নাও
পারি, তোমাদের কাছে অনুরোধ রইল ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু
আছে, তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো..’।
সেদিন বেতারে সরাসরি বঙ্গবন্ধু
মুজিবের ঐতিহাসিক এই ভাষণটি প্রচারের কথা থাকলেও তা করতে দেননি পাকিস্তানী
সামরিক জান্তারা। কিন্তু মুখে-মুখে ছড়িয়ে পড়ে শেখ মুজিবের নির্দেশ, ‘আজ
থেকে কোর্ট-কাচারি, আদালত, ফৌজদারি আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার
মানুষের কষ্ট না করে, সে জন্য যে সমস্ত অন্যান্য জিনিসগুলো আছে, সেগুলির
হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিক্সা, গরুর গাড়ি, রেল চলবে। ....সেক্রেটারিয়েট ও
সুপ্রীমকোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সেমি-গবর্নমেন্ট দফতর, ওয়াপদা- কোন
কিছুই চলবে না। ...আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব, ...আমরা যখন মরতে
শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।”
বেতারে বঙ্গবন্ধুর এই
ঐতিহাসিক ভাষণ সম্প্রচার না করার প্রতিবাদে বেতারের বাঙালী কর্মচারী
তাৎক্ষণিক ধর্মঘট শুরু করে। ফলে বিকেল থেকে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান
সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। তবে গভীর রাতে তৎকালীন সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা
বেতারে বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্সের ভাষণের পূর্ণ বিবরণ প্রচারের অনুমতি দেয়।
পরদিন সকালে বঙ্গবন্ধুর সেই কালজয়ী ভাষণ দিয়েই ঢাকা বেতার কেন্দ্র পুনরায়
চালু হয়।
স্বাধীনতার জন্য সারাদেশ থেকে ছুটে আসা পিপাসার্ত মানুষের
তৃষ্ণা মিটল বঙ্গবন্ধুর মাত্র ১৯ মিনিটের অমর কবিতায়, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ
ভাষণে। এই একটি ভাষণেই নিরস্ত্র বাঙালীকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেন
বঙ্গবন্ধু। বিশ্বের ইতিহাসে কোন রাষ্ট্রনায়ক বা নেতা স্বাধীনতার ঘোষণা
পূর্ব এই ধরনের ভাষণ দেয়ার নজীর নেই। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার দিন থেকেই মূলত
সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার অঙ্কুরোদগম ঘটতে থাকে
এ বাংলায়। বাঙালীর নিজের দেশের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেয়ার অবশ্যম্ভাবী
পরিণতির দিকে এগোতে থাকে। কেননা একাত্তরের ৭ মার্চ জাতির জনকের কণ্ঠে ঘোষিত
স্বাধীনতার ঘোষণা শোষিত-নির্যাতিত বাঙালী জাতিকে মুক্তির জন্য অস্থির-পাগল
করে তুলেছিল। পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসনের নিগড় থেকে মুক্তির তীব্র
আকাক্সক্ষার উন্মাতাল সেই তরঙ্গ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে শ্যামল বাংলার
আনাচে-কানাচে।
বঙ্গবন্ধুর অমোঘ মন্ত্রে দীক্ষিত-প্রাণিত হয়ে কঠিন
সংগ্রামে জীবন বাজি রেখে দেশ থেকে হানাদারমুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গোটা
জাতি। শুধু অদম্য মনোবলকে সম্বল করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে নিরস্ত্র বাঙালী
মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তানের আধুনিক সমরসজ্জিত, প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর
বিরুদ্ধে। মৃত্যুপণ লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুঃসাহসে দীপ্ত মুক্তিকামী বাঙালী
একাত্তরের মাত্র ন’ মাসে প্রবল পরাক্রমশালী পাক হানাদারদের
পরাস্ত-পর্যুদস্ত করে ছিনিয়ে এনেছিল মহামূল্যবান স্বাধীনতা। ত্রিশ লাখ
শহীদের আত্মদান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ, দুঃসাহসিকতা আর আড়াই লাখ
মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙালী অর্জন করল নিজস্ব মানচিত্র, লাল-সবুজের
পতাকা।
এ কারণেই ৭ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় গৌরবের দিন।
আজ গৌরবোদ্দীপ্ত হয়ে দিনটিকে বাঙালী জাতি গভীর আবেগ, ভালবাসা ও শ্রদ্ধার
সঙ্গে স্মরণ করবে। কৃতজ্ঞ বাঙালী স্মরণ করবে স্বাধীনতার মহানায়ক, জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল
হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের কর্মসূচি:
ঐতিহাসিক
৭ মার্চ উপলক্ষ্যে আজ কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচি
পালিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে পতাকাবিধি অনুসরণ
করে সকল সরকারি ও সায়ত্বশাসিত দপ্তর এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা
উত্তোলন। সকাল ৯টায় কুমিল্লা নগর উদ্যান সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে
পুস্পস্তবক অর্পণ। দিনব্যাপি কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে জাতির পিতার
জীবনীভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম নিয়ে চিত্র ও
পুস্তক প্রদর্শনীর আয়োজন। সন্ধ্যা ৭টায় কুমিল্লা টাউন হলের বীর
মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মঞ্চে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে
স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, ছড়া ও কবিতাপাঠ,
চিত্রাঙ্কন এবং সঙ্গীতানুষ্ঠান ও নৃত্যপ্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।