ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কোন দিকে গড়াচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ
Published : Friday, 11 March, 2022 at 12:00 AM
কোন দিকে গড়াচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধগাজীউল হাসান খান ।।
কৃষ্ণ সাগরের তীরে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ওভেসা ও মারিওপোলের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেওয়ার পাশাপাশি রাজধানী কিয়েভ দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রাশিয়া। কিন্তু ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় (অর্থডক্স ক্রিশ্চিয়ানিটি) কারণে কিয়েভ দখলে যাতে য়তির পরিমাণ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখা যায়, সেদিকেই রাশিয়ার ল্য। হাজার বছরের পুরনো নগরী কিয়েভ একসময় ছিল রুশ সাম্রাজ্যের অখ-িত রাজধানী। সে কারণেই ঐতিহাসিকরা বলেছেন, ‘কিয়েভান রুশ’।
১১৬৯ সালে বহিঃশত্রুর আক্রমণে কিয়েভ পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হলে রুশ সাম্রাজ্যের রাজধানী স্থানান্তরিত হয়েছিল ভ্লাদিমিরে। এর আগে ১০ থেকে ১২ শতাব্দী ছিল কিয়েভের স্বর্ণযুগ (পূর্ব স্লাভিক সভ্যতা)। দীর্ঘ যুগের সেই ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কৃষ্টি-সংস্কৃতি রুশ কিংবা ইউক্রেনের অনেকে এখনো ভুলতে পারেনি। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের জন্ম হলে ক্রমে ক্রমে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের দেখা দেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও বিরোধিতা। ইউক্রেন স্বাধীন হলেও রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন এখনো মনে করেন, এ দুটি দেশের পারস্পরিক স্বার্থ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রশ্নগুলো এক ও অভিন্ন। ধারাবাহিক পশ্চিমা কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্রের কাছে তা যেন বিপন্ন না হয়।
এ অবস্থায় ইউক্রেনে রুশ সেনার ধীর ও সমস্যাসংকুল অথচ পরিকল্পিত আক্রমণের মুখে পশ্চিমা শক্তি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিকে কিয়েভ থেকে পোল্যান্ড সীমান্তের কোথাও সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। তাদের উদ্দেশ্য ইউক্রেনের বিভিন্ন অংশে বিপর্যয়ের পর জেলেনস্কির নেতৃত্বে একটি প্রবাসী সরকার গঠন করে চলমান প্রতিরোধ সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এ েেত্র সম্ভবত একটি দীর্ঘস্থায়ী গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা ইউরোপীয় দেশগুলো বিশাল অঙ্কের অর্থছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রচলিত সামরিক অস্ত্রশস্ত্রের সঙ্গে ইউক্রেনকে যুদ্ধবিমান দেওয়ারও পরিকল্পনা করেছে তারা। ন্যাটোভুক্ত পোল্যান্ড থেকে তা সরবরাহ করা হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এর মধ্যে ইউক্রেনের বিমানঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালিয়েছে রাশিয়া। সে েেত্র কোথা থেকে বিমান হামলা পরিচালনা করবে ইউক্রেন?
পোল্যান্ড কিংবা অন্য কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে বিমান হামলা চালানো হলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ ছাড়া তখন সেটি একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধ বলে বিবেচিত হবে। তাতে রাশিয়া সমগ্র ইউক্রেনের ওপর দখল প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পাবে, যা বর্তমান সমস্যাকে আরো জটিল ও দীর্ঘায়িত করবে বলে সমরকুশলীরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তবে সব কিছু ঠিক থাকলে আজ ১০ মার্চ তুরস্কের আনতালিয়াতে (তুর্কি) রুশ ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বসার কথা রয়েছে। তাতে উদ্ভূত পরিস্থিতির জট কতটা খুলবে বলা মুশকিল। তবে আলোচনার পথ খোলা থাকলে এ সমস্যা সমাধানেরও একটা পথ বেরিয়ে আসতে পারে বলে অনেকের ধারণা। রাশিয়া তার সামরিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বজায় রাখতে গিয়ে ক্রমাগতভাবে ইউক্রেনের জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো গুঁড়িয়ে দিচ্ছে চরম পাষ-তায়। ছিন্নমূল হয়ে পড়েছে লাখ লাখ নিরীহ মানুষ। রসদ ফুরিয়ে আসছে। অন্যদিকে সমরাস্ত্রের অভাব ও যোগাযোগব্যবস্থার সংকটে ইউক্রেনের সেনা ও স্বেচ্ছাসেবীরা ক্রমেই বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে বলে জানা গেছে।
