জহির
শান্ত: কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে প্রার্থীদের
প্রচার-প্রচরণায় আর মাত্র হাতে আছে তিন দিন। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায়
ব্যস্ত রয়েছেন প্রার্থীরা। অবিরাম ছুটে চলছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। নানা
কৌশলে ভোটারদের মনজয়ের চেষ্টা চলছে তাদের। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও।
শেষমুহূর্তে প্রার্থীদের এসব প্রতিশ্রুতিতে প্রাধান্য পাচ্ছেন নারী ও তরুণ
ভোটারা। শুধু মেয়র প্রার্থীরা নয়, নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর
এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরাও শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত
রয়েছেন প্রচারণায়। ক্ষণে ক্ষণে কড়া নাড়ছেন ভোটারের দরজায়। সবমিলিয়ে
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন ঘিরে চলছে জমজমাট প্রচারণা।
বরাবরের মতো
শুক্রবারও সকাল থেকে প্রচারণায় নেমে দুই মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু
এবং নিজাম উদ্দিন কায়সার। অপরদিকে দুপুরের পর প্রচারণায় নামেন আওয়ামী লীগ
মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। তবে এদিনও অপর দুই মেয়র প্রার্থী
রাশেদুল ইসলাম এবং কামরুল আহসান বাবুলের প্রচারণা চোখে পড়েনি।
শুক্রবার
সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর ১৮নং ওয়ার্ডের তেলিকোনা চৌমহনী থেকে গণসংযোগ শুরু
করেন মনিরুল হক সাক্কু। পরে তিনি ১৬নং ওয়ার্ডের টিক্কাচর এলাকায় গণসংযোগ ও
পাথরিয়াপাড়া এলাকায় উঠান বৈঠক করেন।
এছাড়াও এদিন মনিরুল হক সাক্কুর স্ত্রী আফরোজা জেসমিন টিকলী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৪টি উঠান বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।
এসময়
মনিরুল হক সাক্কু বলেন, প্রচারণা শুরুর পর থেকেই আমি প্রত্যেক ভোটারের
কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ভোটাররাও কাছে পেয়ে আমাকে সাদরে গ্রহণ করে
নিচ্ছেন। বিগত দিনে আমি দুই মেয়াদে মেয়র ছিলাম। সুখে-দুখে তাদের পাশে
থেকেছি। আমি সাধ্যমতো উন্নয়ন করেছি; কিছু ব্যর্থতাও আছে।
তরুণ ভোটারদের
উদ্দেশ্যে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, বিগত দিনে আমি তরুণদের চাহিদার বিষয়টি
মাথায় রেখে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছি। নিউ মার্কেটে একটি আইটি জোন
করে দিয়েছি তরুণদের জন্য। সেখানে তরুণরা বিভিন্ন কম্পিউটার সামগ্রী বেচা
কেনার মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। নির্বাচিত হলে তরুণদের জন্য আরো বেশি
কাজ করবো।
নারী ভোটারদের বিষয় তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে
সবসময়ই নারীদের ভোটেই মেয়র পদে জয় পরাজয়ের সম্ভাবনা দেখা দেয়। নারীরাই বেশি
ভোট কেন্দ্রে দিয়ে আগে আগে ভোট দেন। তাদের মাথায় রাজনৈতিক বিষয়টি থাকে না।
ফলে তাদের ভোটটি নিরপেক্ষ হয়। পুনরায় নির্বাচিত নারীদের সমস্যা আগে সমাধান
করবো।
এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত শুক্রবার
দুপুরের পর থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণায় নামেন। এদিন তিনি নগরীর
মগবাড়ি চৌমুহনী, কালিয়াজুড়ি এবং আইডিয়াল স্কুল প্রাঙ্গণ এলাকায় গণসংযোগ,
পথসভা এবং উঠান বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।
আরফানুল হক রিফাত বলেন, কুমিল্লার
নাগরিকরা বর্তমানে নানা সুবিধাবঞ্চিত রয়েছে। তাদের উন্নয়ে যে পরিমাণ বরাদ্দ
এসেছে; তার ছিটেফোটাও নাগরিকদের উন্নয়নে ব্যয় করা হয়নি। আমি মেয়র
নির্বাচিত হলে নাগরিকদের চাহিদা অনুযায়ী উন্নয়ন করে যাবো।
কুমিল্লা
সিটির ভোটে নারী ভোটারদের একটি প্রচ্ছন্ন প্রভাব থাকে উল্লেখ করে তিনি
বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। তিনি সবসময় নারী উন্নয়নে কাজ
করে গেছেন, সেটা প্রমাণিত। আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিলে সারা দেশের মতো
কুমিল্লায়ও নারী উন্নয়ন বজায় থাকবে।
তিনি বলেন, নারীদের কল্যাণে আমি
কুমিল্লা নগরীতে ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা করবো। যে কোনো
অসুখ-বিসুখে তারা যেনো হাতের কাছেই চিকিৎসা ও এ্যাম্বুলেন্স সেবা পায়, সেই
ব্যবস্থা করবো।
তরুণ ভোটারদের উদ্দশ্যে রিফাত বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে
তরুণরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। সরকার তরুণদের উন্নয়নে নানা প্রকল্পত গ্রহণ
করেছেন। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে কুমিল্লাতেও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তরুণদের
কর্মসংস্থান ও উন্নত জীবন-যাপনের ব্যবস্থা করবো।
কুমিল্লা সিটি
কর্পোরেশন নির্বাচনে অপর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার
শুক্রবার ৭নং ওয়ার্ড গোবিন্দপুর খলিফা বাড়ি মসজিদ সংলগ্ন মাঠে উঠান বৈঠক ও
বিকালে ২৩ নং ওয়ার্ডের বাতাবাড়িয়া এলাবায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করবেন ।
এসময়
তিনি বলেন, উন্নয়নবঞ্চিত কুমিল্লার মানুষ পরিবর্তন চায়। প্রয়োজনীয় নাগরিক
সুবিধা ভোগ করতে চায়। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে তাদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা
দিয়ে যাবো।
তরুণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, আমি
নিজের তরুণ। তাই তরুণদের চিন্তা-ভাবনা বুঝি। তাদের কী প্রয়োজন আমাকে বলতে
হবে না। তরুণদের চাহিদা মতোই আমি সিটি কর্পোরেশন গড়বো। তরুণরা যেনো
প্রযুক্তি ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হতে পারে সে ব্যবস্থা করবো।
নারী
ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মা-বোনেরা প্রত্যাশা করে একটি নিরাপদ
বাসস্থান। তারা নিরাপদে থাকতে চায়। তারা যেনো অনিরপত্তায় না ভোগে নগরীতে
সেই ব্যবস্থা করা হবে।