Published : Thursday, 21 April, 2022 at 12:00 AM, Update: 21.04.2022 1:24:18 AM
রণবীর ঘোষ কিংকর: মঙ্গলবার দুপুর ২টা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে হাজির দুই শিশু। কাজে মগ্ন ইউএনও’র টেবিলের পাশে খানিকটা দাঁড়িয়ে থাকার পর মুখ তুলে তাকান ইউএনও। প্রশ্ন করলেন কে তোমরা, কি চাও? উত্তরে বললো- ‘স্যার, ঈদের জামা লাগবো’। এমন ভাবেই উত্তর দিল যেন, পরিবারের কাছেই আবদার করছেন তারা।
বিস্তারিত জানলেন ইউএন, শিশু স্মৃতির বাবা পেশায় রিক্সা চালাতো। দ্বিতীয় বিয়ে করে এখন আর তাদের খোঁজ নেয় না। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। আর স্মৃতি মহারং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। স্কুলের ক্লাসে অনিয়মিত থেকে ভবঘুরের মত এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। সামনে ঈদ সবাই যখন নতুন জামা-কাপড় কেনায় মগ্ন তখন স্মৃতিও নতুন জামার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ইউএনও’র কাছে হাজির। স্মৃতি’র সাথে রয়েছে তার চাচাতো বোন সুবর্ণা (১০)।
সব কিছু শুনে অফিস সহকারি হুমায়ূনকে ডেকে আনলেন ইউএনও মো. জিয়াউল হক মীর। বললেন আগামীদিন সকালে তাদেরকে নিয়ে দোকানে গিয়ে কিনে আনতে হবে নতুন জামা। পরদিন সকাল ১০টায় স্মৃতি ও সুবর্ণাকে উপজেলায় আসতে বললেন ইউএনও।
পরদিন বুধবার (২০ এপ্রিল) যথা সময়ে আসেনি তারা। খোঁজ নিতে থাকেন ইউএনও। কেন আসলো না শিশু দুইটি। অফিস সহকারি হুমায়ূন কবিরও খোঁজ নিতে থাকেন বিভিন্ন স্থানে। দুপুর ১২টার কিছু পর অনেকটা সাজু-গুজু করে ইউএনও অফিসে আসে তারা। পরে ইউএনও’র নির্দেশে তাদেরকে বাজারে নিয়ে তাদের পছন্দমত স্মৃতির জন্য থ্রি-পিছ ও সুবর্ণার জন্য ফ্রগ কিনে আনেন অফিস সহকারি হুমায়ূন কবির।
পরে উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী’র উপস্থিতিতে সুবিধা বঞ্চিত শিশু স্মৃতি ও সুবর্ণা’র হাতে ঈদের নতুন জামা তুলে দেন ইউএনও মো. জিয়াউল হক মীর। ইউএনও’র কাছ থেকে নতুন জামা পেয়ে খুশিতে আত্মহারা স্মৃতি ও সুবর্ণা।
স্মৃতি জানায়, ‘মাইসের কাছ খুঁইজ্জা খুঁইজ্জা যা পাই হেইডি দিয়া জামা কাপড় কিনি, লিবিস্টিক কিনি, চুরি কিনি। উপজেলার সামনের এক দোহানো (দোকানে) ট্যাহা চাইলে হেই বেডায় (দোকানদার) কইছে টিএনও স্যারের কাছে গিয়া চা, স্যারে দিবো। পরে জিগাইয়া জিগাইয়া স্যারের কাছে আইছি। আর স্যারে আমরারে নতুন জামা কিনা দিছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জিয়াউল হক মীর জানান, প্রকৃত সুবিধা বঞ্চিত শিশু তারাই। স্মৃতি ও সুবর্ণাদের মতো এমন অনেক শিশু আছে যারা ঈদের নতুন জামা থেকে বঞ্চিত। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করবো ওই সকল শিশুদের পাশে দাঁড়াতে। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে সুবিধা বঞ্চিত ওই শিশুদের মুখে হাসি ফুটবে।