তানভীর দিপু: কুমিল্লার
বিজয়পুরে ট্রেনেকাটা পরে তিন স্কুল ছাত্রী মৃত্যুর ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ও
সাধারণ মানুষের অসচেতনতাকে দায়ী করছে রেল কর্তৃপক্ষ। বিজয়পুর সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিজয়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে মাঠের পাশে রেললাইন
লাগোয়া সীমানা প্রাচীর কিংবা নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় সময় ও রাস্তা
বাঁচাতে রেললাইন পার হয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে শিক্ষার্থীরা। যা দুর্ঘটনার
অন্যতম প্রধান কারণ বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এই
দুর্ঘটনায় তাদের কোন দায় নেই। বরং মানবিক কারনে তারা ওই স্থানটিতে তারা
কাটার মাধ্যম নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী করে দেয়ার পরিকল্পনা করছে। এদিকে
স্কুলের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরও ক্ষোভ, স্কুলের জন্য রেললাইন ও মহাসড়কের
উপর ফুটওভার ব্রীজের জন্য দীর্ঘ দিনের দাবি থাকলেও তা নজরে আসেনি প্রশাসন ও
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিজয়পুর সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিজয়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ঘেষা ঢাকা-চট্টগ্রাম
ডাবল লাইন রেলপথ। স্কুলের পূর্ব পাশের গ্রামগুলো থেকে অন্তত একহাজার
শিক্ষার্থী রেললাইন অতিক্রম করে স্কুলে আসে প্রতিদিন। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য
প্রধান ফটক থাকলেও রাস্তা ও সময় বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়েই অসচেতন ভাবে স্কুলে
যাতায়াত করে শিক্ষার্থীরা। যে কারণে ঘটে ট্রেনে কাটা পরার মত দুর্ঘটনা।
একেবারে রেললাইন লাগোয়া অত্র এলাকার অন্যতম বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নেই
কোন সীমানা প্রাচীর কিংবা নিরাপত্তা বেষ্টনী। এছাড়া রেলপথ ও মহাসড়ক অতিক্রম
করার জন্য নেই কোন ফুটওভার ব্রীজও। খুব কম সংখ্যক শিশু শিক্ষার্থীদের
অভিভাবকরা মহাসড়ক ও রেললাইন পার করে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিয়ে
গেলে বেশির ভাগই আসে অভিভাবক ছাড়া দল বেঁেধ। তারা বেশির ভাগই বিজয়পুর
বাজারের অলিগলি হয়ে রেললাইন হেঁটে পার হয়ে স্কুলে আসে। অনেকইে ব্যবহার
করেনা বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক।
বিজয়পুর মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান
শিক্ষক মোখশেদ হোসেন বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলে প্রায় এক হাজার ৩শ’
শিক্ষার্থী প্রতিদিন এ বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করে। যাদেও বাড়ি রেল লাইনের
পশ্চিম পাশে তাদেরকে লেল লাইন আতিক্রম করতে হয়না। কিন্তু পূর্ব পাশের
বিজয়পুর, বারপাড়া দূর্গাপুরসহ আশে পাশের গ্রামগুলো থেকে প্রায় এক হাজার
শিক্ষার্থী কুমিল্লা নোয়াখালী মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথ পার হয়ে আসতে
হয়। স্কুলের সামনের জায়গাটিতে কোন ফুটওভার ব্রীজ না থাকায় যে যেভাবে পারছে
রাস্তা এবং রেল লাইন পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসছে। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ও
ফুট ওভার ব্রীজের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করেও লাভ হয়নি।
বিদ্যালয়
পরিচালনা কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন মজুমদার জানান, বিজয়পুর প্রাথমিক
বিদ্যালয়, বিজয়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ কাছাকাছি জায়গাটিতে পাঁচটি বিদ্যালয়
রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই শিশু। তাদের কথা বিবেচনা
করেও আমরা রেল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছিলাম, তারা জানান- এই জায়গায়
ফুটওভার ব্রীজ করার টেন্ডার প্রজেক্টে নেই। তবে সেসময় রেলওয়ের কর্মকর্তারা
মৌখিক ভাবে জানিয়েছিলো- সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নিলে এখানে ফুটওভার ব্রীজ
তৈরী করা হবে।
রেলওয়ে কুমিল্লার উর্দ্ধতণ উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ)
লিয়াকত আলী মজুমদার বলেন, রেললাইনের উপর সব সময় ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকায় এদায়
কোন ভাবেই রেল কর্তৃপক্ষের উপর বর্তায় না। তাছাড়া বিজয়পুর প্রাথমিক ও
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সীমানা প্রাচীর কিংবা নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় সময় ও
রাস্তা বাঁচাতে রেললাইন পার হয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে শিক্ষার্থীরা। এ দায়
প্রতিষ্ঠানের ও অভিভাবকদের অসচেতনতা। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে বিজয়পুর
স্কুল এলাকার রেলপথটি নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরীর বিষয়টি দেখবো।
এদিকে গত
বুধবার বিজয়পুরে ট্রেনে কাঁটা পড়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় জেলা
প্রশাসনের তদন্ত কমিটির সদস্য ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল
মান্নান জানান, বিজয়পুরে রেল লাইনের পাশে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বিদ্যালয় কতৃপক্ষ, রেল কতৃপক্ষ, শিক্ষা কার্যালয়ের সমন্বিত উদ্যোগে
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। রেল লাইনের
দুপাশে বেষ্টনী, প্রতিষ্ঠানের দেওয়াল নির্মানের বিষয়টি দেখা হচ্ছে। দূঘটনার
বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
রেলকর্তৃপক্ষ বলছে,
সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে কুমিল্লা থেকে আখাউড়া ৭২ কিলোমিটার রেলপথে নতুন
২০টি বৈধ লেভেল ক্রসিং নির্মান করা হবে, বর্তমানে মাত্র ১৩ টি লেভেল
ক্রসিং দিয়ে পারাপার করছে মানুষ ও যানবাহন।