Published : Thursday, 17 March, 2022 at 12:00 AM, Update: 17.03.2022 1:13:33 AM
তানভীর দিপু:
কুমিল্লায়
বিভিন্ন সড়ক, রেলপথ ও নৌপথে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি এখন নিত্য ঘটনা।
প্রতিদিনই জেলার কোন কোন এলাকা থেকে আসছে এসব খবর। প্রাণহানির সাথে বিনষ্ট
হচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের যানবাহন ও সম্পত্তি। দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে
জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি
আকর্ষণ করেছেন সভার সদস্যরা।
সূত্র মতে, কুমিল্লায় গত আড়াই মাসে ৩৩ টি
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৭ জন। এসব দুর্ঘটনায় দায়ের করা মামলার
সংখ্যা ১৬। দুর্ঘটনায় কবলিত যানবাহনের সংখ্যা ২৯টি। হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা
রিজিয়ন থেকে প্রাপ্ত এবছরের জানুয়ারি থেকে শুরু করে মার্চের ১৫ তারিখ
পর্যন্ত এই তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে মহাসড়কসহ জেলার
অন্যান্য সড়কগুলোতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা অর্ধশতাধিক।
বিভিন্ন
সূত্রে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বুড়িচংয়ের কাবিলা
এলাকায় ট্রাক চাপায় প্রাণ হারায় মোটর সাইকেল আরোহী জসিম উদ্দিন। ৩ জানুয়ারি
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার পুরান বাটেরা সংলগ্ন কাঠালিয়া নদীতে ট্রলার
ডুবিতে একই পরিবারের দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ৬ জানুয়ারি
কুমিল্লা-নোয়াখালী মহাসড়কের লাকসাম এলাকায় আত্মীয়ের জানাজায় যাওয়ার পথে
বিআরটিসি বাসের সাথে সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের চার জনের
মৃত্যু হয়। এর মধ্যে বাবা-মা-সন্তান ও নানী ছিলেন। ১৮ জানুয়ারি চান্দিনায়
মারুতি চাপায় এক রিকশা চালক নিহত । একই দিনে ট্রেনে কাটা পরে এক যুবকের
মৃত্যু। ২২ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা ও আলেখারচর এলাকায়
পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চার জনের মৃত্যু হয়। ২৩ জানুুয়ারি চান্দিনায় পিকআপ
চাপায় শিশু এবং ব্রাহ্মণপাড়ায় ইজিবাইকে চাদর পেঁচিয়ে এক জন প্রাণ হারায়। ২৮
জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সদর দক্ষিণ উপজেলায় কাভার্ডভ্যানের
ধাক্কায় প্রাণ হারান ট্রাক চালক। ২৯ জানুয়ারি নাঙ্গলকোটে ট্রেনের ধাক্কায়
মৃত্যু হয় এক ফল বিক্রেতার।
৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের
নাজিরাবাজার এলাকায় লরি চাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী এবং কুমিল্লা-সিলেট
মহাসড়কে ট্রাক চাপায় সিএনজিচালক নিহত হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা-সিলেট
মহাসড়কের দেবিদ্বারে ট্রাক চাপায় এক বেসরকারি কর্মকর্তার মৃত্যু হয়। গত ১৮
ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের ময়নামতি এলাকায় বালুবাহী
ট্রাকের চাপায় মৃত্যুবরন করেন সিএনজির ৫ যাত্রী। ১৯ ফেব্রুয়ারিতে
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দিতে দায়িত্বরত অবস্থায় অজ্ঞাত গাড়ি চাপায়
প্রাণ হারায় জাহাঙ্গীর আলম নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা।
২০ ফেব্রুয়ারি
দেবিদ্বারে ট্রাক্টর চাপায় এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি
কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কে প্রাইভেটকার খাদে পরে প্রাণ হারান ৫ জন। ২৭
ফেব্রুয়ারি রাতে গোমতী নদীর পার এলাকায় মৃত্যুবরন করে মোটরসাইকেল আরোহী এক
কলেজ ছাত্র। টমছমব্রীজে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত এক ব্যাক্তি ৩ মার্চ
মৃত্যুবরন করেন।২৮ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা শহরের ধর্মসাগর পাড়ে প্রাইভেটকার
চাপায় মৃত্যু হয় একজনের। ২ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ট্রাক চাপায়
প্রান হারায় এক পথচারী। ৭ মার্চ দেবিদ্বারে সড়ক ট্রাক চাপায় বাই সাইকেল
আরোহী এনজিও কর্মীর মৃত্যু। ৯ মার্চ বিজয়পুর এলাকায় ট্রেনে কাটা পরে
মৃত্যুবরন করে তিন শিক্ষার্থী। ১০ মার্চ দেবিদ্বারে বাস চাপায় মোটরসাইকেল
আরোহী দুই জন এবং বুড়িচংয়ে বাস চাপায় মোটর সাইকেল আরোহী এক অবসর প্রাপ্ত
সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু হয়। ১১ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সৈয়দপুর
এলাকায় প্রাইভেটকার চাপায় একশিশুসহ দুই পথচারী নিহত হয়। ১২ মার্চ
চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাস চাপায় পথচারী এক বৃদ্ধ এবং ট্রাক উল্টে চালকের
মৃত্যু। ১৩ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পিক আপ চাপায় এক পথচারীর মৃত্যু
হয়। ১৪ মার্চ ট্রাক্টর থেকে ছিটকে পরে হেল্পারের মৃত্যু হয়। ১৫ মার্চ
ব্রাহ্মপাড়ায় সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে এক জন নিহত হয়েছে।
কুমিল্লায়
ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা গুলোর মধ্যে বেশির ভাগ দুর্ঘটনার কারনই অসচেতনতার
কারনেই ঘটছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোঃ রহমত
উল্যাহ। তিনি জানান, কুমিল্লা অঞ্চলে গত কয়েক দিনে যতগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে
এসব দুর্ঘটনার বেশির ভাগই অসচেতনতার কারনে। আমাদের একজন পুলিশ কর্মকর্তাও
কয়েকদিন আগে অজ্ঞাত গাড়ি চাপায় মৃত্যু বরন করেছে। যা আমাদের জন্য সত্যি
দুঃখজনক। আমরা সচেষ্ট আছি দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে।