জহির শান্ত:
কুমিল্লা
নগরজুড়ে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা জমজমাট প্রচারণার ইতি টানছেন
প্রার্থীরা। ১৩ জুন (সোমবার) শেষ হয় কুমিল্লা সিটিকর্পোরেশন নির্বাচনে
আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা। যদিও শেষ শেষ দিনে তেমন প্রচারণা চালাননি মেয়র
প্রার্থীরা। তবে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তিন হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থীর
পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বিচ্ছিন্নভাবে গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক
করেছেন। এছাড়া পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে থাকা শহর কুমিল্লায় গানে গানে চলা
মাইকিংয়ে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।
অপরদিকে এদিন কাউন্সিলর প্রার্থীদের
প্রচারণা ছিলো চোখে পড়ার মতো। শেষ সময়ে প্রত্যেক ওয়ার্ডের প্রতিটি ভোটারের
দরজার কড়া নাড়ার চেষ্টা করেছেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা। উন্নয়নের
নানা প্রতিশ্রুতি ও ভোট প্রার্থনার শেষ আবদার নিয়ে গিয়েছেন তাদের কাছে।
সোমবার
সকালে পৃথক সময়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত নিজ
নির্বাচনী কার্যালয়ে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু নিজ বাসভবনে
সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন। দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সিটি
এলাকায় বহিরাগতদের মহড়ার অভিযোগ নিয়ে হাজির হন অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী
নিজাম উদ্দিন কায়সার। এসময় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি। বিকেলে রিফাত ও
কায়সার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করলেও সাক্কু কেবল তার কেন্দ্র
কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেছেন।
এদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত
নগরীর ১০৫টি ভোট কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় মক ভোটিং। নির্দিষ্ট ওয়ার্ডের স্ব
স্ব কেন্দ্রে গিয়ে ভোটাররা দেখে আসেন ইভিএম ভোটিং পদ্ধতি। তবে কুমিল্লায় মক
ভোটিং নিয়ে তেমন সাড়া পড়েনি ভোটারদের মাঝে।
কালোটাকা ছড়ানোর অভিযোগ রিফাতের:
কুসিক
নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু সারা শহরে কালোটাকা
ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত।
নির্বাচনী প্রচারণার শেষ সকালে সাংবাদিকদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা
বলার সময় এ অভিযোগ তুলেন রিফাত।
তিনি বলেন, কুমিল্লার মানুষ
শান্তিপ্রিয়। ভোটের দিন কুমিল্লার ভোটকেন্দ্রগুলোর পরিবেশ শান্ত থাকবে।
কিন্তু কেউ যদি ভোটকেন্দ্রে কালোটাকার ছড়াছড়ি করতে যায় জনতা তাদেরকে
প্রতিহত করবে। এর দায়দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না। আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী
সারা শহরেই কালোটাকা ছড়াচ্ছে। এমনকি আমি এমনও অভিযোগ পেয়েছি, আমার দলের
কর্মীদের টাকার অফার করা হচ্ছে।
এ নিয়ে কোথাও অভিযোগ করেছেন কি না-
জানতে চাইলে রিফাত বলেন, আমি জনতার কাছে অভিযোগ করেছি। নির্বাচন কমিশনে
অভিযোগ করি নাই। সেখানে অভিযোগ করে লাভ নাই। নির্বাচন কমিশন বার বার আমার
কুমিল্লার এমপি, যার বাড়ি কুমিল্লায়। উনাকেই কুমিল্লা ছাড়ার জন্য বারবার
অনুরোধ করছে। কেন? উনি কি আমার কোনো নির্বাচনী সভায় গিয়েছেন? উনি আমার
পথসভায় কিংবা উঠান বৈঠক কোথাও অংশ নিয়েছেন? উনিকি আমার সাথে দাঁড়িয়েছেন
কোনোদিন? একজন প্রার্থী অভিযোগ করলো আর সাথে সাথে একটা চিঠি পাঠিয়ে দিলেন।
রিফাত
বলেন, আসি আসলে একজন দুর্ভাগা লোক। আমার এমপি, যার ছত্রছায়ায় আমি এতবছর
