২০০৪
সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে হামলার শিকার
হন হুমায়ুন আজাদ। তাঁকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।
হামলার পর হুমায়ুন আজাদ ২২ দিন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং ৪৮ দিন
ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে জার্মানির মিউনিখে
চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই বছরের ১২ আগস্ট তিনি মারা যান।
হামলার পরদিন
হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের
করেন। আদালতের আদেশে অধিকতর তদন্তের পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। ১৮
বছর পর সেই মামলার রায় হয়েছে গত বুধবার। রায়ে চার জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডাদেশ
দিয়েছেন আদালত। চারজনই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন
বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য।
ভাষাবিজ্ঞানী, বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ
তাঁর লেখার কারণেই প্রতিক্রিয়াশীল ও স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর চক্ষুশূল হয়ে
উঠেছিলেন। দেশে লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট, মুক্তমনা মানুষের ওপর বিগত
বছরগুলোতে যে ধারাবাহিক জঙ্গিবাদী হামলার ঘটনা বাংলাদেশ দেখেছে, তার সূচনা
হয়েছিল হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে।
পল্টন ময়দানে সিপিবির
সমাবেশে, রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে, ময়মনসিংহে সিনেমা হল এবং আরো কিছু
জায়গায় আত্মঘাতী বোমা হামলার মধ্য দিয়ে দেশে জঙ্গিবাদের চর্চা দৃশ্যমান
হয়েছিল। জঙ্গিরা সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটায় ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট একযোগে ৬৩
জেলায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে। এরপর কিছুদিন তাদের কর্মকাণ্ড স্তিমিত ছিল।
আবার তারা সক্রিয় হয় ২০১৩ সালে, একটু ভিন্নভাবে। ব্যক্তিবিশেষকে টার্গেট
করে চাপাতি হামলা চালাতে শুরু করে তারা। ২০১৬ সালে রাজধানীর গুলশানে হলি
আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হন।
অনেক
দেরিতে রায় হলেও এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তা দ্রুত কার্যকরের দাবি
জানিয়েছেন লেখক, শিক্ষক, সহকর্মী, প্রকাশক ও শিক্ষাবিদরা। তাঁরা বলছেন, এখন
যে রায় হয়েছে, যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সেটা যাতে দ্রুত কার্যকর করা হয়। এ
রায়ে যারা ধর্মান্ধ, জঙ্গিবাদী, তাদের যদি শিক্ষা হয়, তাহলেই এ রায় ঘোষণার
সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। যথাসময়ে রায় হলে অনেক হত্যাকাণ্ড ‘ঠেকানো যেত’ বলে মনে
করেন লেখক, শিক্ষক, সহকর্মী, প্রকাশক ও শিক্ষাবিদরা।
জঙ্গিবাদী তৎপরতায়
এ দেশে প্রথম পর্যায়ের লেখক হুমায়ুন আজাদ আক্রান্ত হন। অনেক দেরিতে হলেও
রায় হয়েছে—এটাকে দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। তাঁরা বলছেন, এর
মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে। কয়েক বছর ধরে
বেশ কিছু মামলার বিচার ও রায় হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আইনের শাসন
যখন দুর্বল হয়ে পড়ে তখন সমাজে অপরাধ বেড়ে যায়, অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
আর তাই নিম্ন আদালতের রায়ের পর উচ্চ আদালতে প্রক্রিয়া শেষ হতে যেন দীর্ঘ
সময় না লাগে।