ঠিক এক বছর আগে এই মাঠে হেরেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বিদায় নিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। পুরনো সেই জ্বালা মেটানোর দাবির সঙ্গে বর্তমানের সমালোচনার জবাব দেওয়ার তাড়নায় যেন একযোগে জ্বলে উঠল পুরো দল। যেখানে অনবদ্য নৈপুণ্যে হ্যাটট্রিকের আনন্দে ভাসলেন করিম বেনজেমা। আর এতেই চেলসিকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের পথে এগিয়ে গেল লস ব্লাঙ্কোসরা। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে বুধবার রাতে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ৩-১ গোলে জিতেছে কার্লো আনচেলত্তির দল। বেনজেমার জোড়া গোলের পর প্রথমার্ধেই একটি শোধ করেন কাই হাভার্টজ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে তৃতীয় গোলটি করেন রিয়াল অধিনায়ক।
গত আসরে শেষ চারে এই দুই দলের দেখা হয়েছিল। সেবার ঘরের মাঠে ১-১ ড্রয়ের পর এই স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ২-০ গোলে হেরেছিল রিয়াল। পরে ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল চেলসি। শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে এবার ঘরের মাঠে হেরে বেশ বড় বিপদে পড়ে গেল টমাস টুখেলের দল।
রেকর্ড চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে শিরোপাধারীদের লড়াইয়ে শুরু থেকে গতিময় ফুটবলের দেখা মেলে। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মাঝে দশম মিনিটে ম্যাচের প্রথম নিশ্চিত সুযোগটি পায় রিয়াল। তবে ডি বক্সে ঢুকেও সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি ভিনিসিউস জুনিয়র।
ছয় মিনিট পর থিবো কোর্তোয়ার নৈপুণ্যে বেঁচে যায় রিয়াল। বাঁ দিক থেকে রিস জেমসের ফ্রি কিকে বল সামনের রক্ষণ দেয়ালকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যেই ছিল। ঝাঁপিয়ে কোনোমতে ঠেকিয়ে দেন সাবেক চেলসি গোলরক্ষক।
প্রচণ্ড বৃষ্টির মাঝে স্বাভাবিক ফুটবল খেলা কিছুটা মুশকিল হচ্ছিল। দুই দলের দুজনকে পিছলে পড়তেও দেখা যায়। তবে ভিনিসিউসের যেন কোনো সমস্যাই হচ্ছিল না, গতিতে বারবার ভীতি ছড়াচ্ছিলেন তিনি।
ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের গতির কাছেই ২১তম মিনিটে আরেক দফা পরাস্ত হয় চেলসির রক্ষণ। বেনজেমার সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকেই ক্রস বাড়ান ভিনিসিউস এবং হেডে দলকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন বেনজেমা।
এই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই দ্বিতীয় গোল হজম করে চেলসি। ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে দারুণ এক ক্রস বাড়ান লুকা মদ্রিচ। দুই ডিফেন্ডারের মাঝে ঠাণ্ডা মাথায় যেন বলে মাথা দিয়ে আলতো একটা ছোঁয়া দেন বেনজেমা। দূরের পোস্ট দিয়ে বল খুঁজে নেয় ঠিকানা।
তবে খেই হারায়নি চেলসি। আগের মতোই খেলতে থাকে আক্রমণাত্মক কৌশলে। ৪০তম মিনিটে তার সুফল মেলে। ডান দিক থেকে জর্জিনিয়োর ক্রসে বল বক্সে পেয়ে জোরাল হেডে ব্যবধান কমান হাভার্টজ।
প্রতিপক্ষের আক্রমণ ক্লিয়ার করতে নিজেদের ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট নেন কাসেমিরো। অপরপ্রান্তে নিজের সীমানা থেকে প্রায় ৩০ গজ এগিয়ে গিয়ে বুক দিয়ে বল নামান গোলরক্ষক মঁদি।
এ সময় বেনজেমাকে ছুটে আসতে দেখে বাঁ পাশে আন্টোনিও রুডিগারকে পাস দেন গত চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ও ২০২১ সালের ফিফা বর্ষসেরা গোলরক্ষক। তার দুর্বল পাস ধরেই শট নিতে পারতেন জার্মান ডিফেন্ডার; কিন্তু পারেননি তিনি। উপহার পেয়ে শট নেন বেনজেমা। বিনা বাধায় বল চলে যায় জালে।
লা লিগার গোলদাতার তালিকায় ২৪ গোল নিয়ে পরিষ্কার ব্যবধানে শীর্ষে থাকা বেনজেমার এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোল হলো ১১টি। মৌসুমে তার মোট গোল হলো ৩৭টি।
এরপর রিয়াল তাদের খেলার গতি কিছুটা কমিয়ে দেয়। সেই সুযোগে প্রবল চাপ বাড়ায় চেলসি। করতে থাকে একের পর এক আক্রমণ। ক্রিস্টিয়ান পুলিসিকের বদলি নামা রোমেলু লুকাকু ৬৯তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও হতাশ করেন। ছয় গজ বক্সের বাইরে থেকে অরক্ষিত স্ট্রাইকারের হেড পোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়।
পরের মিনিটে ভীতি ছড়ান ম্যাসন মাউন্ট। ২৫ গজ দূর থেকে ইংলিশ মিডফিল্ডারের বুলেট গতির শট ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে বাইরে যায়। খানিক পর তার আরেকটি নিচু শট ঝাঁপিয়ে ফেরান কোর্তোয়া। বাকি সময়েও টানা আক্রমণ করে গেছে চেলসি। সুযোগও তৈরি করেছে তারা; কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি একটিও।
পুরো ম্যাচে বল দখলের পাশাপাশি আক্রমণেও এগিয়ে স্বাগতিকরা। কিন্তু কার্যকর হতে পারেনি। তাদের ২০ শটের পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে। সেখানে আট শটের পাঁচটি লক্ষ্যে রেখে তিন গোল আদায় করে নেয় রিয়াল।
প্রিমিয়ার লিগে গত শনিবার ঘরের মাঠেই ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ১০ মিনিটে তিন গোল খেয়ে ৪-১ ব্যবধানে হেরেছিল চেলসি। গ্যালারি ভর্তি সমর্থকদের সামনে আবারও তারা পেল তেতো স্বাদ।
গত আসরে পাওয়া ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার কাজ এখনও অবশ্য শেষ হয়নি রিয়ালের। এই হারের ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর যথেষ্ট সামর্থ্যও আছে চেলসির। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আগামী মঙ্গলবার হবে লড়াইয়ের ফিরতি লেগ।