রণবীর ঘোষ কিংকর: কুমিল্লার চান্দিনা বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩৮ মালিকের ৪৪টি দোকান পুড়ে ছাঁই। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করেন ব্যবসায়ীরা। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক সক সার্কিট থেকে ওই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে।
শুক্রবার শুক্রবার (৮ জুলাই) দিনগত রাত পৌঁনে ৩টায় উপজেলা সদরের মধ্য বাজারে সৃষ্ট আগুন নিয়ন্ত্রণ হয় ভোর ৫টায়। ততক্ষণে ৩৮টি দোকান মালিকের ৪৪টি দোকান পুড়ে ভষ্মিভূত হয়। এছাড়াও ফুটপাতে থাকা অন্তত ২০টির বেশি ক্ষুদ্র দোকান পুড়ে যায়। ঈদের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে এই অগ্নির ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়ে ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (৯ জুলাই) সকালে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের খোঁজ খবর নিয়ে পাশে দাঁড়াতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। প্রতিটি ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করে তাৎক্ষনিক ভাবে তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের জন প্রতি ১০ হাজার, উপজেলা প্রশাসন থেকে ৭ হাজার ও পৌরসভা থেকে ২ হাজার টাকা করে প্রদান করেন।
সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জিয়াউল হক মীর, পৌর মেয়র মো. শওকত হোসেন ভূইয়াসহ উপজেলা ও পৌরসভার কর্তকর্তাগণ এসে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করেন। তাদের ওই তালিকায় ৪৪টি দোকানের তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
বাজারের মুদি ব্যবসায়ী বিমল নন্দি দোকানের ধ্বংসস্তুুপে দাঁড়িয়ে বাকরূদ্ধ। কারও কোন কথারই জবাব দিচ্ছেন না। হঠাৎ বুক ফাঁটা চিৎকার করে বলে উঠলেন, ‘শুধু ক্যাশের মধ্যেই নগদ ১০ লাখ টাকা ছিল। আজকের শেষ বেচাটা বেচতে পারলেও তো হইতো।’
চান্দিনা চাল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির সভাপতি কাউন্সিলর দুলাল মিয়া জানান, অগ্নিকান্ডে আমার ৩টি দোকান পুড়ে অন্তত ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঈদের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে প্রতিটি দোকানেই ছিল মালামালে ভরপুর। শনিবার চাঁন রাতের বেচাকেনা করার জন্য অপেক্ষায় ছিল ব্যবসায়ীরা।
বাজারের মুদি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাহারুল ইসলাম বাহার জানান, বাজারের যে অংশটিতে অগ্নিকান্ড ঘটেছে পুরো অংশটি পৌরসভা নির্মিত চাল বাজার। এ বাজারের ৪৩টি দোকানের মধ্যে ১৯টি দোকানই মুদি ব্যবসায়ীদের। বাকিগুলোতে চাল ও অন্যান্য দোকান রয়েছে। ৪৩টি দোকানের আশ-পাশে ফুটপাতে রয়েছে অন্তত ২০টির মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকান। আগুনে সব পুড়ে ছাঁই। এতে অন্তত ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।
চান্দিনা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন মাস্টার অনয় কুমার ঘোষ জানান, আমাদের ২টি ইউনিট প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। আশ-পাশের মার্কেটগুলোতে যাতে আগুন ছড়িয়ে পড়তে না পারে আমরা সেই চেষ্টাও করেছি।
সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সকল ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের কথা শুনেন ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের পুর্ণবাসন করতে পৌরসভাকে নির্দেশ প্রদান করেন অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল হক মীর, পৌর মেয়র শওকত হোসেন ভূইয়া, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দেবেশ চন্দ্র দাস, মাইজখার ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্ সেলিম প্রধান, উপজেলা যুবলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চান্দিনা বাজার ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম, ব্যবসায়ী শামীম হোসেন সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।