চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ১৯৯০ সালে কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত ইউনিভার্সিটি ক্লাব, কুমিল্লার উদ্দ্যোগে গত ২৪ মার্চ ২০২২ বৃহস্পতিবার কুমিল্লা টাউন হলে সন্ধ্যা ৭টায় মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর যোদ্ধার সংবর্ধনা ও বৃহত্তর কুমিল্লার বিভিন্ন পর্যায়ের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বরণ্য ব্যক্তিদের গুণীজন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইউনিভার্সিটি ক্লাব, কুমিল্লার নব নির্বাচিত সভাপতি এককালীন চঃবি ছাত্রনেতা মোকাদ্দেছ আলী মজুমদার শাহিন। উল্লেখ্য মহান স্বাধীনতা দিবসের ৫০ বৎসর পূর্তি উপলক্ষে বীরমুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা এবং কুমিল্লার প্রথিতযসশা ১০ জন মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সম্মুখ যোদ্ধা, ক্রীড়া সংগঠক, ক্রীড়াবিধ, সমাজ সেবক, চারুকলা শিল্পী সহ বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাধীনতা পরবর্তী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গুণীজনদের সম্মানে এই আয়োজন করা হয়।
সন্ধ্যায় ৭টায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লার গণ মানুষের নেতা কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের এলামনাই এসোসিয়েশন এর সভাপতি, সাবেক মুখ্য সচিব- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ জনাব মোঃ আবদুল করিম, আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন যথাক্রমে-সাবেক সংসদ সদস্য ও চাকসু’র ভিপি জনাব মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে, সম্মানিত অতিথি ছিলেন ইউনিভার্সিটি ক্লাব, কুমিল্লার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ড. শাহ্ মোঃ সেলিম। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র বাবু প্রদীপ কুমার রাহা কান্তি। বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মীর আবু তাহের, ক্লাব সাধারণ সম্মাদক কাজী সোহেল হায়দার প্রমূখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযোদ্ধের সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত ২০/২৫ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কুমিল্লা জিলা স্কুলের বিএনসিসি ক্যাডেটদের মাধ্যমে স্যালুট জানিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা ও উত্তরীয় পড়িয়ে সংবর্ধিত করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে আয়োজকদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কোতয়ালী থানা কমান্ডার বীরযোদ্ধা মোঃ আবদুল মতিন। পরবর্তীতে গুণীজন সম্মাননা আয়োজনে গুণীজন ব্যক্তিত্ব যথাক্রমে- মহান মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক, কুমিল্লার মুক্তকালীন প্রথম প্রশাসক এডভোকেট আহমেদ আলী (মরণোত্তর), ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযোদ্ধে বীর সম্মুখ যোদ্ধা কমান্ডার ইকবাল আহমেদ বাচ্চু (মরণোত্তর), বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা অর্জনে কুমিল্লার কৃতি সন্তান বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম (মরণোত্তর), চিকিৎসা সেবা ও সমাজ সেবায় বিশেষ অবদান রাখায় ডাঃ যোবায়দা হান্নান (মরণোত্তর), বাংলাদেশে নজরুল সংগীত চর্চা বিকাশে দীর্ঘ ৭০ বৎসর এর অবদানকারী পরিবারের পক্ষে বিশিষ্ট নজরুল সংগীত শিল্পী অলকা দাস, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নারী ক্রীড়া সংগঠক এডভোকেট রাশেদা রহমান, স্বাধীনতা পরবর্তী কুমিল্লার সোনার মেয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জনকারী এথলেট রোকেয়া বেগম খুকী, আন্তর্জাতিক বরণ্য চারুকলা শিল্পী কুমিল্লার গর্ব নাজমা আক্তার, জাতীয় চলচিত্র শিল্প নির্দেশনায় বারবার সম্মাননা প্রাপ্ত কুমিল্লার কৃতি সন্তান শিল্পী উত্তম গুহ, সাহিত্য ও গবেষণা কর্মে কুমিল্লার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক শান্তি রঞ্জন ভৌমিক কে ইউনিভার্সিটি ক্লাব, কুমিল্লার পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানো হয়।
প্রধান অতিথির ভাষণে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এধরনের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ইউনিভার্সিটি ক্লাব, কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে সমুন্নত রেখে আগামী প্রজন্মকে যে পদ দেখিয়ে যাচ্ছে তা কুমিল্লা বাসীর জন্য অনুকরণীয়। তিনি মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচীতে কুমিল্লা নামেই বিভাগ ঘোষণার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট কুমিল্লা বাসীর পক্ষে উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন কুমিল্লা জেলা ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের, ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গশার্দুল মেজর গণির, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা অর্জনকারী বীরযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কুমিল্লার অগ্নিকন্যা শান্তি সু-নীতির এই কুমিল্লা। মহান মুক্তিযোদ্ধে এই কুমিল্লার অবদান জাতি কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা ও গুণীজন সম্মননা শেষে অভয়চরণ নৃত্যকলা, নৃত্যম ললিতকলা কেন্দ্র, কুমিল্লার গুণী শিল্পী শিউলী রায় ও আলো সাহার পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।