ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
৭০ বছর বয়সেও মিলেনি বয়স্ক ভাতা!
Published : Sunday, 24 April, 2022 at 12:00 AM, Update: 24.04.2022 1:04:27 AM
৭০ বছর বয়সেও মিলেনি বয়স্ক ভাতা!রণবীর ঘোষ কিংকর: পাঁচ সন্তানের জননী মরিয়ম বেগম। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর গৃহস্থলির কাজ শেষে দুই বেলা দুই মুঠো ভাতের জোগান দিতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান বিভিন্ন হাট-বাজারে। বাজারে আগত ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে অসহায়ত্বের চোখে তাকিয়ে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে মৃদু স্বরে বলেন, ‘একটু সাহায্য করেন’।
বয়সের ভার ও শারীরিক অসুস্থতায় ন্যুজ্বে পড়া মরিয়মের মুখের দিকে তাকিয়ে ‘মাফ করেন’ এই শব্দটি বলাও যেনও অসম্ভব। যে যা পারেন সাহায্য করেন, আবার কেউবা ভিক্ষুকদের হাত বাড়ানোর তারণায় অতিষ্ঠ হয়ে বৃদ্ধা মরিয়ম থেকেও মুখ ফিরিয়ে নেন। যদিও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া মানুষের সংখ্যা কম।
সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা মরিয়ম কিছুক্ষন হেঁটে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করার পর আবার কোন স্থানে কিছুক্ষন বসে বিশ্রাম নেন। মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার ভয়ে মাঝে মধ্যে নাতনিকে সাথে নিয়ে আসেন।
শনিবার দুপুরে চান্দিনা সবজি বাজারে ঘুরে ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছে গিয়ে কাতর হয়ে ভিক্ষা চাইছিলেন মরিয়ম বেগম। মানুষের মুখপাণে তাকিয়ে ডান হাতটি বাড়িয়ে দিলেও বাম হাতটি ধরে রাখে নাতনি। কিছুক্ষণ এমন দৃশ্য দেখার পর কেন ভিক্ষা করেন জানতে চাইলে, অসহায়ের মতো মুখে দিকে তাকিয়ে মরিয়মের দুই চোখের কোণে পানি টলমল করতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মরিয়ম বলেন, ‘কি করবো, ভিক্ষা না করলে খামু কি?’
বয়স্ক ভাতা পান না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কত মাইসের কাছে গেছি, সবাই কইরা দিবো কইয়া আর কেউ করলো না।’  
পাশের একটি দোকানে ডেকে নিয়ে জানা যায় অসহায় মরিয়ম বেগমের করুণ কাহিনী। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বরকইট ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামের বাসিন্দা মরিয়ম বেগম। সহায় সম্বলহীন মরিয়ম এর বিয়ে হয়ে জেঠাত ভাই চারু মিয়ার সাথে। দাম্পত্য জীবনে চার পুত্র সন্তানের মা হলেও দুই পুত্র সন্তান জন্মের এক বছরেই মারা যায়। ১৯ বছর আগে স্বামী চারু মিয়ার মৃত্যু ঘটে। বাকি দুই ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় বাবুল মিয়া মারা যান আরও পাঁচ বছর আগে। বড় ছেলে প্রায় ৬০ বছর বয়সী ফিরোজ মিয়া জীবিত থাকলেও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায়। একমাত্র মেয়ে নূরজাহানকে বিয়ে দিয়েছিলেন পাশ্ববর্তী দাউদকান্দি উপজেলায়।  নূরজাহানের স্বামী তিনি মেয়ে ও এক ছেলে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে তালাক দেন নূরজাহানকে। চার সন্তান নিয়ে নূরজাহানের ঠিকানা হয় মায়ের ভাঙ্গা ঘরে।
সকলের পেটের খোরক জোগাড় করার ভার পড়ে বৃদ্ধা মরিয়মের উপরে। সংসারের ঘানি টানতে ভিক্ষাই ভরসা মরিয়ম বেগমের।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা নাছিমা আক্তার জানান, বিভিন্ন ভাতাগুলো আমরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমেই তালিকা করে প্রদান করে থাকি। ওই বৃদ্ধা অসহায় নারী কেন বাদ পড়লো সেটা খতিয়ে দেখবো। এছাড়া বর্তমানে নতুন কোন বরাদ্দ নেই। যদি কোন ভাতাভোগীর মৃত্যু ঘটে সেক্ষেত্রে ওই বৃদ্ধাকে ভাতার আওতায় নিয়ে আসবো।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জিয়াউল হক মীর জানান, আমি নতুন এসেছি। তারপরও বিষয়টি যেহেতু জেনেছি ওই বৃদ্ধার ভাতাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো গুরত্ব সহকারে দেখবো।