নির্বাচনে কোনও পক্ষ ‘তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে প্রতিপক্ষকে রাইফেল নিয়ে মোকাবিলা করার’ পরামর্শ দিয়ে দেওয়া বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এই বক্তব্যের এজন্য তিনি ‘অনুতপ্ত’ বলেও জানান। তবে তিনি দাবি করেন, তিনি কৌতুক করে সেই বক্তব্য দিয়েছিলেন। কিন্তু গণমাধ্যমে বিষয়টি সেভাবে প্রকাশ হয়নি।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসব কথা বলেন। দলটির চেয়ারমান মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনীর নেতৃত্বে ঐক্যজোটের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি সংলাপে অংশ নেন। সংলাপে ইসলামী ঐক্যজোটের এক নেতা সিইসিকে এ ধরনের বিতর্কিত বক্তব্য না দেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সমাপনী বক্তব্যে সিইসি তার জবাব দেন।
এনডিএম-এর সঙ্গে সংলাপে এ ধরনের একটি বক্তব্য আসার বিষয়টি উল্লেখ করে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমার এক ভাই বলেছেন- একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হছে। পরশু আমি বলেছিলাম যে- কেউ তলোয়ার নিয়ে এলে আপনারা রাইফেল নিয়ে দাঁড়াবেন। এটা আপনাদের বুঝতে হবে, একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই কথাটি কখনও মিন করে বলতে পারেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমি হয়তো অল্প শিক্ষিত। অল্প শিক্ষিত হলেও কেউ এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। ববি হাজ্জাজ সাহেবের কথার পিঠে আমি হেসে বলেছি- তলোয়ার দেখালে আপনি একটি বন্দুক নিয়ে দাঁড়াবেন। এটা হচ্ছে কথার পিঠে কথা। এটা কখনও একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মিন করতে পারে না। আর যদি এটা আমি মিন করতে পারতাম- প্রথম দিন থেকেই সবাইকে বলতাম, আপনারা অস্ত্র সংগ্রহ করবেন। আপনারা অস্ত্র সংগ্রহ করে নিজেদের শক্তিশালী করুন। আর এই কথাটি কখনো প্রথমদিন থেকে বলেছি বলে মনে পড়ে না।’
‘হিউমার বা কৌতুক’ করে বলা একটি কথাকে ‘সিরিয়াসভাবে’ প্রচার করা হয়েছে দাবি করে সিইসি বলেন, ‘এটাকে জাতীয় পর্যায়ে- একেভাবে অকাট্ট সত্য, যেন একটা ঐশী বাণী হিসেবে প্রচার করে... অনেক ধরনের ব্যানার দিয়ে। যেটাতে আমরা..। আমরা মিডিয়াকে খুব সম্মান করি। আমাদের স্বচ্ছতা রক্ষার জন্য বিগত যে নির্বাচনগুলো হয়েছে। মিডিয়াকে অবাধ সুযোগ দিয়েছি- ভেতরে গিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে। কারণ আমরা স্বচ্ছতায়.. কারণ স্বচ্ছতা একটি শক্তি।’
নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যমকে তথ্য সরববাহে উদার নৈতিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আমরা যতগুলো সম্মেলন বা আলোচনা করেছি কোনও রাখ-ঢাক করিনি। বড় স্ক্রিনে আমার কথা ও ছবি প্রচার করা হয়। কিন্তু কেন মিডিয়া এটা করলো? এটা কী বুঝে, নাকি না বুঝেই। ওনাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা খুবই আছে। কিন্তু এটা (প্রচার) করে আমার মর্যাদাকে একেবাবেই ক্ষুণ্ণ করে দেওয়া হয়েছে এবং আপনারাও এটা বিশ্বাস করছেন।’
এটা বিশ্বাস করার মতোই কথা উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমার বাবা বেঁচে থাকলে উনিও বিশ্বাস করতেন যে, আমার ছেলে এমন বাজে পরামর্শ দিল কেন? আমার মা বেঁচে থাকলেও বিশ্বাস করতেন। তারা দুজনই পেপার পড়তেন। পেপার পড়ে তারা হয়তো বলতেন- বাবু এত খারাপ পরামর্শ দিলে কেন? তো আমি এজন্য এটাই বলবো- কখনও কখনও আমরা ভুল করে ফেলি। এর জন্য অনুতপ্ত।
তিনি বলেন, ‘আমি হিউমার করতে গিয়েছিলাম, এটাই আসল। কিন্তু ওটাকে ওইভাবে প্রচার না করে কিছুটা বস্তুনিষ্ঠভাবে বলা হতো- উনি হিউমার করে বলেছেন। তাহলে আমার হয়তো...। আমি এটা বলেছি এটা আপনারাও (ঐক্যজোট) বিশ্বাস করেছেন। এজন্য বলেছেন- আমি যেন এ ধরনের কথা না বলি। কিন্তু এটা আমি মিন করে বলিনি। যাক আমাকে ক্ষমা করবেন এজন্য, ক্ষমা করবেন।’
নির্বাচন কমিশন সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায় পুনরোক্তি করে সিইসি বলেন, ‘আমরা সকলেই সৎ, কর্মনিষ্ঠ। স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে দৃঢ় মনোবল ও শক্তি নিয়ে মাঠে আসার পরামর্শ দিয়ে সিইসি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে বলবো- আপনারা আন্তদলীয় সংলাপ করেন, মিটিং করেন। কিছু প্রশ্নে মোটাদাগে ঐকমত্য হওয়ার চেষ্টা করেন। কারণ এটা কিন্তু বড় ধরনের সমস্যা, কেন্দ্রে কেন্দ্র সহিংসতা হয়। অর্থ ও পেশি শক্তির চক্রের সমাধান করা। আমাদের সমবেত প্রচেষ্টা না থাকলে নির্বাচন কমিশন একার পক্ষে এটা সমাধান করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।’
ইসলামী ঐক্যজোটের ‘সীমিত সরকারের প্রস্তাব’ বিষয়ে তিনি বলেন, এই প্রস্তাবের সাথে আমরা একমত পোষণ করছি না, দ্বিমতও করছি না। এটা রাজনৈতিক বিষয়। এই দাবিগুলো আপনারা করবেন। এই বক্তব্য আপনারা সরকারের কাছে উপস্থাপন করুন। আমাদের দায়িত্ব নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।’