কুবি প্রতিনিধি ।।
নানা
অব্যাবস্থপনা, শিক্ষার্থী সংকট, আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, দীর্ঘ
সেশনজটের শঙ্কায় চলতি বছরে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে মত
দিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষকেরা। ২০২১
সালে অনুষ্ঠিত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার তিন ইউনিট প্রধানসহ শিক্ষক সমিতির
নেতারা গুচ্ছ পদ্ধতির বিপক্ষে মত দেন। এদিকে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে
নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা নেওয়ার আহ্বায়ন জানিয়ে উপাচার্য বরাবর চিঠি
দিবে শিক্ষক সমিতি।
তবে গত ১৮ মার্চ গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে বিগত বছরের পরীক্ষার বিষয়ে পর্যালোচনা
এবং এবারের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে
মত দিয়েছেন। তবে আগেরবার অব্যবস্থাপনাগুলো সংস্কার করতে বলেছেন।
গুচ্ছ
পদ্ধতিতে পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট দীর্ঘমেয়াদী হবে বলে মনে
করেন ‘এ’ ইউনিটের আহ্বায়ক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বলা হয়েছে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী
ভর্তি করতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশে
শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে যে সমস্যাগুলো দূর করতে গুচ্ছতে পরিক্ষা
নেওয়া সে পরিকল্পনা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া হয়ে
গেছে। যার ফলে সেশনজট সৃষ্টি হবে। এছাড়া অর্থ, সময় নিয়ে বেশী হয়রানির শিকার
হয়েছে শিক্ষার্থীরা। আমি বলবো ভর্তি পরীক্ষায় গুচ্ছ পদ্ধতি থাকা মোটেই
উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, সকল শিক্ষকদের নিয়ে আমরা মিটিং করেছি। দুই একদিনের
মধ্যে শিক্ষক সমিতি সবার মতামতের ভিত্তিতে উপাচার্যকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়
পরীক্ষা নিতে আহ্বায়ন জানাবে।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো.
আবু তাহের বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সরকারি সিদ্ধান্তে
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছতে পরীক্ষা নিয়ে নানা জটিলতার সম্মুখীন হয়েছে।
সমস্যার কথা বিবেচনায় এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হ্রাস পায়নি
বরং বেড়েছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি থাকবে আমাদের।
অবশ্য এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন উপাচার্য।
আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে
যাচ্ছে জানিয়ে ‘বি’ ইউনিটের আহ্বায়ক ও ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএম
শরীফুল করীম বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থী একবারই
পরিক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। যার ফলে এক ঘন্টার পরীক্ষায় তার স্বপ্ন
সীমাবদ্ধ। ফলে শিক্ষার্থীদের কাছে অঞ্চল ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
প্রধান্য পাচ্ছে। যা সংস্কৃতির মধ্যেই পড়েনা। প্রতিটি বিশ^বিদ্যালয়ের আলাদা
আলাদা কালচারটা আর থাকছেনা। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনচেপ্ট নয়।
‘সি’
ইউনিটের আহ্বায়ক ও একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশনস সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড.
বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে আমরা ভর্তি প্রক্রিয়াই শেষ করতে
পারছিনা। একের পর এক মেরিট লিস্ট দেয়ার পরও শিক্ষার্থী পাচ্ছে বিভাগগুলো।
এই গুচ্ছপদ্ধতি ভোগান্তি বাড়িয়েছে।
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহ.
আমিনুল ইসলাম আকন্দ বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতির ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ
অভিভাবকদের অস্থিরতা শেষ হচ্ছেনা। একটি স্কোর দিয়ে শিক্ষার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু মাইগ্রেশন চলমান রাখায়
শিক্ষার্থী এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিভাগ থেকে বিভাগে,
গ্রুপ থেকে অন্য গ্রুপে যাচ্ছে। যার ফলে ভর্তি প্রক্রিয়া চলমান থাকছে।
শিক্ষক যেমন ক্লাস শুরু করতে পারছেনা তেমনি শিক্ষার্থীরাও কোন বিভাগে পড়বেন
তা ঠিক করতে পারছেনা। নানা জটিলতার পরও গুচ্ছ পদ্ধতি রাখার লাভ কি সেটা
বোধগম্য নয়।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে কুবি থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে
উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ.এফ.এম. আবদুল মঈন বলেন, ‘গুচ্ছ পদ্ধতি পরীক্ষার
আইডিয়াটি মহামান্য রাষ্ট্রপতির। গুচ্ছের বিষয়ে উপাচার্যদের সভায় আমি বলেছি
শিক্ষকদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবো। সভায় সঙ্কটগুলো নিরসনের প্রতি
সবাই গুরুত্ব দেন।’