এবিএম আতিকুর রহমান বাশার:
কুমিল্লার
দেবীদ্বারে এক মসজিদের ইমামকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগে ইউপি
সদস্যসহ তিনজনের বিচার দাবীতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, ও প্রতিবাদ সভা করেছেন
স্থানীয়রা। রবিবার বেলা ১১টায় ধামতী দক্ষিণ পাড়া সড়কে শত শত নারী-পুরুষের
উপস্থিতিতে ওই মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ চলাকালে
উপজেলার ধামতী দক্ষিণখাড় ‘আল মদিনা জামে মসজিদের’ ইমাম আল-আমিনকে মিথ্যে
অপবাদ দিয়ে থানা হাজতে রেখে অপমান ও আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার অভিযোগে ইউপি
মেম্বার ইব্রাহীমসহ ৩জনের বিচারর দাবী জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নিহতের মামা
মোঃ খলিলুর রহমান, নিহতের মা’ সালেহা বেগম, ভাই আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী
লীগ নেতা আবুল হোসেন, ধামতী হাবিবুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ শের এ
আলী, নিহতের সহপাঠি হাফেজ মাওলানা মোঃ খোরশেদ আলম, ধামতী ইউনিয়ন ছাত্র লীগ
সভাপতি আবু জায়েদ চৌধূরী জুয়েল প্রমূখ।
মানববন্ধনে এসে নিহতের মা
বক্তব্য দেয়ার সময় বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আর বলেন, এতিম খানায় রেখে
ছেলেকে হাফেজ বানিয়েছিলাম, মানুষের মতো মানুষ করেছিলাম। আমার এমন আলোকিত
সন্তানকে ঘাতকরা মিথ্যে অপবাদ দিয়ে হত্যা করল, আমি ইব্রাহিম মেম্বার ও তার
সহযোগীদের ফাঁসী চাই।
নিহতের ভাই নাজমুল হাসান জানান, আমার ভাই কোরআনে
হাফেজ। সে ১০ বছর যাবৎ ধামতী দক্ষিণখাড় আল-মদিনা জামে মসজিদে ইমামতি করে
আসছিলেন। গত ৭ এপ্রিল স্থানীয় ধামতী ইউপি’র ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ
ইব্রাহীম খলিলসহ কয়েকজন লোক আমার ভাইকে মসজিদ থেকে ডেকে এনে মিথ্যে অপবাদ
দিয়ে কয়েকশত মানুষের সামনে অপমান ও গনপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
থানাপুলিশ ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে কিছু কাগজে সই রেখে একদির পর তাকে ছেড়ে
দেয়। মিথ্যে অপবাদ সইতে না পেড়ে রাগে ক্ষোভে ওই রাতেই নিজ ঘরের তীরের সাথে
রশি পেঁচিয়ে ভাইটি আত্মহত্যা করে। পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গড়িমসি করে সকাল
১১টায় এসে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমেক হাসপাতালে প্রেরন করে। পরে মামলা
নিতেও গড়িমসি করে। থানায় মামলা না নেয়ায় আদালতে মামলা দায়ের করি।
মামলার
বাদী মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, এলাকাবাসী হাফেজ আল- আমিন হত্যার প্রতিবাদে
মানবন্ধন, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ করবে তাতেও ঘাতক ইব্রাহীম মেম্বার ও
তার সন্ত্রাসী বাহিনী এবং পুলিশের হুমকী ছিল। বিক্ষুবদ্ধ জনতা হুমকী মাথায়
নিয়েই কর্মসূচী পালন করে। মামলা দায়েরের পূর্বে বিষয়টি নিয়ে ধামতী ইউপি
কার্যালয়ে চেয়ারম্যান মোঃ মহিউদ্দিন মিঠুর কাছে যাই। মিঠু আমদের কথা শোনা
থাক দূরের কথা আমাদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে তাড়িয়ে দেয়।
বুধবার
দুপুরে ওই ইমামের মামা মোঃ খলিলুর রহমান বাদী হয়ে কুমিল্লার বিজ্ঞ সিনিয়র
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নং আমলী আদালতে ওই মামলা দায়ের করেন। মামলা নং
১৬০/২২।
এজাহার সূত্রে জানাযায়, আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলার তিন আসামী
হলেন ধামতী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ধামতী দক্ষিন খাঁর দরবার
বাড়ির মৃত আবদুর রহিমের ছেলে মো. ইব্রাহীম মেম্বার (৪৮), একই এলাকার শেখ
বাড়ির নুরুল ইসলামের ছেলে কামাল হোসেন (৪৭) ও মো. অলি উল্লাহ'র ছেলে মো.
মনির (২৫)। ইব্রাহীম মেম্বার নিহত হাফেজ আল আমিন যে বাড়িতে প্রাইভেট পড়াত,
সে বাড়ির প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়া ছিল, একাধিকবার অনৈতিক কাজে আটক
হলেও হাফেজ আল আমিন তাকে সতর্ক করেছিল। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আল আমিনকে
মিথ্যে অপবাদ ও পুলিশি হয়রানী করে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছে।
গত ৯
এপ্রিল শনিবার মধ্য রাতের দিকে উপজেলার ধামতী দক্ষিন পাড়ার নিজ বাড়ি থেকে
আল মদিনা জামে মসজিদের ইমাম আল-আমিনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে
উদ্ধার করে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত
চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি কুমিল্লা মেডিকেল
কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
অভিযুক্ত ধামতী ইউপি’র ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ
ইব্রাহীম খলিলুর রহমান বলেন, হাফেজ আল আমিনের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকান্ডের
অভিযোগ আছে। সে যে বাড়িতে পড়াত সেই বাড়ির এক ছাত্রের সাথে বলৎকারের ঘটনার
অভিযোগে তাকে শাসিয়েছি। সে ওই ছেলেকে ফাঁসাতে তাদের ঘরে আগুন লাগাতে
একাধিকবার পেট্রোল, কেরসিন, দিয়াশলাই বাক্স নিয়ে চেষ্টা করেছে, ওই ছাত্রকে
ফাঁসাতে তার ছবিও ঘরের সামনে ফেলে আসত। ওই ঘটনায় জনগন তাকে আট করে গনপিটুনি
দিলে তাকে পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করি। এখন উল্টো আমার উপর দোষ চাপানোই
নয়, নানা অপপ্রচারও চালানো হচ্ছে।
এ ব্যপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার
ইনচার্জ মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, নিহতের বড় ভাই নাজমুল হাসান থানায় এসে
অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন, মামলা নং- ২১/ তারিখ- ০৯/০৪/২০২২ইং।
ভিক্টিমকে পুলিশি হয়রানী করা হয়েছে এটা সত্য নয়।