প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের পতাকা হাতে ১৫৫ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়লেন নাজমুন নাহার।
নাজমুন নাহার বাংলাদেশের পতাকা হাতে ১৫৫তম দেশ হিসেবে তাজিকিস্তান সফর করেন।
গেল মাসের ২৯ মে নাজমুন নাহার তাজিকিস্তানে পামির মালভূমির ‘পৃথিবীর ছাদে’ বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ১৫৫ দেশ ভ্রমণের এই ইতিহাস গড়েছেন। তার সাথে ছিল বিশ্ব শান্তির বার্তা।
স্বপ্ন আর সাহস কখনো মানুষকে থামিয়ে রাখতে পারে না-তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন নাজমুন নাহার। লড়াকু সৈনিক নাজমুন লাল সবুজের পতাকা নিয়ে পৃথিবী ভ্রমণ করছেন গত ২১ বছর ধরে। পৃথিবী ভ্রমণের সময় বহুবার মৃত্যুমুখে পতিত হয়েও সকল বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে চলছেন আমাদের নাজমুন।
নাজমুন নাহার ৬ অক্টোবর ২০২১ বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে বিশ্বভ্রমণের এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক সৃষ্টি করেন আফ্রিকার দেশ সাওটোমে ও প্রিন্সিপ ভ্রমণের মাধ্যমে। তারপর ২০২২ এর শুরুর দিকে তিনি আবার বেরিয়ে পড়েন আফ্রিকা, ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার নতুন দেশ সফরের জন্য। তারুণ্যের এই অগ্রপথিক নাজমুন নাহার এবার অভিযাত্রা করেছেন ইরাক, সান মারিনো, মরিশাস, উজবেকিস্থান ও তাজিকিস্তান পর্যন্ত। বেঙ্গল এয়ারলিফটের সিস্টার কনসার্ন বেঙল ট্র্যাভেল এন্ড ট্যুরস লিমিটেডের সৌজন্যে তিনি এই পাঁচটি দেশ ভ্রমণ করেন। ইতোপূর্বে তিনি প্যারাগন বাংলাদেশের সৌজন্যে আফ্রিকার পাঁচটি দেশ সফর করেছেন।
তার পুরো বিশ্বভ্রমণ অনেক অ্যাডভেঞ্চারে ভরপুর। এবারের পাঁচটি দেশ তিনি পুরোপুরি ভিন্ন রুটে ভ্রমণ করেছেন। উজবেকিস্থান ও তাজিকিস্তানের পৃথিবীখ্যাত সিল্করুট ভ্রমণ করেছেন নাজমুন। এছাড়া উজবেকিস্তানের তাশখন্দ, সমরখন্দ, বুখারা শহরের মতো বিখ্যাত ঐতিহাসিক শহরগুলো তিনি ভ্রমণ করেছেন।
তাজিকিস্তান ও আফগানিস্তান পামির করিডোরের পৃথিবীর ছাদের ভয়ঙ্কর এক হাজার কিলোমিটার টানা সড়ক পথে দুর্গম পথে বেয়ে ভ্রমণ করেছেন। এরই মধ্যে পামিরের রাজধানী খরোগসহ পৃথিবীর ছাদের মুরগাব, ইশকাশিম, ওয়াকাহান মত পামিরের ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভ্রমণ করেন-যা পৃথিবীর ছাদের অংশজুড়ে বিস্তৃত রয়েছে।
৩ জুন মধ্য এশিয়ার বিখ্যাত গণমাধ্যম তাজিকিস্তানের এশিয়া প্লাস পত্রিকায় নাজমুনের বিশ্ব ভ্রমণের উপর এক বিশেষ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। নাজমুন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে এভাবেই গৌরবের সাথে আমাদের বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে বিশ্ববাসীর কাছে! পিস টর্চ বিয়ার আর অ্যাওয়ার্ডসহ দেশে-বিদেশে নাজমুন ৫০টিরও বেশি সম্মাননা অর্জন করেছেন। এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বহু গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। নাজমুন পৃথিবীর ১৪টি দেশে মাকে নিয়ে ভ্রমণ করেছেন, পৃথিবীর বাকি সব দেশে নাজমুন একাই ভ্রমণ করেছেন। তার ভ্রমণের বেশিরভাগ দেশ ছিল সড়কপথে। তিনি সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন।
তার জন্মস্থান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর সদরে। তার জীবনের সবচেয়ে বড় উৎসাহ ছিলেন দাদা, বাবা ও বই। নাজমুন নাহারের লক্ষ্য পৃথিবীর প্রতিটি দেশে বাংলাদেশের পতাকাকে নিয়ে যাবেন।
২০০০ সলে ভারতের ভুপালের পাঁচমারিতে 'ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তার প্রথম বিশ্ব ভ্রমণের সূচনা হয়। ১ জুন ২০১৮ সালে ১০০তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের সীমান্তের ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের উপর।
নাজমুন নাহারের হাতে উদয়ন হোক বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা বিশ্বের প্রতিটি দেশে। পৃথিবীর মানচিত্রে আলোকিত হোক নাজমুন নাহারের বিশ্বভ্রমণের এই অভিযাত্রা।