রোজা নষ্ট ও কাফফারা
Published : Friday, 8 April, 2022 at 12:00 AM
মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী ||
সিয়ামের দুটি দিক। শরিয়ত ও মারফত। সিয়ামের শরিয়তি দিকটি আলোচনা করেছেন ফকিহরা। আর মারফতি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সুফিরা। শরিয়তের দৃষ্টিতে রোজা রেখে ইচ্ছাকৃত পানাহার কিংবা যৌনাচার করলে রোজা ভেঙে যায়। একটি দীর্ঘ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘এক ব্যক্তি নবী (সা.)-কে বলল, ‘আমি রোজা অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছি’। রসুল (সা.) তাকে বললেন, ‘তুমি কাজা ও কাফফারা দুটিই আদায় করবে’। (বুখারি) আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যক্তি রোজা রেখে ইচ্ছাকৃত পানাহার করল। রসুল (সা.) বললেন, ‘তুমি কাফফারাস্বরূপ একটি গোলাম আজাদ করবে অথবা দুই মাস টানা রোজা রাখবে। এ দুটি যদি সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই ৬০ জন মিসকিনকে পেটভরে খাওয়াবে।’ (সুনানে দারাকুতনি)। এ দুই কারণে রোজা ভেঙে গেলে কাজা ও কাফফারা দুটোই আদায় করতে হবে। তবে রোজা অবস্থায় হায়েজ বা নেফাস শুরু হলে রোজা ভেঙে যাবে। পরে তা কাজা করতে হবে, কাফফারার প্রয়োজন নেই। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী (সা.) ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহার দিন নারীদের লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে নারীসমাজ! তোমরা ঋতুস্রাবের সময় রোজা রাখতে পারো না এবং নামাজও পড়তে পারো না। এটা তোমাদের ধর্মের অপূর্ণতা।’ (বুখারি)
ফকিহরা বলেন, কাফফারার ক্ষেত্রে ব্যক্তি যদি ৬০টি রোজা রাখতে চায় তাহলে একটি রোজার জন্য দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখতে হবে। কোনো কারণে ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে পুনরায় নতুন করে রোজা শুরু করতে হবে। তবে মহিলাদের প্রাকৃতিক কারণে ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে অসুবিধা নেই। ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.) বলেন, ‘যার ওপর কাফফারা হিসেবে দুই মাস ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখা জরুরি, সে যদি মাঝে অসুস্থ হওয়ার কারণে রোজা রাখতে না পারে তাহলে আবার নতুন করে রোজা শুরু করবে।’ (আলমুহাল্লা চতুর্থ খন্ড, ৩৩১ পৃষ্ঠা)
অজু বা গোসলের সময় রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভিতর পানি চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। তাই রোজা অবস্থায় অজু-গোসলের সময় নাকের নরম স্থানে পানি পৌঁছানো এবং গড়গড়াসহ কুলি করার প্রয়োজন নেই। লাকিত ইবনে সাবিরা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অজু কিংবা গোসলের সময় ভালোভাবে নাকে পানি দাও তবে রোজা অবস্থায় এটি কোরো না।’ (সুনানে আবু দাউদ) সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, ‘রোজা অবস্থায় কুলি করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভিতর পানি চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে এবং তা কাজা করতে হবে।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক) হানাফি ইমামদের মতে দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে যদি তা থুথুর সঙ্গে ভিতরে চলে যায় তবে রক্তের পরিমাণ থুথুর সমান বা বেশি হলে রোজা ভেঙে যাবে। (আলবাহরুর রায়েক দ্বিতীয় খন্ড, ২৭৩ পৃষ্ঠা) হানাফি আলেমরা আরও বলেন, মুখে বমি চলে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে। যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়। (দুররে মুখতার দ্বিতীয় খন্ড, ৪১৫ পৃষ্ঠা)
ভুলবশত খেলে বা সহবাস করলে রোজা ভাঙবে না। তবে স্মরণ হওয়া মাত্র এ থেকে বিরত না হলে রোজা ভেঙে যাবে। পরে কাজা আদায় করতে হবে।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি