ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুমিল্লায় প্রমাণ হল ভোটে না যাওয়াই ঠিক: ফখরুল
Published : Friday, 17 June, 2022 at 12:00 AM, Update: 17.06.2022 1:55:39 AM
কুমিল্লায় প্রমাণ হল ভোটে না যাওয়াই ঠিক: ফখরুলআওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়েছে, কুমিল্লার ভোট তা সঠিক প্রমাণ করেছে বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “কালকের নির্বাচন তো আপনারা নিজেরাই দেখেছেন, দ্বিতীয়বার আমি বলতে চাই না। এটা আমরা বহু আগে থেকেই জানি যে হবে। যে কারণে বলে দিয়েছি, আমরা কোনো নির্বাচনেই যাচ্ছি না। খুব পরিষ্কার করে বলেছি।”
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলাচনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও কুমিল্লায় মেয়র পদে দলটির দুজন নেতা প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ৩৪৩ ভোটের স্বল্প ব্যবধানে হারেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কাছে।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোটে অংশ নেওয়ায় বিএনপি সাক্কুসহ দ্ইু প্রার্থীকেই দল থেকে বহিষ্কার করে। ভোটের পর সাক্কু দাবি করেন, তাকে কারচুপি করে হারানো হয়েছে।
প্রেস ক্লাবের অনুষ্ঠানে ফখরুল বলেন, “এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানেই হচ্ছে যে, সেটা তাদেরকে আরো বৈধতা খুব পরিষ্কার করে দিলেন। এটা এখন প্রমাণিত সত্য।”
‘১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস’ পালনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দু্টি অংশের যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা অনুষ্ঠান হয়।
সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে বাকশাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন চারটি সংবাদপত্র রেখে বাকি সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও দেশে প্রকারান্তরে বাকশাল কায়েম করেছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে বাকশাল করে, তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্র পেতে পারেন না, এটা বাস্তবতা। আওয়ামী লীগের চরিত্রের মধ্যে মানুষের ভিন্নমত সহ্য করবার কোনো কিছু নেই।
“গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এই দুইটাকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন করা যায় না। সেজন্য গণতন্ত্রকে না পেলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আমরা কীভাবে পেতে পারি? সেজন্য আমরা গত কয়েকবছর ধরে বলছি যে, আমাদের মূল্য লক্ষ্য হচ্ছে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা।”
সেই লড়াইয়ে দেশের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার তাগিদ দিয়ে ফখরুল বলেন, “আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাসিত, আমাদের লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা।
“এত কিছুর পরেও আমরা কিন্তু থেমে নেই। আমরা কাজ করছি এবং চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার এবং দেশকে মুক্ত করার ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কোনো ঘাটতি নেই। নিঃসন্দেহে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাব এবং দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবই।”
বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হরণ করেছে, সংবাপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছে, মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করেছে। আর বিএনপি সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দিয়েছে, বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছে।”
আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করার প্রতিম্রুতিও দেন বিএনপি মহাসচিব।
সভায় বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, “গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। দলমত নির্বিশেষে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারী, এদেশের জনগণ মিলে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। তাহলেই মিডিয়ার স্বাধীনতা অর্জিত হবে।”
বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, “আওয়ামী লীগের ইতিহাস যদি আপনারা দেখেন, দেখবেন এটা হচ্ছে সংবাদপত্রবিরোধী ইতিহাস, মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিপক্ষের ইতিহাস। এরা তারা সবসময় নির্দেশ করেন এবং তারা গর্ব অনুভব করেন। ফ্যাসিজমের প্রতি অনুরক্ত একটি দল এটা করবে, এটা খুব স্বাভাবিক।
“চীনে যেমন কমিউনিস্ট পার্টির লোক ছাড়া কেউ রেডিও-টিভি বা নিউজ পেপারের মালিক হতে পারেন না। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের লোক ছাড়া কেউ রেডিও-টিভি বা পত্রিকার মালিক হতে পারেন না।”
বিএফইউজের বর্তমান সভাপতি এ্ম আবদুল্লাহ বলেন, “নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা (সরকার) আরও কিছু নিবর্তনমূলক আইন করতে যাচ্ছে। উদ্দেশ্যে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা।
“শুধু তাই নয়, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পরশুদিন যে বক্তব্য রেখেছেন, কী ভয়ংকর একটা বিষয় যে, সেখানে সাংবাদিকরা কোনো অপরাধ করলে সেটার জন্য ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। প্রেস কাউন্সিলের আইন সংশোধন করে এই ধারা যুক্ত করা হচ্ছে।”
ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, “এই সব নিবর্তনমূলক আইন এ্ককেটি বিষমাখা তীর। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি।”
বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে ও ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, কায়কোবাদ মিলন, আবদুল আউয়াল ঠাকুর, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বাকের হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন ও শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন।