দেশের
১০ জেলার ৬৪ উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ
প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শনিবার তিনি এ কথা
জানান।
তিনি বলেন, ‘১০ জেলার ৬৪ উপজেলা বন্যাকবলিত। ১২২ বছরের ইতিহাসে
সিলেটে এত পানি হয়নি। সিলেটের ৬০, সুনামগঞ্জ-হবিগঞ্জের ৮০-৯০ শতাংশ ডুবে
গেছে।
‘আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও বন্যার যে পূর্বাভাস ছিল, তারা যেভাবে
পূর্বাভাস দিয়েছিল সেভাবেই পানিটা বেড়েছে। ১৪ তারিখ থেকে পানি বাড়া শুরু
করেছে, ১৫ তারিখ বেড়েছে এবং ১৬ ও ১৭ তারিখে ৪ ফুট করে ৮ ফুট পানি বেড়েছে।
এটা যে কত ভয়ংকর ব্যাপার সেটা আমরা সবাই অনুধাবন করতে পারছি।’ তিনি বলেন,
‘গতকাল (শুক্রবার) সকালে পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি
হয়ে যায়। তাদের উদ্ধারে সিভিল প্রশাসন তাদের যে জলযান, পাথরবহনকারী জলযান
এবং পর্যটন এলাকার নৌযান নিয়ে মাঠে নামেন। কিন্তু যে পরিমাণ পানিবন্ধি আছেন
এগুলো ছিল অপ্রতুল। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর্মডফোর্স ডিভিশনকে সেনা নৌ
ও কোস্টগার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দেন। এরপর ৩১টি স্পিডবোটসহ সেনাবাহিনী
উদ্ধারে নামে, রাতে ৩০ জন ডুবুরিসহ নৌবাহিনী নৌযান নিয়ে উদ্ধার চালায়।
‘সম্মিলিত
অভিযানে সিলেটের ২৫ হাজার মানুষকে ৪০০ আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করে।
সুনামগঞ্জে ২০০ আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৬৫ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে তারা
নিয়ে যায়। এখানে রান্না করা খিচুড়ি, মুড়ি, চিড়া বিস্কিটসহ পানি ও পানি
বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে। আমরা সুনামগঞ্জ ও সিলেট উভয় জেলাতেই
৮০ লাখ টাকা করে ক্যাশ দিয়েছি। প্রায় ৩২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার দেয়া
হয়েছে।’
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটে এক হাজার টন ও সুনামগঞ্জে ৫০০
টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমরা নগদ যে টাকা দিয়েছি সেখানে নির্দেশনা
দিয়েছি চিড়া-মুড়ি-গুড়-পাউরুটির মতো রেডিমেড খাবার দেয়ার জন্য।’
আশ্রয়কেন্দ্রের
ব্যবস্থাপনা ভালো আছে এবং যথেষ্ট পরিমাণে খাবার মজুদ আছে বলেও আশ্বস্ত
করেন তিনি। এনামুর রহমান বলেন, ‘যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাবে তারা প্রত্যেকেই
খাবার পাবে এবং পানিবন্দি অবস্থায় যারা সাহায্য চাইবে তাদেরও সহযোগিতা দেয়া
হবে। আমাদের যথেষ্ট চাল ও শুকনা খাবারের প্যাকেট মজুদ আছে। অর্থ আমাদের
প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা অবশিষ্ট আছে। আমরা আরও ২০ কোটি টাকা চেয়েছি সেটা
আমাদের দিয়ে দেয়া হবে। মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে কোনো কমতি নেই।’
তিনি
বলেন, ‘আমাদের কাছে যে পূর্বাভাস রয়েছে আরও ৪৮ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি পাবে এবং
এরপর থেকে পানি নামতে শুরু করবে। কাজেই এ দুদিনে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি
হবে। মাঠ প্রশাসনসহ সবাইকে সতর্কবার্তা দেয়া আছে এবং উদ্ধারকাজ যাতে চলে
এবং নিরাপদ আশ্রয়ে যাতে নিয়ে আসা হয়।’
তিনি আশা করেন, শনিবারের মধ্যেই পানিবন্দি সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তর সম্ভব হবে।
প্রতিমন্ত্রী
এনাম বলেন, ‘রিমোট এলাকায় উদ্ধার চালাতে সমস্যা হচ্ছে এতে আমি দ্বিমত করব
না এতো বিস্তৃর্ণ এলাকায় সেখানে যে পরিমাণ জলযান আছে সেগুলো নিয়ে সেনা ও
নৌবাহিনী চেষ্টা করছে একেবারে যে সবাইকেই উদ্ধারের আওতায় আনা গেছে তা নয়।
তবে যেভাবে কাজ চলছে আশা করি আজকের মধ্যে সবাইকে উদ্ধার করে আনতে পারব।
‘পানি
নেমে যাচ্ছে। সকাল পর্যন্ত ১ ফুট পানি নেমে গিয়েছিল। আজকে আবার বৃষ্টিপাত
হওয়ায় বেড়েছে। পানি না নামলে তো আরও ভয়াবহ অবস্থা হতো।’