ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
সেতু না থাকায় ভোগান্তিতে তিন উপজেলার মানুষ
রাতে কেউ অসুস্থ হলে ৮ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয় হাসপাতালে
Published : Saturday, 9 April, 2022 at 12:00 AM, Update: 09.04.2022 12:50:06 AM

সেতু না থাকায় ভোগান্তিতে তিন উপজেলার মানুষনিজস্ব প্রতিবেদক: ওপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ বাজার, এপারে একই জেলার নবীনগর উপজেলা ও কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার শতাধিক গ্রাম। মাঝখানে তিতাস নদী। প্রতিদিন অন্তত ৬ হাজার মানুষকে এই নদী পাড়ি দিয়েই চলাচল করতে হয়। নদীর এই জায়গাটিতে একটি সেতু নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও সুফল পায়নি। তাই যুগের পর যুগ ধরে বাধ্য হয়েই খেয়ানৌকায় করে মানুষ নদী পারাপার করতে হচ্ছে। বিশেষ করে কেউ যদি রাতের বেলা অসুস্থ হয় তাহলে তাকে ৮কিলোমিটার ঘুরে হাসপাতালে নিতে হয়। কারণ তখন খেয়াঘাটে নৌকা থাকে না। এমনও হয়েছে খেয়া ভাড়া দেয়ার অভাবে অনেক বাচ্চা স্কুলে নিয়মিত যায় না।  
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ২৯টি নৌকার মাধ্যমে মুরাদনগর ও নবীনগর উপজেলার মানুষ তিতাস নদী পাড়ি দিয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ বাজার আসছে। অপরদিকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার লোকজনও খেয়াঘাট দিয়ে মুরাদনগর উপজেলার পিপড়িয়াকান্দা বাজার ও নবীনগর উপজেলার দুবাচাইল, বাজিবিসারা আসছে। চলাচলকারী লোকজনের মধ্যে স্কুল-কলেজের অন্তত এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।
নবীনগর উপজেলা ও মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফরদাবাদ বাজার আশপাশের শতাধিক গ্রাম মুরাদনগর ও নবীনগর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও, এসব গ্রাম তাদের উপজেলা সদর থেকে অন্তত ২০কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাই এসব গ্রামের মানুষ নদীর ঠিক ওপারে অবস্থিত বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদ বাজারেই বাজার-সওদা থেকে শুরু করে শিক্ষা-চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকে। এসব মানুষের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে ফরদাবাদ বাজারে। এ দুই উপজেলার মানুষকে প্রতিদিনই ব্যবসা-চিকিৎসা-শিক্ষাসহ নানা কাজে ও আত্মীয়তার সূত্রে ফরদাবাদ বাজারে আসতে হয়। এ অবস্থায় একটি সেতুর অভাবে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ইকবাল বাহার বলেন, এই একটি সেতুর জন্য তিনটি উপজেলার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। কয়েক বছর আগে এই নদীতে সেতু হয়েছে; তবে সেটি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ভিতরেই। তাতে এই দুই উপজেলার তেমন কোন কাজে আসেনি। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি এখানে সেতুটি খুব জরুরি।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য দবির আহম্মেদ বলেন, আশপাশে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় দুই উপজেলার প্রায় ৯টি গ্রামের বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ফরদাবাদই একমাত্র ভরসা। কারণ এপারে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা কোনটাই নেই।
মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল উপজেলার ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আহম্মেদ বলেন, ‘একটি সেতুর জন্য ভুক্তভোগী মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই মানববন্ধন, সমাবেশসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। কিন্তু সেতু নির্মাণে কার্যকর কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ছে না। এ অবস্থায় তিনটি উপজেলার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ সেতুর অভাবে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দাবি জানাতে-জানাতে এখন সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছে।’
মুরাদনগর উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর কবির সেতুটি নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এ সেতু নির্মাণ হলে তিনটি উপজেলার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে। তবে নদীর অধিকাংশ জায়গা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর ও নবীনগর উপজেলার। একমাত্র তারাই পারে এখানে সেতুর ব্যবস্থা করতে।