আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন সুষ্ঠু-সুন্দর করার স্বার্থে নির্বাচনী বিধি মোতাবেক স্থানীয় (কুমিল্লা-৬) সংসদ সদস্য আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহারকে নির্বাচনকালীন এলাকা ত্যাগ করতে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু কমিশনের চিঠি পেয়েও আওয়ামী লীগদলীয় এই এমপি এলাকা না ছাড়ায় অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এমপি বাহার এলাকা না ছাড়লে ইসির কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
এমপি বাহাউদ্দিন বাহার সম্পর্কে সিইসি বলেন, আমরা যখন কাউকে রিকোয়েস্ট করি, উনাকে যদি আমরা বলে থাকি নির্বাচনী আচরণবিধিতে এটা আছে, আপনি যদি একটু সরে থাকেন, তাহলে নির্বাচনটা ভালো হয়। সে চিঠিটা আমরা প্রকাশ করেছি। এটাই তো একজন সংসদ সদস্যের জন্য এনাফ। এটাকে তো অনার করা লাগবে। যদি উনি কমিশনের চিঠিকে অনার না করেন আমাদের তো তেমন কিছু করার থাকে না।
রোববার (১২ জুন) নির্বাচন ভবনে সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সংলাপ শেষে সিইসি সাংবাদিকদের কাছে এ প্রতিক্রিয়া জানান।
কুসিক নির্বাচন ঘিরে এমপি বাহারের এলাকা না ছাড়া বিষয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের কিছু আইনগত দিক আছে। কিছু ক্ষমতা আংশিক, কিছু পরিপূর্ণ। কুমিল্লায় যা বলা হয়েছে- সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্বাচনী এলাকায় থাকতে পারবেন না। সংসদ সদস্য (এমপি বাহার) এ আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে, আমরা উনাকে চিঠির মাধ্যমে এলাকা ছাড়তে বলেছিলাম। উনি এলাকা ছাড়েননি। উনি মামলা করেছেন, আমরা ফলাফল পাইনি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সংলাপের বরাত দিয়ে সিইসি বলেন, সংলাপে অতিথিরা বলেছেন, বর্তমান সিস্টেমে কুসিকে খুব বেশি ভালো নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তবে আমরা যদি দৃঢ় থাকি, আইন দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করি, তাহলে পরিস্থিতির অনেকটা উন্নয়ন সম্ভব।
সিইসি মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা ও ঐতমত্য না থাকলে কমিশনের একার পক্ষে ভালো নির্বাচন করা কষ্টকর হবে।
তিনি বলেন, সাবেক সিইসি রউফ সাহেব (বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ) প্রার্থী অনুযায়ী নয়, দলভিত্তিক নির্বাচনের কথা বলেছেন। নির্বাচনে দেখা গেল যে অনেক আগে থেকে দলগুলো তাদের টোটাল প্রার্থীর নাম দিয়ে যাবে। সবাই তিনশ আসনে দিল। পার্টি ক, খ, গ, ঘ। যে যত ভোট পেয়েছে, সেভাবে আসন পাবে। এই ধরনের একটা সিস্টেম আছে। তবে এটা আমাদের বিষয় নয়। দলগুলোকেই দেখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান আইনি ও সাংবাধিনাকি কাঠামোর মধ্যে থেকেই আমাদের নির্বাচন করতে হবে। কেউ কেউ বলেছেন, একাধিক দিনে নির্বাচন করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন সহজ হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। কেউ কেউ এতে সমস্যার দিকটিও উল্লেখ করেছেন। এ নিয়ে কোনো ঐক্যমত হয়নি। কাজেই একাধিক দিনে নির্বাচন করলে আমাদের জন্য অসুবিধাও হতে পারে। সেরকম প্রস্তুতিও আমাদের নেই।
রাজনৈতিক দলগুলোকে পরামর্শ দিতে সমস্যা কোথায়, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এখনো দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করিনি। সবাই বলেছেন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। নির্বাচন যদি ইনক্লুসিভ না হয়, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাস্তব অর্থে থাকবে না। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। এ কালচারের মধ্যে কিছু ইতিবাচক গুণ আনতে হবে। দলগুলোর মধ্যে পরমত সহিষ্ণুতা ও ঐক্যমত না থাকলে কমিশনের একার পক্ষে খুব ভাল নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। এটা আমরা যেমন বলেছি, সংলাপে অতিথিরাও বলেছেন।
সিইসি জানান, শিগগির রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করবো। যখন মতবিনিমিয় করবো আমরা সাজেশন চাইবো। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরো ভালো পদ্ধতিগত কী পরিবর্তন আনা যায়, সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তা জানতে চাইবো। ব্যক্তি নয়, সিস্টেম যদি উন্নত করতে পারি, নির্বাচন অনেক বেশি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে।