রহিমা মিতু:
কুমিল্লা
চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মাসুদ পারভেজ খান
ইমরান বলেছেন, শিক্ষা-সংস্কৃতিতে এগিয়ে থাকা কুমিল্লা দেশের একটি
গুরুত্বপূর্ণ জেলা। কিন্তু নানা সমস্যায় জর্জরিত কুমিল্লা শহরকে দেখলে মনে
হয় যেনো একটি অভিভাবকহীন শহর। আমাদের নগরী একটি ডাস্টবিনে পরিণত হয়ে আছে।
নগরীর উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আসলেও নগরীর কোনো উন্নয়ন হয়নি।
উন্নয়ন হয়েছে কিছু ব্যক্তির।
আসন্ন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন
নির্বাচনকে সামনে রেখে দৈনিক কুমিল্লার কাগজ অনলাইন প্লাটফর্ম সিকে
টুয়েন্টিফোর ডট কম- এর টক শো ‘ভোটের মাঠে কথার লড়াই’ অনুষ্ঠানে এসব কথা
বলেন সম্ভাব্য মেয়র পার্থী ইমরান।
তিনি বলেন, আজকে এতো বছর আওয়ামী লীগ
ক্ষমতায়। দেশে এতো উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু কুমিল্লায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
তাই কুমিল্লাবাসীর কাছে অনুরোধ, আগামী নির্বাচনে আপনারা আপনাদের ভোটটি
সঠিক জায়গায় দিবেন। এতো বছরে কুমিল্লা নগরীর কোনো উন্নয়ন হয়নি; ব্যক্তির
উন্নয়ন হয়েছে। যাদের হোন্ডা (মোটরসাইকেল) কিনার ক্ষমতা নাই- তাদের ১০/১২টা
গাড়ি। যাদের একটি বিল্ডিং করার ক্ষমতা নাই- তাদের এখন ডুপলেক্স গাড়ি।
বিগত
দুটি সিটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে ইমরান খান বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য।
২০১২ সালের আমার বাবাকে ফেল করানো হলো। ২০১৬ সালে আমার বোনকে ফেল করানো
হলো। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে (সদ্য প্রয়াত অধ্যক্ষ আফজল খান এডভোকেট) হারতে
হলো একজন রাজাকারের পুত্রের কাছে। অদক্ষ একজনকে বাবার পাশ করানো হয়। পরে
আবার তার বিরুদ্ধে বলা হয়। তাই আমি বলছি, সিদ্ধান্ত ভোটারদের হাতে। যোগ্য
ব্যক্তিকে ভোট দিতে হবে।
কুমিল্লা সিটির জলাবদ্ধতার বিষয়ে তিনি বলেন,
১৯৮৮ সালে যখন বন্যায় সারাদেশ প্রায় ডুবে গেলো, সেময়ও কিন্তু কুমিল্লা শহর
ডুবে নাই; জলাবদ্ধতা হয় নাই। কিন্তু এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই শহর ডুবে যায়।
রাস্তায় হাটু থেকে কোমর পানি জমে থাকে। মানুষ দুর্দশায় পড়ে। আমি কথা
দিচ্ছি, যদি মেয়র হতে পারি- জলাবদ্ধতা দূর করবো। মানুষের কষ্ট লাঘব করবো।
সদিচ্ছা থাকলে কুমিল্লার জলাবদ্ধতা দূর করতে ৬ মাসও লাগবে না।
তিনি
বলেন, সুন্দর নগরী গড়ে তুলতে সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফুটপাতে
জনগণের চলাচল উন্মুক্ত করতে হবে। বাণিজ্যিক ভবন আবাসিক ভবন আলাদা করতে হবে।
বহুতল ভবনে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই কুমিল্লা
নগরীর সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠবে। আমি বিভিন্ন জেলা এবং বিভিন্ন দেশ ঘুরে
দেখেছি। সেখানকার মেয়র অথবা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে আমার কথা হয়েছে,
অনেক কিছু জেনেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, আমি মেয়র হলে সেই অভিজ্ঞতা
কাজে লাগাতে পারবো।
সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ইমরান বলেন, আমি যদি মেয়র
নির্বাচিত হতে পারি যুবকদের জন্য একটি আইটি ফার্মের ব্যবস্থা করবো। সরকারি
