পদ্মা সেতুর নির্মাণের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যায়ের সবার সঙ্গে গ্রুপ ছবি তোলার ইচ্ছা পোষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুর পশ্চিম প্রান্তে একটি জাদুঘর নির্মাণ করে সেসব ছবি ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যবহৃত উপকরণ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা জানান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলম।
বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে অনেক কথা বলেছেন। তিনি পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন সব শ্রমিকের সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সাধারণ শ্রমিক থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীও বাদ পড়বেন না।
“গ্রুপ ছবি হিসেবে এগুলো মিউজিয়ামে সংরক্ষিত থাকবে। ওই মিউজিয়ামে প্রকল্পে ব্যবহৃত উপকরণ, যন্ত্রাংশ এমনকি একটি কোদালও সংরক্ষিত থাকবে।”
আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ জনপদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে দেশের ৬৪ জেলায় উৎসবের আয়োজন চলছে।
এই সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাসস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ছবি ও ভিডিও এবং ওই এলাকার জীববৈচিত্র্য জাদুঘরে সংরক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই জাদুঘরটা করছি মূলত সার্ভিস এরিয়া-১-এ, এটা মাওয়া প্রান্ত। জাদুঘরের নাম হবে ‘পদ্মা সেতু জাদুঘর’।
“এর মাধ্যমে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য মানুষের সামনে তুলে ধরা হবে।”
সেতু মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, “পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে নানা সময়ে নানা ধরনের প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সেই সব চ্যালেঞ্জের একটা ধারণা, শুরু থেকেই নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে, এগুলোও জাদুঘরে তুলে ধরা হবে।”
১০,৮৫৬ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প:
মঙ্গলবার একনেকের সভায় ১০ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকার মোট ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
তিনি বলেন, “এই ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৫ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৭৫৬ কোটি টাকা এবং বাকি ৪ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি ঋণ থেকে যোগান দেওয়া হবে।”
শামসুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী হাওড় অঞ্চলে কালভার্টের পরিবর্তে উঁচু সেতু এবং সড়কের পরিবর্তে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকায় বিদ্যুত সঞ্চালনে ভূগর্ভস্থ লাইন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল- রশীদ বলেন, “পদ্মাসেতু প্রকল্পে আন্তর্জাতিক পুনর্বাসন করা হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শুধু পুনর্বাসনের জন্যই প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।”
পদ্মাসেতুর মূল কাঠামোতে ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মূল সেতুর প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকারও কম।”
অন্যদের মধ্যে পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, আইএমইডি সচিব আবু হেনা মুরশেদ জামান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।