রণবীর ঘোষ কিংকর।
সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ঈদের আনন্দের ছুটি বিশাদে রূপ নিয়েছে। পবিত্র ঈদ-উল আযহা’র আগে পরে কুমিল্লার সড়কে ঝড়ছে ১০টি তাঁজা প্রাণ। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় স্বামী-স্ত্রী, দাউদকান্দি উপজেলায় দুই ভাইসহ তিনজন নিহতের খবর রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার (১৩ জুলাই) রাতে মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের কাবিলা এলাকায় মহাসড়ক পারাপারের সময় বাস চাপায় স্বামী-স্ত্রী নিহত হয়। এতে আহত হয় তাদের দুই সন্তান।দুর্ঘটনার পরপরই বাসচালককে আটক করা হয়েছে। নিহতরা হলেন মোকাম ইউনিয়নের বাড়াইর গ্রামের ইদ্রিস মিয়া ও তার স্ত্রী লুৎফা বেগম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্তানদের নিয়ে গাড়ি থেকে কাবিলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নামেন ওই দম্পতি। বাড়ি যাওয়ার জন্য মহাসড়ক হেঁটে পার হচ্ছিলেন তারা। এ সময় ঢাকাগামী ঢাকা এক্সপ্রেসের বাস তাদের চাপা দেয়। ঘটনাস্থলে লুৎফা বেগম ও হাসপাতালে নেয়ার পথে ইদ্রিস মিয়ার মৃত্যু হয়।
ময়নামতি ক্রসিং হাইওয়ে থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মঙ্গলবার (১২ জুলাই) দুপুরে জেলার মনোহরগঞ্জে টিউবওয়েলের সাথে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সৌরভ হোসেন (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে।
মনোহরগঞ্জ-আমড়াতলি সংযোগ সড়কের পাশে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। সৌরভ বরুড়া উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের হাজিপুরা গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, রাস্তার পাশে ভাঙা একটি মোটরসাইকেলসহ এক যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে দেখে আমরা তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে দেখি তিনি মারা গেছেন। পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তপন কুমার বাকচী বলেন, অতিরিক্ত গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (১১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় লাকসামে চলন্ত ট্রেনে টিকটক ভিডিও বানাতে গিয়ে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মেহেদী হাসান (১৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। লাকসাম রেলওয়ে জংশনের কিছু দূরত্বে চাঁদপুর রেলগেট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মেহেদী হাসান ফেনীর দেবীপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরগামী সাগরিকা এক্সপ্রেসের ছাদ উঠে টিকটক ভিডিও বানাচ্ছিল ওই যুবক। হঠাৎ থেকে ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে শরীর ছয় টুকরো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে লাকসাম রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুনীল চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ওই কিশোরের সহপাঠীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি তারা ফেনী থেকে চাঁদপুর ঘুরতে যাচ্ছিল। লাকসাম জংশনের অদূরে চাঁদপুর রেলগেট এলাকায় আসলে হাত ফসকে ট্রেনের নিচে পড়ে যায় কিশোরটি।
রোববার (১০ জুলাই) ঈদের দিন বিকেলে গ্রাম থেকে মোটরসাইকেল যোগে কোরবানীর মাংস নিয়ে শহরের বাসায় আসার পথে বাস চাপায় চাচা-ভাতিজা নিহত হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।নিহতরা হলেন- বরুড়ার খোশবাস উত্তর ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের সফিকুল ইসলামের ছেলে মাকসুদুর রহমান (৩৮) ও তার প্রবাসী রিপনের ছেলে ফাহাদ হোসেন (৮)।
জানা যায়, মাকসুদুর রহমান পরিবারসহ কুমিল্লা নগরীর তালপুকুর পাড় এলাকায় ভাড়ায় বসবাস করতেন। রোববার কোরবানি শেষে মোটরসাইকেল যোগে চাচা-ভাতিজা মাংস নিয়ে কুমিল্লার তালপুকুর পাড়া ভাসা আসায় আসছিল। বিকেলে কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় পৌঁছালে একটি বাস তাদের চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চাচা-ভাতিজা নিহত হন।
কুমিল্লা ময়নামতিক্রসিং হাইওয়ে থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শনিবার (০৯ জুলাই) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলী এলাকায় বাস চাপায় চালকসহ মোটরসাইকেল এর চালকসহ আরও দুই আরোহীর মৃত্যু ঘটে।
নিহতরা হলেন- স্থানীয় সাংবাদিক দৈনিক সমাজকন্ঠ পত্রিকার প্রতিনিধি বেকিনগর গ্রামের রাসেল হোসেন, একই গ্রামের শরীফ হোসেন ও তাফসির হোসেন। শরীফ ও তাফসির আপন ভাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহাসড়কের সংযোগ সড়ক থেকে মোটরসাইকেলটি মহাসড়কে উঠলে ঢাকাগামী আল-বারাকা নামের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদেরকে চাপা দিলে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। তাদেরকে গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
দাউকান্দি হাইওয়ে থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) ফরিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে, শুক্রবার (৮ জুলাই) সকালে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে চন্দনা বাজার এলাকায় কাভার্ডভ্যানের সাথে মোটরসাইকেল এর ধাক্কায় শ্রাবন্তী আক্তার নামে এক কলেজছাত্রী নিহত হয়েছেন।
নিহত শ্রাবন্তী লাকসামের উত্তরদা গ্রামের ফয়েজ আহমেদের মেয়ে। তিনি লাকসাম নবাব ফয়জুন্নেছা কলেজের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, মামার মোটরসাইকেলে করে বাড়ির উদ্দেশে যাচ্ছিলেন শ্রাবন্তী। চন্দনা বাজার এলাকায় এলে পেছন থেকে ঢাকামুখী একটি কাভার্ডভ্যান মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে মামা-ভাগ্নি দু’জনেই রাস্তায় ছিটকে পড়েন। মামা রাস্তার একপাশে থাকলেও শ্রাবন্তীকে কাভার্ডভ্যানটি চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই শ্রাবন্তীর মৃত্যু হয়। লালমাই হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাকসুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।