স্বাস্থ্যের আজাদকে এখন ‘চেনেন না’ রিজেন্টের সাহেদ
Published : Friday, 8 April, 2022 at 12:00 AM
প্রতারণা আর জালিয়াতির কয়েক ডজন মামলার আসামি রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, সাতক্ষীরা থেকে তাকে আটক করা হয়নি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদকে তিনি চিনতেন না।
রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকার পরও করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে ‘সরকারি অর্থ আত্মসাতের’ অভিযোগে দুদকের করা মামলায় বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হলে এমন দাবি করেন তিনি।
ঢাকার ষষ্ঠ বিশেষ জজ আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালতে এদিন এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আসামিপক্ষ সময়ের আবেদন করায় বিচারক শুনানি পিছিয়ে ১২ মে নতুনে তারিখ রাখেন।
সাহেদকে এদিন কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। জামিনে থাকা বাকি পাঁচ আসামিও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
তারা হলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, সাবেক পরিচালক ডা. আমিনুল হাসান, উপ-পরিচালক ডা. মো. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক ডা. মো. শফিউর রহমান এবং গবেষণা কর্মকর্তা ডা. মো. দিদারুল ইসলাম।
সাহেদের পক্ষে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেছিলেন এদিন। শুনানি শেষে বিচারক তা খারিজ করে দেন।
শুনানির সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সাহেদ বলেন, “আমি আবুল কালাম আজাদ এবং অন্যদের চিনতাম না। আমাকে সাতক্ষীরা থেকে আটক করা হয়নি।”
বিচারককে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আমাকে জামিন দেন। আমার পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার ১৬ বছরের মেয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, আমার স্ত্রী বাড়ির বাইরে যেতে পারে না।
“আমার মেয়ের সহপাঠীরা তাকে চোরের মেয়ে বলায় সে আত্মহত্যার চেষ্টা করছিল। আমার বউকে সবাই চোরের বউ বলে ডাকে।”
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর কোভিড- ১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ২০২০ সালের ২১ মার্চ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তি হয়। ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তখনকার ডিজি আজাদসহ কয়েকজন সচিব উপস্থিত ছিলেন।
তিন মাস না যেতেই করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, সরকারের কাছে বিল দেওয়ার পর রোগীর কাছ থেকেও অর্থ নেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে রিজেন্টের বিরুদ্ধে। এরপর গত বছর ৭ ও ৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয় র্যাব।
তখন জানা যায়, চুক্তি হওয়ার বহু আগে ২০১৭ সালেই হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ওই হাসপাতালের অনুমোদন বাতিল করে স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একের পর এক কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ হতে থাকলে পদত্যাগপত্র দেন আজাদ।
তার আগে ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিনি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। এরপর প্রতারণা, অনিয়মের নানা অভিযোগ তখন সামনে আসতে থাকে তার বিরুদ্ধে।
নিজেকে ক্ষমতাধর হিসেবে জাহির করতে মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতাসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অনেকের সঙ্গে নিজের ছবি ফেইসবুকে সাজিয়ে রেখেছিলেন সাহেদ। সে সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কক্ষে আজাদের সঙ্গে তার আলাপচারিতার একটি ছবিও আলোচনায় আসে। আজাদও তখন দাবি করেছিলেন, সাহেদকে তিনি ‘সেভাবে চিনতেন না’।
রিজেন্ট হাসাতালের সঙ্গে চুক্তিতে অনিয়মের ঘটনায় ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টম্বর সাহেদসহ পাঁচজনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করে দুদক। এক বছর পর ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা পড়ে।
মামলায় আবুল কালাম আজাদের নাম না থাকলেও তদন্তে নাম আসায় অভিযোগপত্রে তাকে আসামি করা হয়।