বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতিমূলক কাজে ঢাকায় গিয়েছিলেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মন্ডলীভোগের যুবক রনি তালুকদার। বন্যার শুরুতে তিনি পরিবারের সাথে ফোনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে পরিবারের সদস্যদের সাথে শেষ কথা হয় তার। মা জানিয়েছিলেন, বাসার দোতলা পর্যন্ত পানি চলে আসছে। পানি বাড়ছে দ্রুত। এরপর থেকে সবধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মোবাইল নেটওয়ার্ক, বিদ্যুৎ সবকিছু বন্ধ হয়ে যায় ছাতকের। দুশ্চিন্তায় পড়েন রনি।
মনকে বুঝাতে না পেরে পরিবারের টানে ঢাকা থেকে লাইফ জ্যাকেট ও রাবারের নৌকা নিয়ে তিনি ছুটে আসেন সিলেটে। গুগল ম্যাচ সার্চ করে দেখেন সিলেট থেকে নৌপথে ছাতকের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। তাই শনিবার বিকালে সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানা এলাকা থেকে লাইফ জ্যাকেট গায়ে জড়িয়ে তার সেই রাবারের নৌকা ভাসিয়ে দেন ছাতকের উদ্দেশ্যে।
কিছুদূর যাওয়ার পর প্রবল স্রোতের তোড়ে পড়েন তিনি। এ সময় তার রাবারের নৌকাটি নিয়ন্ত্রণে রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তিনি সাহায্যের জন্য চিৎকার শুরু করেন। এসময় ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে একদল লোক ত্রাণ বিতরণে যাচ্ছিলেন। রনির এই দুরবস্থা দেখে তাকে উদ্ধার করেন। উদ্ধারের পর রনি তালুকদার জানান, ‘আমার পরিবারের কোনও খোঁজ পাইনি এখনও। তবে যতটুকু ধারণা করছি, তারা নিরাপদে আছে। এখন তাদের খোঁজে ট্রাকে করে ছাতকে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘শেষ যখন কথা হয় তখন মা জানিয়েছিলেন বাড়ির দোতলা পর্যন্ত পানি উঠেছে। পানি আরও বাড়ছে। কোনও উপায় না পেয়ে ঢাকা থেকে ৭ হাজার টাকা দিয়ে নৌকা কিনে সিলেটে চলে আসি এবং ইঞ্জিন নৌকার খোঁজ করি। কিন্তু কেউ যেতে চায়নি। আবার কেউ যেতে চাইলে ৪০-৬০ হাজার টাকা ভাড়া চায়। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের টানে পানিতে নেমে পড়ি।’
রনি তালুকদারকে উদ্ধারকারীদের একজন সিলেটের মদন মোহন কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আবুল কাশেম বলেন, ‘প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, যুবকটি এমনিতেই বন্যার পানিতে নেমেছেন। পরে তার আকুতির পর তাকে উদ্ধার করি।’