ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
রোজা, অটোফেজি, সুস্থতা ও ঈমান
Published : Monday, 11 April, 2022 at 12:00 AM, Update: 11.04.2022 12:46:47 AM
রোজা, অটোফেজি, সুস্থতা ও ঈমানহাফেজ মাও: মুফতী মোহাম্মদ ইব্রাহীম ক্বাদেরী ||
রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় আর আমলের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্তম্ভ। আমরা জানি আরবী মাসের ৯ম মাস মাহে রামাদ্বান। এই মাসেই মুসলমানগণ রোজা পালনের আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকেন। রোজা হল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সাহরী খেয়ে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকা। এই বিরত থাকা যদিও বাহ্যিকভাবে কিছুটা কষ্টকর হলেও এর মাধ্যমে আমরা প্রধান দুটি নেয়ামত ও উপকার পেয়ে থাকি। ০১. শারীরিক সুস্থতা এবং ০২. ঈমানের উৎকর্যতা বা বৃদ্ধি।
শারীরিক সুস্থতার বেলায় রোজার বিকল্প নেই। আমরা খেয়াল করলে দেখতে পাব একমাত্র রোজার মাসেই হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম এবং সুস্থও থাকে বেশি আলহামদুলিল্লাহ। এছাড়াও আমাদের নূর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রোজা ছাড়াও অধিকাংশ সময়ই ক্ষুদার্থ (নাম মাত্র খাওয়া-দাওয়া) থাকতেন এমনকি উনি সময় সময় একাধারে রোজা রাখতেন যেটাকে শরিয়তের ও হাদিসের ভাষায় ‘সাওমে ভিসাল’ বলা হয়।
আবার চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এর উপকারিতা প্রমাণিত। আমাদের সবারই জানা আছে যে, চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জাপানের একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী যার নাম ‘ইয়োশিনোরী ওহশোমী’। যে গবেষণাকে কেন্দ্র করে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তার মূলে ছিল এই রোজা। জীবদেহ কিভাবে ত্রুটিপূর্ণ কোষ সমূহ ধ্বংস করে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং কোষ কিভাবে নিজের দেহের আবর্জনা প্রক্রিয়াজাত করে সুস্থ রাখে সেই রহস্য বের করার কারণে নোবেল পুরস্কার পান এই বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘অটোফেজি’। অনেক গবেষণার পর দেখা গেল যে, মানুষ ক্ষুদার্থ থাকা অবস্থায় নতুন কোষ সৃষ্টি হয় যে নতুন কোষগুলো ত্রুটিপূর্ণ কোষগুলোকে ধ্বংস করে খেয়ে ফেলে এবং মানুষের শরীরে শক্তিমত্তার সঞ্চার ঘটায় আর এভাবেই আমরা সুস্থতা বেশি লাভ করি। এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত লিখার ছিল লিখার সংক্ষিপ্ততার কারণে আজ এ পর্যন্তই।
এবার আসা যাক ঈমান বৃদ্ধির ব্যাপারে। এটাতো স্পষ্ট যে, রোজার মাসে মুসলমান যে পরিমাণে ইবাদত বন্দেগি ও দান সদকা করে থাকে অন্য মাসে তা চোখে পড়েনা। আর এটা করে থাকে মহান আল্লাহর ভালবাসা ও ঈমানী চেতনায় বলিয়ান হয়ে যা ঈমান বৃদ্ধির নিদর্শনও বটে। আবার রোজার মাসের ছাওয়াবের ঘোষণাও অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক। এই মাসের একটি নফল অন্য মাসের একটি ফরজ আমলের ও একটি ফরজ অন্য মাসের ৭০টি ফরজের সমমান। তাইতো মুসলমান হুমড়ি খেয়ে পড়ে এবং লিপ্ত হয়ে যায় ইবাদতে সুযোগকে কাজে লাগাতে। রাসুল করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানি বলে বলিয়ান হয়ে রামাদ্বান মাসে রোজা রাখল তার পিছনের সমস্ত গুনাহ মহান আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।’ আর মহান আল্লাহ হাদিসে কুদসীতে ঘোষণা করেন- রোজা আমার আর আমি আল্লাহ নিজে এর প্রতিদান দিব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমিন।
লেখক: ইমাম ও খতিব, কান্দিরপাড় জামে মসজিদ, ও কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, কুমিল্লা