‘রাশিয়া না থাকলে বাকি পৃথিবী থেকেই বা আমার লাভ কী?’ সম্প্রতি এ কথা বলেছেন রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি অত্যন্ত বিষাদের সুরে আরো বলেছেন, ভাষা-সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন কারণে একদিন রাশিয়া ও ইউক্রেনকে মানুষ একটি বৃহত্তর দেশ বলে মনে করত। ইউক্রেনকে ভাবত রাশিয়ার ছোট ভাই। এখন সেই ইউক্রেনের শাসক জেলেনস্কি রাশিয়াকে ধ্বংস করার জন্য ‘পশ্চিমা অপশক্তির’ সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। কৃষ্ণ সাগরের উত্তর তীরে অর্থাৎ পূর্ব ইউরোপে ডেকে আনছেন ন্যাটো বাহিনীকে। সেই অবস্থায় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বৃহত্তম রাষ্ট্র রাশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা কিংবা শান্তি ও স্বস্তি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? ন্যাটো বাহিনীর বর্তমান অবস্থান থেকে আরো পূর্ব দিকে সম্প্রসারণ রাশিয়ার নিরাপত্তা কিংবা অস্তিত্বের জন্য এক বিরাট হুমকি। যুক্তরাষ্ট্র নব্বইয়ের দশকজুড়ে বিভিন্ন সময় বলে এসেছে ন্যাটো আর পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে না। এর পর থেকে ন্যাটোকে পাঁচবার সম্প্রসারণ করা হয়েছে। পূর্ব দিকে অর্থাৎ পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর আরো বিস্তৃতি রাশিয়ার কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়—বলেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। সে েেত্র কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী একটি নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেন কিভাবে আগ বাড়িয়ে তাদের ডেকে আনছে? এ প্রশ্নও রুশ প্রেসিডেন্টের।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক কারণেই রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কিংবা ন্যাটোতে সাবেক সোভিয়েত দেশ ইউক্রেনের যোগদানের বিষয়টি গোড়া থেকেই বিরোধিতা করে এসেছে। তাঁর মতে, ইউক্রেন কৃষ্ণ সাগরের তীরে কিংবা পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর একটি বিশাল সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত হবে। এ ধরনের অনাকাঙ্তি পরিস্থিতি চলমান শীতল যুদ্ধকে আরো উসকে দেওয়ার সাম্রাজ্যবাদী অপকৌশল বলে বর্ণনা করেছেন পুতিন। সমালোচকরা বলেন, পুতিন যতটা সমাজতন্ত্রী, তার চেয়ে অনেক বেশি জাতীয়তাবাদী। সেই ভাবাবেগ থেকেই তিনি প্রতিবেশী ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ চালিয়েছেন, যা অন্তত মানবতার দিক থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। পশ্চিমাদের বিবেচনায় সেটা যুদ্ধাপরাধ।
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর শাসনকালে একসময় পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ত্যাগ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ন্যাটোর অন্য সদস্যরা তাদের প্রতিরার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করে না। সে েেত্র আটলান্টিকের অন্য পার থেকে যুক্তরাষ্ট্র কেন একতরফাভাবে তাদের নিরাপত্তার জন্য অর্থ ব্যয় করে যাবে? ইউরোপকে তার প্রতিরার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে মতায় আসেন ভোলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারে তাঁর ভোটারদের কাছে অনেকটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। কারণ ট্রাম্পের সঙ্গে ছিল রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের এক রহস্যাবৃত সখ্য কিংবা সমঝোতা। সুতরাং ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল কিংবা ইউক্রেনের ইইউ ও ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারে পুতিনের বিরোধিতা নিয়ে বিশেষ কোনো কথাই বলেননি ট্রাম্প। পুতিনের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায়ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মতা ধরে রাখতে পারবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মতায় অধিষ্ঠিত হন ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রবীণ সিনেটর জো বাইডেন। মতায় এসেই বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের চিরাচরিত সাম্রাজ্যবাদী কৌশল ও কর্মসূচিকে অগ্রসর করার প্রয়াস পান। পুরনো শত্রু রাশিয়া ও বিশেষ করে তার মিত্র গণচীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক সমৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন বাইডেন। সে কারণে তিনি বিশ্ববাণিজ্য ও সামরিক েেত্র যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য ব্রতী হয়েছিলেন। তাঁর মূল ল্য ছিল এই দুই েেত্রই চীন-রাশিয়ার উত্থান ঠেকানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক নম্বর অবস্থান’ ধরে রাখা। সেই সুযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান কিংবা ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য যথারীতি তৎপর হয়ে ওঠেন ইউক্রেনের জনপ্রিয় অভিনেতা কাম নব্য রাজনীতিক জেলেনস্কি। তিনি ভুলে যান তাঁর সাবেক প্রেসিডেন্ট পেট্রো পরোসেনকোর পরিণামের কথা। পরোসেনকোও চেয়েছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোতে যোগ দিতে। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের অদৃশ্য দাবার ঘুঁটির চালে তিনি শেষ পর্যন্ত মতা হারান। এ কথাটি অনেকটাই ভুলে গিয়েছিলেন জেলেনস্কি।