ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
লিবিয়ায় ‘মাফিয়াদের’ হাতে বন্দি ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরা শাহিনুর
দালালদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবি
Published : Wednesday, 13 April, 2022 at 12:00 AM, Update: 13.04.2022 12:58:47 AM
 দালালদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবিশাহীন আলম, দেবিদ্বার ।
সন্তানকে উদ্ধার করার কথা বলে দালাল চক্র আমার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে কয়েক দফায় প্রায় ২০লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আমি দালালদের শাস্তি চাই, আমি বাড়ির অংশ ও গবাদি পশু বিক্রি করে টাকা দিয়েছি এখন আমার সম্বল বলতে কিছুই নেই, আমি নিঃস্ব হয়ে গিছি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ইয়াকুব হাসানের মা শাহীনুর বেগম  আরও বলেন, আমি লিবিয়া যাওয়ার পর প্রথমে আমি  ছেলেকে খোঁজার জন্য সাগড়ের পাড়ে ছুটে যাই, সাগরের পানিতে শুধু লাশের গন্ধ, হাড়ের বিভিন্ন অংশ সাগরে ভাসতে দেখে হৃদয় চুরমার যায়, আর মনে নানা চিন্তা না  জানি আমার সোনার মানিক কোথায়  আছে ! আমার স্বামী লিবিয়ায় আগে থেকেই রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন, তিনিও আমার সাথে যেতেন, আমরা সাগরের দিকে তাকিয়ে ছেলের জন্য অপেক্ষা করতাম।  আমি আমার স্বামীকে না জানিয়েই কয়েকবার সাগরের পাড়ে চলে এসেছি, না জানি আমার ইয়াকুব মা বলে ডাকল ! সে মা ডাক শোনার জন্য ছুটে যেতাম।   
তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ছেলেকে জীবিত পাবো না কত জনই বলেছিলেন, কিন্তু আমি তো মা, আমার মন বলছে আমার ছেলে এখনও বেঁচে আছে আমাকে মা মা বলে ডাকছে, পানি পানি বলে কাঁদছে, আমি এ কারণে আমার ছেলের জন্য লিবিয়া ছুটে গিয়েছি। আমি লেখাপড়া জানি না, নিজে নিজে পাসপোর্ট করেছি, ভিসা করেছি, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি আমার ফ্লাইট ছিলো আমি একাই ছেলের খোঁজে বের হয়েছি। ওখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আমার ছেলের বিষয়টি খুলে বলেছি, তারা আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমি দালালদের চিহ্নিতকরে তাদের শাস্তি চাই, আমার সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।     
বন্দিশালা থেকে ফেরত ইয়াকুব হাসান বলেন, দালালরা কয়েক দফায় আমাদের কাছ ২০ লক্ষ টাকা নিয়েছে। এর মধ্যে তানজিম চার লক্ষ, জাহাঙ্গীর ৬ লক্ষ, শামীম (দিনাজপুর) চার লক্ষ, অন্য আরেকজন নিয়েছে ২ লক্ষ  সে ইতালি চলে গেছে, আরও কয়েকজন নিয়েছে আমি তাদের জানিনা। লিবিয়ার মাফিয়ারা বন্দিশালায় অমানুষিক নির্যাতনের বিষয়ে ইয়াকুব হাসান বলেন, ভাষা প্রকাশ করতে পারব না, চোখের সামনে পানির জন্য ছটফট করে মরতে দেখিছি, এক রুমে প্রায় ৩০০ জনকে রাখা হয়েছে, এদের মধ্যে প্রায় ৩০/৩৫জন মারা গেছে। আমি একাধিক সময় লাশের সাথে ঘুমিয়েছি, বন্দি থাকা অবস্থায় তাঁরা ৪/৫ দিন পর পর তালা খুলে ভিতরে আসত এসে দেখত ৫/৬ জন মারা গেছে পরে এই মৃত লাশগুলো তারা টেনে হেচরে নিয়ে বালুর মধ্যেই চাপা মেরে দিত। বন্দিশালায় আটকদের শরীর থেকে পচা পুঁজ পড়ত, একজন অপরজনের গায়ের র্দুগন্ধে বমি করে দিত, পানি পানি বলে চিৎকার আর্তনাদ করত, কি বাঁচার আকুতি ছিলো তাদের। বন্দিশালায় ভয়ানক ৬ মাস আমার কেটেছে। আমাদের নির্যাতন করার জন্য ৭ জন বাঙালী রাখা হয়েছে, তারা আমাদের ওপর অমানষিক নির্যাতন চালাত, নিযার্তন করতে পারলে তারা মাফিয়াদের কাছে ভালো থাকত, তাদেরকে বলেছি, ভাই আমরাও বাঙালী আপনারাও বাঙালী আমাদের কেন এত মারেন, তাঁরা বলত, এখানে কোন বাঙালী নাই, যার যার জীবন আগে বাচা, বলেই গালি দিয়ে মারধোর চালাত। আমি বন্দিবস্থায় জাহান্নামের চিত্র দেখে এসেছি। তিনি তার গাঁয়ের শার্ট খুলে ক্ষত চিহ্নগুলো দেখিয়ে বলেন এগুলো পোকা মাকড়ের দাগ, এ বড় বড় দাগগুলো নির্যাতনের। আমি দালালদের শাস্তি চাই এবং আমার ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।