স্টাফ
রিপোর্টার।।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে যে ৪১২ কোটি
৭৫ লাখ টাকার কাজের দরপত্র আহবান করা হয়েছে তা আপাতত স্থগিত রাখার আহবান
জানিয়েছেন কুমিল্লার নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ এবং নির্বাচনের সম্ভাব্য মেয়র
প্রার্থীরা। সেই নির্বাচনের সময় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ৪১২ কোটির
টাকার দরপত্র আহ্বান নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ
করেছেন। সরকারি উন্নয়ন কাজে এসব টেন্ডার হলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের
স্পর্শতকাতর সময়ে হঠাৎ করে এতো বিপুল পরিমাণ টাকার টেন্ডার কোনো স্বার্থ
হাসিলের উদ্দ্যেশ্যে হয়ে থাকতে বলে মন্তব্য করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
কেউ কেউ মনে করেন বিএনপির প্রার্থীকে সুবিধা দিতে পারে নির্বাচনের সময় এই
দরপত্র আহবান। তারা বলছেন, উন্নয়ন নয় ভোটের মাঠে এতো বিপুল অর্থ ব্যয় করতে
যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন যা বর্তমান পরিষদকে সুবিধা দেওয়া সামিল। এজন্য
বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এসব টেন্ডার কার্যক্রম শুরু করা জন্য
স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন
কেউ কেউ। একটি সূত্র বলছে, বিষয়টি ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও
সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপিকে জানানো হয়েছে। তিনি আশ্বস্থ করেছেন,
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান পরিষদের মেয়াদ শেষ হলেই এসব দরপত্র
আহবান করা হবে।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে থাকলেও
হঠাৎ করে ৪১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। এই ৪১২ কোটি
টাকার মধ্যে নগদ প্রাপ্ত ৭৫ কোটি টাকা খরচ করতে হবে এ বছরের জুন মাসের
মধ্যে অর্থাৎ তিন মাসের মধ্যে। ইতিমধ্যে ৪১টি প্যাকেজে এই ৪১২ কোটি টাকার
দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১টি প্যাকেজে ১৪২টি কবরস্থান ও ৪টি
শ্মশান উন্নয়নে সর্বোচ্চ ৫৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার টেন্ডার আহবান করা হয়েছে।
নির্বাচনের আগেই এ কাজ শেষ করা হতে পারে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত
গোমতী বাইপাস সড়ক নির্মাণে আবার ২০ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ভোটকে সামনে রেখে তরিঘড়ি এসব তৎপরতা ও এতো
ব্যয়ের উন্নয়ন কাজের যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে
জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদে সম্ভাব্য
প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কবিরুল ইসলাম শিকদার বলেন, আমি স্থানীয়
সরকার মন্ত্রী মহোদয়কে জানিয়েছি- নির্বাচনের সময় এই টেন্ডার আসলে দলের
ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এই টেন্ডার প্রক্রিয়া যেন আগামী মাসের ১৭ তারিখ
বর্তমান মেয়রের মেয়াদ শেষ হবার পর আহ্বান করা হয়। তিনি আমাকে আশ্বাস
দিয়েছে- তিনি সেটাই করবেন।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মেয়র
পদে সম্ভাব্য প্রার্থী ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রান ও সমাজকল্যান বিষয়ক
সম্পাদক নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, এই টেন্ডার বিএনপির প্রার্থীকে
সুযোগ করে দিবে। বিএনপির অজনপ্রিয় ও দুর্নীতিগ্রস্থ প্রার্থীকে সুযোগ করে
দিবে। স্বল্প সময়ে এই টেন্ডারটি কোন মতেই জরুরি কোন বিষয় নয়। বিশেষ কোন
উদ্দ্যেশ্য থেকেই এই বরাদ্দটি তাকে (বর্তমান মেয়র ও বিএনপির সম্ভাব্য
প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু) দেয়া হয়েছে এবং এটি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য
ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভোটের
সময় ৪১২ কোটির টাকার টেন্ডার সংক্রান্ত সংবাদটি ভাইরাল হয়েছে। ভোটের আগে
কুমিল্লার সব কবরস্থানের উন্নয়নের নামে সর্বোচ্চ ৫৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকার
টেন্ডার বাকা চোখে দেখছেন অনেকে। ফেসবুকে নানা মন্তব্য লিখে অনেকে পোস্ট
দিচ্ছেন।
সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী আনিসুর রহমান মিঠু তার ফেসবুকে
লিখেছেন, কুমিল্লা মহানগরের কবরস্থান ও শ্মশানে মাটি ভরাট ও সংস্কারের জন্য
৫৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন মাননীয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।
দেড়/দুই বছর আগে করা গোমতি বাইপাস সড়কে আবারো ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ!! এসব
কাজ কারা পাবেন কুমিল্লাবাসী তা আগে থেকেই জানে। নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি এ
টাকা খরচ করার উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। আগামী নির্বাচনে যে টাকা
আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যয় হবে নিশ্চিত। মাননীয় স্থানীয় সরকার
মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ এই অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধের ব্যবস্থা করুন। এতো কোটি
টাকার মাটি কবরস্থানে ফেললে মুদ্দাররা নিশ্বাস ফেলতে পারবেনা। নির্বাচনের
পর নতুন মেয়র সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে পরামর্শ করে নতুন পরিকল্পনা
নিয়ে ব্যয় করুক সরকারের এ মূল্যবান অনুদান।
তিনি বলেন, বিরুদ্ধতার চাবুক উঠাও প্রতিবাদী হাতে/ তোমার স্বদেশ লুট হয়ে যায় প্রতিদিন প্রতিরাতে-।
কুমিল্লার
বিশিষ্ট নাগরিক ও লেখক আহসানুল কবির বলেন, নির্বাচনের সময় তড়িঘড়ি করে এমন
টেন্ডার আহবান দূরভিসন্ধিমূলক বলে মনে হচ্ছে। সাধারণ নাগরিকদের মনেও এক
ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বরং জনগণের উন্নয়নের জন্য এসব বরাদ্দ কাজের সময় ও
সক্ষমতা বিবেচনা করে দেয়া যেতে পারতো। নতুন মেয়র নির্বাচনের পরÑযে ই আসুক
তিনি বুঝেশুনে এ কাজগুলো করালে আর কোনো প্রশ্ন উঠতো না।
আগামী ২০ জুন এর
মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। এপ্রিলের
২০ তারিখের দিকে ঘোষণা করা হতে পারে তফসিল। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, উন্নয়ন নয়
ভোটের মাঠে এতো বিপুল অর্থ ব্যয় করতে যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন যা বর্তমান
পরিষদকে সুবিধা দেওয়া সামিল। এতে কুমিল্লার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের চেয়ে
অর্থ লোপাটের তালিকা দীর্ঘ হবে।
এই সব টেন্ডারের সবগুলোই ২৫ এপ্রিল থেকে
২৮ এপ্রিলের মধ্যে দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। একনেকে অনুমোদনকৃত ৩০জুন
২০২৩ সালের মধ্যে এই ৪১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার কাজ শেষ করতে হবে। আর এর মধ্যে
নগদ পাওয়া ৭৫ কোটি টাকার কাজ শেষ করতে হবে এই তিন মাসের মধ্যে।