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কিংবা ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধান ভোলোদিমির জেলেনস্কির বর্তমান চলমান পরিস্থিতিতে মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাটি বুঝতে হলে একটু পেছন ফিরে তাকাতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে ইউনাইটেড সোশ্যালিস্ট সোভিয়েত রিপাবলিক (ইউএসএসআর) ভেঙে ১৫টি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার পর কেউই আর সমাজতান্ত্রিক নীতি কিংবা আদর্শে পরিচালিত হয়নি। সেই পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের ‘গ্লাসনস্ত’ ও ‘পেরেস্ত্রাইকা’র সময়। অনেকের মতে, মূলত সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্ররোচনায়। তবে সে যা-ই হোক, পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি দেখাশোনার জন্য উল্লিখিত স্বাধীন রাষ্ট্রগুলো নিয়ে ‘কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেটস’ (সিআইএস) নামে একটি সংস্থা গঠন করা হয়েছিল। সেই সংস্থার নেতৃত্বে ছিল রুশ ফেডারেশন। কিন্তু সেই সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে কাজাখস্তানসহ বেশ কিছু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ নব্য এশীয় রাষ্ট্র ছাড়া ইউরোপীয় অংশের বিশেষ কেউ সেই সংস্থায় কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করেননি। ইউরোপীয় অংশের অনেকেই তখন ক্রমে ক্রমে পশ্চিমা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে শুরু করেন অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।
পূর্ব ইউরোপীয় অংশের বেলারুশ ও ইউক্রেন জ্বালানি সম্পদসহ অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রতিরার দিক বিবেচনা করে রাশিয়ার সঙ্গে সহাবস্থান করলেও ক্রমে ক্রমে ইউক্রেনের সঙ্গে দেখা দেয় বিভিন্ন মতবিরোধ। অনেকে সামরিক পারমাণবিক দিক থেকে সমৃদ্ধ বিশাল রাষ্ট্র রাশিয়ার প্রভাব ও আধিপত্যকে তার জন্য দায়ী করে থাকেন। পূর্ব ইউরোপ ও উত্তর এশিয়াব্যাপী বিস্তৃত বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্র ও অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার শাসক ভ্লাদিমির পুতিন সে বিষয়টি অগ্রাহ্য করে তাঁর দেশ ও পূর্ব ইউরোপের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও প্রভাববলয়ের ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলেন। পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলোর আগ্রাসী নীতি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না। সে কারণেই ইউক্রেনের ন্যাটো কিংবা ইইউতে যোগ দেওয়া নিয়ে পুতিনের এত বিরোধিতা। এ ছাড়া জ্বালানি ও শিােেত্র ইউক্রেন সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ অবস্থায় রাশিয়ার নিকটতম প্রতিবেশী ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিলে তা এ অঞ্চলের সার্বিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে নিরাপত্তার েেত্র এক বিরাট হুমকির সৃষ্টি করবে বলে পুতিন মনে করেন। কিন্তু ইউক্রেন নেতা জেলেনস্কির সামনে ছিল পশ্চিমা রোমাঞ্চ ও তথাকথিত মুক্ত বিশ্বের হাতছানি। ইউক্রেনের জনগণও সেই দোলাচলে দুলছিল অগ্রপশ্চাৎ ও চূড়ান্ত পরিণতির কথা না ভেবে।
এবার এর একটা এসপার-ওসপার দেখতে চান রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে না ঢুকতে দেওয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢুকতে হলে সময় লাগবে অনেক। তবে এর মধ্যে ইউক্রেনের সব সামরিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে তাকে ডিমিলিটারাইজ করবেন তিনি। এর পাশাপাশি রাশিয়া, চীনসহ বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে একটি বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বাণিজ্যের েেত্র বিকল্প মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা কার্যকর করার পরিকল্পনা পুতিনের রয়েছে।
রাশিয়ার হাতে এখন বিভিন্ন ধরনের ছয় হাজার ৮০০টির বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ৭০০টি বেশি। তবু গত বছর জেনেভায় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক যৌথ সভায় তিনি একমত হয়েছেন যে পারমাণবিক যুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না। সে কারণে পুতিন বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করতে চান। তার পাশাপাশি রাশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ কোথায় নিয়ে যাবে তাঁকে? এরই মধ্যে পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইউক্রেন আক্রমণ এবং তাতে এ পর্যন্ত যে সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, তাকে কি গণহত্যা বলা যায়? এ ছাড়া রুশ বোমা ও আর্টিলারি গোলায় যেসব স্থাপনা ধ্বংস কিংবা তিগ্রস্ত হয়েছে তার জন্য রাশিয়ার কাছে তিপূরণ চাওয়া হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে অনেক রুশ সেনা নিহত এবং এমনকি কয়েকটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। সুতরাং সেই যুদ্ধ কি একেবারেই একতরফা ছিল? সেসব নিয়ে চুলচেরা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হবে। তবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ একটি যুদ্ধবিরতির জন্য বারবার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করে ব্যর্থ হয়েছেন। সে জন্য যুদ্ধ চলাকালীন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্যকে দায়ী করেছেন অনেকে। এ কথা ঠিক যে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য পশ্চিমা বিশ্বসহ অনেকে রাশিয়া ও তার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন, নিন্দা জানিয়েছেন। পুতিন এ যুদ্ধের একটা শেষ দেখতে চান।

লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক মিনিস্টার
[email protected]