উদ্যোগে না হলে ব্যক্তি উদ্যোগেই আইটি ফার্ম করবো। উন্নত মানের পার্ক করবো,
আন্তর্জাতিক মানের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গড়ে তুলবো। মেয়র না হলেও এটি করবো।
একটি বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলবো।
এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, আমাদের
পরিবার সম্পর্কে অনেকেই বিভিন্ন মিথ্যা অপপ্রচার চালায়। বিভিন্ন সময় মিথ্যা
মামলায় আমাদেরকে জড়ানো হয়েছে। শংকর আমাদের কর্মী ছিলো। আমাদের বাসার পাশেই
তার বাসা। তার হত্যার পর সে সময় শংকরের স্ত্রীকে দিয়ে বিভিন্নভাবে আমাদের
বিরুদ্ধে মামলা করানো হয়। অথচ শংকর হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন পরই তার স্ত্রী
পুনরায় বিয়ে করে। এরপর মানুষের প্ররোচনায় আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করে।
সাইফুল
মার্ডার বিষয়ে তিনি বলেন, যে সময় সাইফুলকে হত্যা করা হয় সেটা ছিলো
ছাত্রলীগের মিটিং। সেখানে আমার থাকার কথা নয়, আমি ছিলামও না। চেম্বারের
নির্বাচনের বিষয়ে সেসময় আমি ছিলাম খুলনায়। হত্যাকাণ্ডের সময় কান্দিরপাড়ে
সিসি ক্যামেরা ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে সিসি ক্যামেরা উধাও হয়ে গেছে। সেগুলো
গেলো কোথায়? সে প্রশ্ন কেউ করে না। সিআইডি সেই মামলায় চার্জশীট দিয়েছেন।
আমাদের ১৮ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। রাজনীতির নোংরা প্রতিপ্রক্ষরা আমাদেরকে
বারবার হেনস্তা করার চেষ্টা করছে। বারবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার
হচ্ছি। হত্যার রাজনীতির কুমিল্লায় কে শুরু করেছে- তা সবাই জানে।
নিজের
পরিবার সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার বাবার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাস
রয়েছে। তার অনেক কর্মী মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন। তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে ১৭/১৮টি
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বাবা অনেক কষ্ঠ করে কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ
প্রতিষ্ঠা করেছেন। কুমিল্লার প্রতিটি উপজেলায় ঘুরে ঘুরে তিনি আওয়ামী লীগ
ভীত গড়ে তুলেছেন। এজন্য কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ এখন সুপ্রতিষ্ঠিত।
আমাদের
গড়ে তুলতে মায়ের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি যে ত্যাগ তিতীক্ষায় আমাদের বড়
করে, প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন- তা ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো যাবে না। আমরা
ভাগ্যবান এমন মা পেয়ে।
তার বোন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আঞ্জুম সুলতানা
সীমা সম্পর্কে ইমরান বলেন, আমার বোনের মতো সহজ সরল মানুষ কোথাও খোঁজে
পাওয়া যাবে না। সে এখন এমপি, কিন্তু তার ভেতর কোনো অহংকার নেই। তার মন খুব
নরম। সে ১৭ বছর কুমিল্লা পৌরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। মানুষের প্রতি তার অগাদ
ভালোবাসা। সবসময় মানুষের সহযোগিতায় পাশে থাকে।
১৯৮৮ সালে ৪ রাত ৫ দিন
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বাসায় ছিলেন। সেময় আমার বোন
প্রধানমন্ত্রীর যত্ন নিতেন। চুল আচরে দিতেন। সেই থেকে প্রধানমন্ত্রী তাকে
খুব পছন্দ করেন।