সেনাবাহিনী এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি দেওয়ার নামে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। ওই চক্রের হোতা গোলাম কবির এক সময় বাবুর্চির চাকরি করতেন। পরে নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দুপুরে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-১১ কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি র্যাবের ইউনিফর্ম, একটি শার্ট, একজোড়া বুট, খলিল নামে একটি নাম লেখা ব্যাজ, একটি পিস্তলের কাভার, বিভিন্ন পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞাপন, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিম, বেশ কয়েক জনের জীবনবৃত্তান্ত, একটি পুলিশের আইন বিষয়ক বই, দুটি কম্পিউটার এবং একটি প্রিন্টার মেশিনসহ সেনাবাহিনীর লোগো সংবলিত ডিও পেপার উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন– সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌদ্দগ্রাম কৃষ্ণপুর গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে রিপন মিয়া (৩২), মান্দারিয়া গ্রামের মৃত আনা মিয়ার ছেলে হোসেন মিয়া (২৮), ইয়াসিন মোল্লার ছেলে গোলাম কবির ওরফে মেজর শামীম (৫৫), ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার শাহাদাৎ হোসেন সাহেব আলীর ছেলে তানভীর আহমেদ রাজু (২৮), লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার মৃত সিদ্দিক মিয়া ছেলে হুমায়ুন কবির (৪৭), জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানার মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোখলেসুর রহমান মুকুল (৪৭)।
প্রতারণার শিকার দুই ব্যক্তির বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, মো. শাহজাহান ও রফিক নামে দুই ব্যক্তি র্যাবের কুমিল্লা অফিসে গিয়ে অভিযোগ করেন, একটি চক্র তাদের সেনাবাহিনীতে চাকরির প্রস্তাব দেয়। ভুক্তভোগীরা চাকরির প্রয়োজনের বিষয়টি প্রতিবেশী হোসেনকে জানালে তিনি তাদের পরিচয় করিয়ে দেন রিপন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে এবং চাকরি পাওয়ার আশ্বাস দেন। গত বছরের জুলাই মাসে রিপন তার বড় স্যারের সঙ্গে দেখা করানোর কথা বলে ভুক্তভোগীদের ঢাকায় নিয়ে যান। তখন কথিত বড় স্যার একজনকে ম্যাস ওয়েটার এবং অন্য জনকে এমইএস পদে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেন। সেখানে প্রতারক চক্রের মূল হোতা কথিত বড় স্যার গোলাম কবির ‘মেজর শামীম’ পরিচয়ে শাহজাহানকে ডাক্তারি পরীক্ষা করান। পরে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শাহজাহানকে আনুষ্ঠানিকভাবে বায়োডাটা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে ভুয়া পুলিশ ভেরিফিকেশন করেন। এরপর ডিসেম্বরে নিয়োগপত্র ও প্রাথমিকভাবে যোগদান এবং পরে এসএমএসের মাধ্যমে এ বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি যোগদানের জন্য এসএমএস করেন। যোগদানের একদিন আগে চক্রটি তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়।
অপর ভুক্তভোগী মো. জাকির হোসেন উল্লেখ করেন, ‘প্রতারক চক্র আমাকে বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক পদে চাকরি দেবে বলে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। আমি তাদের কথামতো অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে পাঁচ লাখ টাকা দিই। এ ছাড়াও তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে আরও দুই লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ মোট সাত লাখ ৭০ হাজার টাকা দিই।’
র্যাব কর্মকর্তা মেজর সাকিব হোসেন জানিয়েছেন, প্রতারক চক্রের মূলহোতা গোলাম কবির ১৯৮২ সালে সেনাবাহিনীতে সিভিল বাবুর্চি হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন এবং ১৯৯৩ সালে চাকরি ছেড়ে দেন। দীর্ঘদিন সেনানিবাসে চাকরি করার সুবাদে নিজেকে সেনাবাহিনীর একজন মেজর হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। ২০১১ সালে এই প্রতারণার জন্য তার নামে একটি মামলা হলে তিনি জেল হাজতে যান। পরে আবার বেরিয়ে এসে এই অপকর্মে লিপ্ত হন।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।