দাম্পত্য জীবনে রোজা ও রমজানের প্রভাব
Published : Saturday, 9 April, 2022 at 12:00 AM
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ ||
রোজা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস বর্জন রোজার অন্যতম অনুসঙ্গ। তবে রাতের বেলা-যখন রোজা থাকে না, তখন স্ত্রী সহবাস বৈধ। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘রোজার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে...। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)
কিন্তু রমজানে দিনের বেলা-রোজা রাখা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস কঠিনভাবে নিষিদ্ধ।
কারো মাধ্যমে তা সংঘটিত হলে রোজার কাজা ও কাফফারা দিতে হবে। রমজানের রোজার কাফফারা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর কাছে এসে বলল, এই হতভাগা রমজানে স্ত্রী সহবাস করেছে। তিনি বলেন, তুমি কি একটি গোলাম আজাদ করতে পারবে? লোকটি বলল, না। তিনি বলেন, তুমি কি ক্রমাগত দুই মাস সিয়াম পালন করতে পারবে? লোকটি বলল, না। তিনি বলেন, তুমি কি ৬০ জন মিসকিন খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না...। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৯৩৭)
এই হাদিস থেকে জানা যায়, রমজানের রোজা ইচ্ছাকৃতভাবে ভাঙার কাফফারা হলো, লাগাতার ৬০ দিন রোজা রাখা অথবা ৬০ জন মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো।
যে নারীর ওপর রোজা ফরজ, ওই নারী সম্মত হয়ে রমজানের দিনে স্বামী-সঙ্গম করলে তার ওপরও কাফফারা ওয়াজিব। অবশ্য তার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও স্বামী যদি তার সঙ্গে জোরপূর্বক সহবাস করতে চায়, তাহলে তার জন্য যথাসাধ্য তা প্রতিহত করা জরুরি। রুখতে না পারলে তার ওপর কাফফারা ওয়াজিব নয়।
তবে রোজা অবস্থায় শর্ত সাপেক্ষে স্ত্রীকে চুম্বন করা বৈধ। শর্ত হলো, স্বামী-স্ত্রী মিলনে ধৈর্য রাখতে পারা অর্থাৎ সঙ্গম বা বীর্যপাত ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলে তাদের জন্য চুম্বন বা কোলাকুলি করা বৈধ। কারণ মহানবী (সা.) রোজা রাখা অবস্থায় স্ত্রী-চুম্বন করতেন এবং রোজা অবস্থায় প্রেমকেলিও করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) রোজা অবস্থায় চুমু খেতেন এবং গায়ে গা রাখতেন। তবে তিনি তাঁর প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে তোমাদের চেয়ে বেশি সক্ষম ছিলেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৯২৭)
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, একবার আমি কামোদ্দীপ্ত হয়ে রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে চুমা দিলাম। এরপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি আজ এক গুরুতর কাজ করে ফেলেছি, আমি রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে চুমু দিয়েছি। তিনি বলেন, তুমি পানি দিয়ে কুলি করলে কী হতো? আমি (উমর) বললাম, তাতে কোনো ক্ষতি হতো না। আমি বলি, তাতে অসুবিধা নেই। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৮৫)
পক্ষান্তরে রোজাদার যদি আশঙ্কা করে যে চুম্বনের ফলে তার বীর্যপাত ঘটে যেতে পারে অথবা (স্বামী-স্ত্রী) উভয়ের উত্তেজনার ফলে সহসায় মিলন ঘটে যেতে পারে, তাহলে ওই কাজ তাদের জন্য হারাম। আর তা হারাম এই জন্য যে যাতে পাপের ছিদ্রপথ বন্ধ থাকে এবং তাদের রোজা নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধ ও যুবকের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই; যদি উভয়ের কামশক্তি এক পর্যায়ের হয়।