নিজস্ব
প্রতিবেদক: শেষ সময়ে জমে উঠেছে কুমিল্লার ঈদ কেনাকাটা। সকাল ১০ টা থেকে
রাত ১২টা পর্যন্ত জমজমাট থাকে বিপণিবিতানগুলো। তবে দিনের তুলনায় সন্ধ্যা ও
রাতে বেশি বিকিকিনির ধুম পড়ে। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এবং গেলো
দুই বছরের করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরাও বাহারী পণ্যে সাজিয়েছেন
তাদের দোকান। সব মিলিয়ে জমজমাট কুমিল্লার ঈদবাজার। কুমিল্লা শহরের
প্রাণকেন্দ্র হিসেবে খ্যাত কান্দিরপাড় এলাকা, ঝাউতলা, চকবাজার ও রাজগঞ্জ
এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী জানান, শুধু ইফতারের সময় ৩০ মিনিটের বিরতি ছাড়া
মধ্যরাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।
কান্দিরপাড় এলাকার সাত্তার খান
কমপ্লেক্স, খন্দকার, ময়নামতি মার্কেট, প্ল্যানেট এস আর, সমতট মার্কেট, নিউ
মার্কেট, এসবি প্লাজা, শাসনগাছা এলাকার ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজায় গিয়ে দেখা
যায় তরুণীদের উপচে পড়া ভিড়। সর্বশেষ বাজারে আসা বাহারি রঙের থ্রি-পিস কিনে
নিচ্ছেন তারা। অনেকেই ভারতীয় সিরিয়াল বা চলচ্চিত্রের নামের পোশাক কিনছেন।
এছাড়া তরুণরা ভাইরাল হওয়া কাঁচাবাদাম, পুষ্পাসহ বিভিন্ন চরিত্রের আদলের
পাঞ্জাবি ক্রয় করছেন। যদিও একাধিক দোকান মালিক জানিয়েছেন, কোন চরিত্রের
আদলে কোন পোশাক না হলেও ক্রেতার চাহিদার কথা মাথায় রেখেই সাধারণ পাঞ্জাবি ও
থ্রি-পিস এ ভাইরাল নাম দিয়ে বিক্রি করা হয়। তবে একটি অংশ জিনস প্যান্ট,
শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবির প্রতি ঝুঁকছেন।
জানা গেছে, এবারের মেয়েদের
থ্রি-পিস ১ হাজার ৫০০ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্তও বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও
ছেলেদের প্যান্ট (ব্র্যান্ড ছাড়া) সাতশো থেকে দুই হাজার পাঁচশো পর্যন্ত
বিক্রি হচ্ছে।
শহরের লাকসাম রোড এলাকায় ঐতিহ্যবাহী খাদি পণ্যের দোকানেও
পাঞ্জাবির জন্য ভিড় করছেন অনেক তরুণ। খাদি কুটিরে এক হাজার থেকে পাঁচ
হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। খাদি পল্লীতে প্রায় সব বয়সীদের
জন্য রয়েছে পাঞ্জাবি।
আর খাদিতে নারীদের জন্যে আছে থ্রি-পিস ও শাড়ি।
শাড়ির দাম পড়ে দেড় হাজার ৮ হাজার পর্যন্ত। খাদির দোকান গুলোতেও বিভিন্ন
বয়সী নারীরা কিনছেন নিজেদের পছন্দের শাড়ি। দোকানি পেকেট থেকে নতুন শাড়ির
ভাজ খুলে মেলে ধরেন ক্রেতার সম্মুখে আর পছন্দের শাড়ির দাম করে নিয়ে নেন
নিজের জন্য।
সাত্তার খান কমপ্লেক্সের বিপণিবিতানের একটি শাড়ির দোকানের
মালিক রফিকুল ইসলাম (ছদ্মনাম) বলেন, ৩০ উর্ধ্ব নারীদের শাড়ির প্রতি ঝোঁক
বেশি। আমরা গত দুটি ঈদে দোকান খুলতে পারিনি তবে এবার আশাবাদী ক্ষতি পুষিয়ে
উঠতে পারবো। যে কারণে বেশি বিক্রি ও সময় বাঁচাতে বেশি দাম চাই না। অল্প
লাভে যেন বেশি পণ্য বিক্রি করতে পারি।
নিউ মার্কেট এলাকায় একটি
বিপণিবিতানে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা স্কুল শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন,
প্রচণ্ড গরমের কারণে দিনে কেনাকাটা করা কঠিন। তাই আমরা রাতে কেনাকাটা করতে
এসেছি। রাতে কোনো দোকানই ফাঁকা থাকে না তবুও দেখে শুনে ঠাণ্ডা মাথায় শপিং
শেষ করতে পারি। দিনে ভিড় বেশি হলেও কেনাকাটা খুব বেশি হয় না। সেই তুলনায়
রাতে বিক্রি ভালো। রাতে যারা আসেন তাদের বেশির ভাগই পছন্দের পোশাক কিনেই
বাড়ি ফেরেন।
এসবি প্লাজায় কেনাকাটা করতে এসেছেন তারেক রহমান তিনি
জানান, গত দুই ঈদে শপিং করতে পারিনি। এবার করতে হবে। তাই আগেই সেরে নিলাম।
রোজা থেকে দিনে কষ্ট হয়ে যায় তাই রাতে এলাম। রোদও নেই সময় নিয়ে পছন্দের
জিনিস কিনতেও পারলাম।
এদিকে এপেক্স, বাটা, লোটো শো রুমসহ নগরীর
কান্দিরপাড়ের বিভিন্ন জুতার দোকানে গিয়ে দেখা যায়, তরুণ-তরুণীরা বাহারি
জুতা নিজের পায়ে পরে মিলিয়ে নিচ্ছেন। শিশু ও কিশোররাও স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ
বাজার সারছেন।
কুমিল্লার বাটা শো-রুমে নিজের সাত বছর বয়সী ছেলের জন্য
জুতা কিনতে এসেছেন রবিউল আলম। তিনি জানান, জুতোর মধ্যে বাটাই পছন্দ তাই
ছেলেকে নিয়ে রাতেই আসলাম। ইফতার সেরে বের হয়েছি। জুতো ছাড়াও সামান্য শপিং
বাকি আছে এখনও।
তবে সবচেয়ে ভিন্ন বাজার জমেছে কুমিল্লা নগরীর
কান্দিরপাড় ও রাজগঞ্জ একালার ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান গুলোতে। একদাম তিনশো,
একদাম দুইশো। এমন স্বরে ফুটপাত ব্যবসায়িরা স্লোগান দিয়ে ডেকে নিচ্ছেন
ক্রেতাদের। এসব দোকানে নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে।
কান্দিরপাড়
এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ি আবুল কালাম বলেন, গত দুই বছর কিচ্ছু করতাম
পারছিনা। এইবার একটু দাঁড়াইবার চেষ্টা করতাম আছি। আল্লাহর রহমতে বেচাবিক্রি
ভালাই চলতাছে।
কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুল্লাহ খোকন
বলেন, বর্তমানে রাতের বিক্রি ভালো। গত দুই বছর মানুষ ঈদের কেনাকাটা করতে
পারেনি। এবার তাই একটু বেশি ভীড়। তবে এটা আরও বাড়বে বলে আমরা ধারণা করছি।
কেননা এখনও স্কুল কলেজ বন্ধ হয়নি। আর মানুষ বেতন বোনাসও পায়নি৷ দাম নিয়ে
এখনও কোন অভিযোগ নেই। আমরা ক্রেতাদের সুবিধার্থে সব ব্যবস্থা করেছি।