কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রাজামেহার ইউনিয়নে উত্তর পাড়া বড়বাড়ী সড়কে ব্রীজটির নির্মাণ হলেও গত দুই মাসেও সংযোগ সড়ক করা হয়নি। সংযোগ সড়ক না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ১০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ। শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গেলে একাধিক স্থানীয় বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়রা দ্রুত ব্রীজটির সংযোগ সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অফিস সূত্রে জানা যায়, এলজিইডি'র অধীন ৩৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৪ ফুট প্রস্থের এ সেতুটির নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে ৩৮লক্ষ টাকা। গত মার্চ মাসে এ ব্রীজটি কাজ শুরু করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোসলেহ উদ্দিন খাঁন এন্টার প্রাইজের মালিক মো.মোসলেহ উদ্দিন ও তাঁর সহযোগি নাজমুল হাসান। নির্মাণ কাজ শুরু পর থেকে নানা অজুহাতে ঠিকাদার সেতুটির নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে পিছিয়ে নেন। এছাড়াও সেতুটির নিচে বিকল্প কোন রাস্তা না রেখেই পূর্বের সেতুটি ভেঙে ফেলায় মানুষ ব্রীজ পর্যন্ত এসে আবার ফেরত যেতে হয়েছে। পরে স্থানীয়দের চাপে পড়ে ঠিকাদার সেতুটির নিচে মাটি ভরাট করে সাময়িক চলাচলের রাস্তা করে দেন। পরে গত দুই মাস আগে ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় । কিন্তু ঠিকাদার সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ ফেলে রেখে চলে যান। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল আউয়াল, সিএনজি চালক নয়ন ও সুমন জানান, তিন মাস ধরে এ ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। গতকাল ব্রীজের এক মাথায় কিছু ইট অপর মাথায় একটি পরিত্যাক্ত বিদ্যুতিক খুঁটি দিয়ে মানুষ চলাচলের কোন রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ খুঁটি দিয়ে পার হওয়ার সময় স্কুল থেকে আসা দুই ছাত্র নিচের খালের পানি পড়ে যায়, পড়ে উপস্থিত লোকজন তাদের উদ্ধার করে বাড়ি পৌছে দেয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আবদুল মতিন সরকার বলেন, ঠিকাদারের গাফলতিতে মানুষ এমন মানুষ এমন কষ্ট পাচ্ছেন। ঠিকাদার কাজ শুরুর পর থেকে ফাঁকিবাজি করছেন। তিনি লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে কয়েক দফা কাজ বন্ধ রেখে ১০/১৫দিন শুরু করে। এভাবে কয়েক দফায় ঠেলেঠুলে এ পর্যন্ত ব্রীজের কাজ করিয়েছি। বর্তমানে ব্রীজের কাজ দুই মাস আগে শেষ হলেও সেতুটিতে সংযোগ সড়ক করতে নানা তালবাহানা শুরু করেছেন। তাকে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এটি নিয়ে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ।
বুটিয়াকান্দি মাদরাসার মোহতামিম মাও.এমদাদুল হক বলেন, এ সড়কটি মাদায়াইয়া হয়ে মুরাদনগর উপজেলা যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। দীর্ঘদিন এটির সংযোগ সড়ক করা হয়নি। গতকাল রাতে আমি খালের গলা সমান পানি ভিজে মাদরাসায় এসেছি। ঠিকাদারের সাথে কয়েক দফায় কথা বললে তিনি আজ কাল করবেন বলে মিথ্যা আশ্বাস দেন, কাজের কাজ কিছুই হয়না।
রাজামেহার গ্রামের মো. আশিকুর রহমান জানান, এ সেতুটি ১০ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগের কারণ। হাজার হাজার যানবাহন চলাচলের এ সড়কটি এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। নানা তালবাহানার পর সেতুটি নির্মাণ কাজ হলেও এখন আবার সংযোগ সড়ক নেই। তাহলে এত লক্ষ টাকা ব্যয় করে সেতুটি বানানোর কি দরকার? এলাকার শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। লোকজনদের হাটবাজার ও ইউনিয়ন পরিষদের কাজে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পরে না পেরে এলাকার কয়েকজন সেতুর এক পাশে মাটি ফেলে অন্য পাশে বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে কোনো রকমে চলাচলের ব্যবস্থা করেছে।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মোসলেহ উদ্দিন খান ও নাজমুল হাসান জানান, ব্রীজটি নির্মাণে অনেক লোকসান হবে। মাটি সংকটের কারণে সংযোগ সড়ক করা হয়নি। আমি ভেকুর সাথে চুক্তি করেছি, আজ কালের মধ্যে মাটি ভরাট কাজ শুরু হবে।
দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঠিকাদার অনেক তাগাদা দিয়ে সেতুটির অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সেতুর সংযোগ সড়ক করা হবে।