জহির
শান্ত: ফের মাদকের আগ্রাসন বেড়েছে কুমিল্লায়। ভারত সীমান্তবর্তী এ জেলার
১০৫ কিলোমিটার সীমান্তের অন্তত শতাধিক ‘স্পট’ দিয়ে মাদক প্রবেশ করছে
বাংলাদেশে। এছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়েও কক্সবাজার হয়ে মায়ানমার
থেকে আসছে ইয়াবার বড় বড় চালান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে প্রতিদিনই মাদক
ব্যবসায়ী আটক এবং মাদকদ্রব্য জব্দ হলেও আগ্রাসনের তুলনায় তা একেবারেই
অপ্রতুল। ফলে একদিকে সীমান্তে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়েছে; অন্যদিকে তৎপরতা
বেড়েছে মাদকের কারবারীদের। শুধু মাদক নয়; সীমান্তের এসব স্পট দিয়ে আসে
চোরাই পণ্যও।
জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত
মার্চ মাসে জেলায় মোট ৪৬৩ টি মামলা হয়েছে তার মধ্যে ২৭৫টি মামলাই মাদক
দ্রব্য সংক্রান্ত। চোরাচালান মামলা হয়েছে ১২টি। এছাড়াও একই সময়ে
র্যাব-বিজিবি-পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রায় ৫ কোটি টাকার
মাদক ও চোরাইপণ্য জব্দ করেছে। আর চলতি মাসের প্রথম পনেরো দিনের প্রতিদিনই
জেলার কোনো না কোনো এলাকা থেকে মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ী আটকের খবর
পাওয়া গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ছোটখাটো মাদক ব্যবসায়ী কিংবা
মাদকের কেরিয়ার (বাহক) আটক হলেও বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান মাদকের
গডফাদাররা। ফলে বড় কোনো অভিযানের পর কিছুদিন রাখঢাক থাকলেও অল্প ক’দিন
বাদেই আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেন তারা, ফের বেড়ে যায় মাদকের আগ্রাসন;
বিপথগামী হয়ে পড়ে যুবসমাজ।
সীমান্তে মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা ও
মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় সর্বশেষ ঘটে যাওয়া দুই
আলোচিত ঘটনায়। গত ৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার
সুয়াগাজী-লালবাগ এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে
র্যাবের। এতে গুলিবিদ্ধ হন এক র্যাব সদস্য এবং তিন মাদক ব্যবসায়ী। পরে এ
ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে গত ১৩ এপ্রিল
(বুধবার) রাতে। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় পাচোরা এলাকার হায়দ্রাবাদ নগর
সীমান্তে মাদক ব্যবসায়ীদের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাইম।
দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে খুনোখুনির এ বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা হয় ওপাড় বাংলায়ও।
ইতোমধ্যে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সচেতন
মহল বলছে, মাদকের আগ্রাসন কতোটা বেড়েছে কিংবা সীমান্তে মাদক কারবারীদের
তৎপরতা কতোটা বেড়েছে- সর্বশেষ ঘটে যাওয়া দু’টো ঘটনা-ই এর বড় প্রমাণ। খুন
কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা যেনো মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে ‘ইজি’ বিষয়
হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে যেমন উদ্বেগ-আশঙ্কার; তেমনি তা
ভাবিয়ে তুলছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও।
সাম্প্রতিক
সময়ে কুমিল্লায় মাদকের আগ্রাসন বেড়ে যাওয়ার বিষয়টির সাথে একমত পোষণ করে
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ বলেন, প্রতিদিনই
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার ও মাদকদ্রব্য
উদ্ধার হচ্ছে। পুরো কুমিল্লাজুড়ে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত
আছে। মাদক প্রতিরোধে পুলিশের পাশাপাশি সামাজিকভাবেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে
হবে। অভিভাবকদেরও সন্তানদের প্রতি নজর রাখতে হবে। তারা কোথায় যাচ্ছে, কি
করছে তা খেয়াল রাখতে হবে। সামাজিক সচেতনতা বাড়লে মাদকের আগ্রাসন কিছুটা
হলেও কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
কুমিল্লার সীমান্তবর্তী বুড়িচং
উপজেলার বাকশিমুল ইউনিয়নের আনন্দপুর এলাকার স্থানীয় মেম্বার লিটন রেজা
বলেন, সীমান্তে দিন দিন মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বেড়েই চলেছে। এছাড়া
আনাগোনা বেড়েছে মাদকসেবীদেরও। প্রতিদিনই শহর থেকে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে
মাদক সেবন করতে এদিকে আসছে তরুণরা। তাদের কেউ কেউ ১০০-২০০ টাকার বিনিময়ে
সীমান্ত টপকে ভারতেও প্রবেশ করে মাদক সেবন করে আসছে। তাদের এ প্রবণতা রুখতে
হবে। মাদক ব্যবসায়ীদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা
হলে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, মাদক নির্মূলে কুমিল্লায়
পুলিশর অভিযান অব্যাহত আছে, তা আরো জোরালো করা হবে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ
জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছে। মাদক সংশ্লিষ্ট কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।