এবিএম আতিকুর রহমান বাশার ঃ
পায়ে
হেঁটে পুরো বাংলাদেশ ঘুরেছেন তরুণ সাইফুল ইসলাম শান্ত ওরফে ‘হাটা বাবা’।
৭৫ দিনে তিন হাজার ০৫ কিলোমিটার অতিক্রম করে গত ২৯ মার্চ মঙ্গলবার
কক্সবাজারের শহীদ মিনারের পাদদেশে গিয়ে পৌঁছান কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বারের
এই তরুণ। ওই দিন বিকেলে কক্সবাজারে পৌঁছালে শহীদ মিনারে তাৎক্ষনিক তাকে এক
সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
জীবন বাঁচাতে রক্তদান, পরিবেশ সুরক্ষায় বৃক্ষরোপণ ও
প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সুফল বার্তা পৌঁছে দেওয়াই ছিল অ্যাথলেট
সাইফুল ইসলাম শান্তের মূল লক্ষ্য।
বুধবার দুপুর ১টায় কক্সবাজার থেকে
টেফনাফের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে জাহাজ থেকে সেল ফোনে এ প্রতিনিধিকে সাইফুল
ইসলাম শান্ত জানান, গত ১৪ জানুয়ারী রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে
যাত্রা শুরু করেছিলেন। সেখান থেকে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড় হয়ে সর্ব
দক্ষিণের জেলা কক্সবাজারের অভিমুখে যাত্রা করেন। এ সময় শান্ত প্রতিটি
জেলায় বৃক্ষরোপণ, মাটি সংগ্রহ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরার চেষ্টা
করেছেন। তিনি আরো জানান, এসময়ে ৩৮টি জেলা সদর এবং ২৬টি উপজেলাসদরে
ধারাবাহিক পদযাত্রা করেন।
এর আগে গত ২০১৬ সালে পথযাত্রা শুরু করেছিলেন
সাইফুল ইসলাম শান্ত। তিনি ইতোমধ্যে হেঁটে দেশের ১৬টি জেলার ১০০০ কিলোমিটার
কুমিল্লা থেকে বাংলাবান্ধা পথ অতিক্রম করেছিলেন।
এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর
জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে
কুমিল্লার দেবীদ্বার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার সাইফুল হেঁটে গিয়েছিলেন ২২
ঘণ্টায়। এটা বাংলাদেশে এক দিনের হাঁটার ক্ষেত্রে একটা বড় রেকর্ড। পুরো দেশ
ঘুরে এখন বেশ উচ্ছ্বসিত সাইফুল ইসলাম শান্ত। এবার তিনি বেরিয়ে পড়তে যান
বিশ্ব ভ্রমণে।
কক্সবাজারে পৌঁছালে অ্যাথলেট সাইফুল ইসলামকে সংবর্ধনা দেন
দেশের আয়রনম্যান এবং প্রখ্যাত সাঁতারু দৌড়বিদরা। পরে সেখান থেকে জেলা
প্রশাসকের কার্যালয়ে তাকে সংবর্ধনা দেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। এ
সময় তারা সাইফুল ইসলাম শান্তর এই পথযাত্রাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
সাইফুল
ইসলাম শান্ত দেশের বৃহৎ রানিং গ্রুপগুলোর সক্রিয় সদস্য এবং কুমিল্লার
দেবীদ্বার উপজেলায় ‘দেবীদ্বার রানার্স’ নামে ২ হাজার সদস্যের একটি রানিং
গ্রুপ পরিচালনা করে আসছেন।
এই হাইকিংয়ে ভোর থেকে হাঁটা শুরু করতেন
সাইফুল। সন্ধ্যার পর থামতেন। সাইফুল ইসলাম শান্ত বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায়
গিয়ে পরিচিত মানুষের বাসায় থেকেছি। আবার কখনো ডাকবাংলো বা হোটেলে।’ সাইফুল
বলেন, ‘একা একাই হেঁটেছি। শুরু করার সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে দিতেন। আর
দিনের গন্তব্যে পৌঁছানোর সময় স্থানীয় সাইক্লিস্ট ও রানার গ্রুপগুলোর
সদস্যরা এগিয়ে আসতেন।’
সাইফুলের এই হাঁটার উদ্দেশ্য শুধু রেকর্ড করা নয়;
তিনটি বিষয়ে তিনি সচেতনতা তৈরির কাজ করছেন। জীবন বাঁচাতে রক্তদান,
প্লাস্টিক ব্যবহারে সতর্কতা এবং বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলে
মানুষকে সচেতন করে চলেছেন হেঁটে হেঁটে। ‘ইচ্ছা ছিল স্কুল-কলেজে গিয়ে এসব
নিয়ে কথা বলব। কিন্তু করোনার কারণে তখন স্কুল-কলেজ বন্ধছিলো। তাই বিভিন্ন
ক্লাবে যাই, জনসমাগমের জায়গায় গিয়ে কথা বলি। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো বিপদ
আপদে পড়িনি। যেখানেই যাই, সবাই খুব আন্তরিক ব্যবহার করেন।’
প্রতিদিন গড়ে
৪০ থেকে ৪২ কিলোমিটার হাঁটেন এবং সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার পর্যন্তও তিনি
ঁেহটেছেন । তিনটি বিষয়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সাইফুল আরেকটি কাজ করেছেন
প্রতিটি জেলার মাটিও সংগ্রহ করেছেন। সাইফুলের এই অ্যাডভেঞ্চারে পৃষ্ঠপোষকতা
করছে ‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্চা। হাইকার সোসাইটি অব বাংলাদেশ তাঁর এ পথযাত্রা
মনিটরে সহায়তা করছে।
কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার পৌর এলাকার বড় আলমপুর
গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ও করুণা বেগমের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্য দ্বিতীয়
সন্তান সাইফুল ইসলাম। ১৯৯৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর তার জন্ম। তাদের আদী বাড়ি
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ধনপতিখোলা হলেও ২০০৩সাল থেকে দেবীদ্বার পৌর
এলাকার বড়আলমপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন। তিনি দেবীদ্বার সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৫সালে প্রাথমিক শ্রেণীর গন্ডি পেরিয়ে দেবীদ্বার
রেয়াজ উদ্দিন মডেল পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১১সালে মাধ্যমিক এবং
২০১৩সালে দেবীদ্বার সুজাত আলী সকোরি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।
পরে ঢাকার ধনিয়া বিশ^বিদ্যালয় কলেজ থেকে ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞানে ২০১৮সালে
বিএসসি সম্মান ডিগ্রী লাভ করেন। সাইফুলের ছোটবেলা থেকেই হেঁটে হেঁটে ঘোরার
প্রতি বেশ আগ্রহ ছিল। তবে সেটা বেড়ে গেছে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পর।
একটু একটু করে হাঁটার দূরত্ব বাড়িয়েছেন সাইফুল।
বাংলা চ্যানেল সাঁতারে
সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে অংশ নেন সাইফুল। তবে নিজেকেও ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেন
বাংলা চ্যানেলে সাঁতারের জন্য। আপাতত এই ‘হাঁটাবাবার’ লক্ষ্য এবার তিনি
বেরিয়ে পড়তে যান বিশ্ব ভ্রমণে।