রাজনীতি করে আজকের এই জায়গায় এসেছি, উনি আমার পাশে নেই। আমাকে কোনোরকম
সাহায্য করতে পারছেন না। উল্টো আবার আমাদেরকেই ব্লেইম দেওয়া হচ্ছে আমরা
নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছি। ভোটের দিন জগণ এই প্রশ্নের জবাব দিবে।
কুমিল্লার জনগণ আমার শক্তি, আর জনগণের শক্তি বাহার ভাই।
সুষ্ঠু ভোট নিয়ে ফের শঙ্কার কথা জানালেন সাক্কু:
কুমিল্লা
সিটি নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিয়ে আবারো শঙ্কার কথা জানিয়েছেন
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। সোমবার
নগরীর নানুয়ার দিঘির পাড়স্থ নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ
শঙ্কার কথা জানান সাক্কু।
তিনি বলেন, এখন যেই পরিস্থিতি, সেই
পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন কিভাবে আশা করি। এমপি সাহেব (আ ক ম
বাহাউদ্দিন) এখনো এলাকায় আছেন। সিইসি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) বললো,
নিরুপায়। সিইসি যেখানে নিরুপায় সেখানে আমি কেমনে আশাবাদী হই। উনি (সিইসি)
একটা সংস্থার প্রধান, এটা সাংবিধানিক পোস্ট। উনি অসহায় হয়ে গেলে আমা সাধারণ
মানুষ আর কি করবো?
আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত আপনার
বিরুদ্ধে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন- এমন প্রশ্নে সাক্কু বলেন, তিনি
(রিফাত) শুরু থেকেই আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে আসছেন। একবার বলছেন আমি
দুর্নীতি করেছি। এখন বলছেন টাকা ছিটাচ্ছি। তার কাছে কি কোনো প্রমাণ আছে?
প্রমাণ ছাড়া কথা বলে লাভ নাই, আমি টাকা ছড়াই নাই। আমি মিথ্যা কথার মানুষ
না, মিথ্যা বলি না। তারাই নানাভাবে মিথ্য প্রপাগণ্ডা ছড়ায়।
শেষ দিনে
কোনো প্রচার কার্যক্রম রাখেননি উল্লেখ করে সাক্কু বলেন, ইতোমধ্যে আমি ২৭টি
ওয়ার্ডে গণসংযোগ সম্পন্ন করেছি। আজকে শেষ দিনে আমি আমি আমার কেন্দ্র কমিটির
লোকজনের সাথে কথা বলছি, বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছি। আশা করি সুষ্ঠু
নির্বাচন হলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুণ ভোটে জয়লাভ করবো।
বহিরাগতদের মহড়া বন্ধের দাবি কায়সারের:
কুমিল্লা
সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তার
করতে বহিরাগত লোকজন সিটি এলাকায় মহড়া দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন স্বতন্ত্র
মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। সোমবার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার
কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ
অভিযোগ দাখিল করেন তিনি।
অভিযোগ দেওয়ার পর কায়সার সাংবাদিকদের বলেন,
নির্বাচনী প্রচারণা শেষ মুহূর্তে এসে লক্ষ্য করছি নির্বাচনী এলাকায়
বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ছে। অলি-গলিতে ক্যাডাররা মহড়া দিচ্ছে। বিভিন্ন হত্যা
মামলার চিহ্নিত আসামীরাও প্রকাশ্যে আসছে। এতে ভোটারদের মাঝে ভয় ও শংকা
বাড়ছে। এ বিষয়ে শেষ মুহূর্তে অতি দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি
জানাচ্ছি।
এসময় তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে জনমনে ব্যাপক সন্দেহ থাকা
সত্ত্বেও আমরা সিইসির আশ্বাসের প্রেক্ষিতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন
করি। আমি দাবি করেছিলাম প্রতি কেন্দ্রের চূড়ান্ত ফলাফলের লিখিত বিবরণীর
সঙ্গে মাস্টার ইভিএম এর প্রিন্ট কপি (সকল বুথের সম্মিলিত ফলাফলের প্রিন্ট
কপি) সংযুক্ত আকারে প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে সরবরাহ করার জন্য। এ বিষয়ে
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করা হলে জনমনে শংকা থেকেই যাবে।