ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
নিয়ন্ত্রণে দ্রুত উদ্যোগ নিন দূষণ তালিকায় তলানিতে বাংলাদেশ
Published : Friday, 10 June, 2022 at 12:00 AM, Update: 10.06.2022 1:16:17 AM
নিয়ন্ত্রণে দ্রুত উদ্যোগ নিন দূষণ তালিকায় তলানিতে বাংলাদেশপরিবেশদূষণের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ দেশগুলোর একটি। সম্প্রতি প্রকাশিত পরিবেশবিষয়ক এক সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছে ১৭৭তম। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল ল অ্যান্ড পলিসি এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল আর্থ সায়েন্স ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক যৌথভাবে এই সূচক প্রকাশ করেছে। এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই) ২০২২ অনুযায়ী তালিকার সর্বনিম্নে রয়েছে ভারত (১৮০তম)।
পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার রয়েছে যথাক্রমে ১৭৬, ১৭৮ ও ১৭৯তম অবস্থানে। তালিকার শীর্ষে রয়েছে ডেনমার্ক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য ও ফিনল্যান্ড। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে জাপান (২৫তম)। তালিকার প্রথম ৫০-এ এশিয়ার আর দুটি দেশ রয়েছে। সেগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত (৩৯তম) ও সিঙ্গাপুর (৪৪তম)।
ইপিআই প্রতিবেদন তৈরিতে পরিবেশগত সমস্যার ৪০টি নির্দেশক ব্যবহৃত হয়েছে। তাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোর পরিবেশগত তথ্য-উপাত্ত বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পরিবেশগত বিপর্যয়কে বিবেচনায় না নিয়ে দ্রুত শিল্পায়ন, যেনতেন প্রকারে অবকাঠামো উন্নয়নের চেষ্টাসহ আরো কিছু কারণ অনেক দেশেরই পরিবেশের মান নিম্নগামী করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মারাত্মক খারাপ বায়ুমান এবং অব্যাহত গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ফলে তালিকায় প্রথমবারের মতো সবার নিচে নেমে গেছে ভারত। সূচক অনুযায়ী সবচেয়ে কম ১৮.৯ পয়েন্ট পেয়েছে ভারত। মিয়ানমার ১৯.৪, ভিয়েতনাম ২০.১, বাংলাদেশ ২৩.১ ও পাকিস্তান ২৪.৬ পয়েন্ট পেয়েছে। গত ১০ বছরের পরিবর্তন বিবেচনায় বাংলাদেশ ১.৯০ পয়েন্ট পিছিয়েছে।
আগেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা ও জরিপে বাংলাদেশের এমন অবস্থান উঠে এসেছে। গত মার্চে প্রকাশিত অন্য এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের আয়ু গড়ে তিন বছরের মতো কমে যায়। এটি ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, এমনকি আফগানিস্তানের চেয়েও বেশি। গবেষণাটি পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন। গত মার্চে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার ‘বিশ্বের বায়ুর মান প্রতিবেদন-২০২১’ প্রকাশ করেছে। তাতেও দেখা যায়, ১১৭টি দেশ ও অঞ্চলের ছয় হাজার ৪৭৫টি শহরের বায়ুমান পর্যালোচনায় বাংলাদেশ রয়েছে বায়ুদূষণের শীর্ষে। আর রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। প্রথম স্থানে আছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। দেশে পরিচালিত অনেক গবেষণায়ও দূষণের এমন ভয়াবহ চিত্রই উঠে এসেছে। এর পরও পরিবেশদূষণ রোধে আমাদের এত অনাগ্রহ কেন?
বাংলাদেশে বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পুরনো পদ্ধতির ইটখোলা, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, আবর্জনা পোড়ানো, ফিটনেসহীন যানবাহন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজ। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে কেবল ইটখোলাই ৫০ শতাংশের বেশি বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। সরকারিভাবে মাঝেমধ্যেই পুড়িয়ে ইট তৈরি বন্ধ করার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে প্রায় কিছুই করা হয় না। গাড়ির কালো ধোঁয়া নিয়ে প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রতিবেদন আসছে। কিন্তু ফিটনেসহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণের তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। তাহলে এ দেশে মানুষ বাঁচবে কী করে? আমরা আশা করি, বায়ুদূষণসহ অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।