বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমার প্রেক্ষিতে সরকার দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পর খুচরা পর্যায়ে দাম কিছুটা কমেছে। তবে সরকার যে হারে কমানোর কথা বলেছে সে হারে দাম কমেনি। এমনকি নতুন দামের সয়াবিন তেল এখনো বাজারে আসেনি।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিগুলো বৃহস্পতিবার বোতলের যে সয়াবিন তেল সরবরাহ করেছে তাতে আগের মূল্য লেখা রয়েছে। কিছু ব্যবসায়ী বোতলে লেখা মূল্যে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন। আবার কিছু ব্যবসায়ী বোতলে উল্লেখ করা মূল্যের থেকে কম দামে তেল বিক্রি করছেন।
বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমায় সরকার গত ১৭ জুলাই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। আর ২ লিটারের বোতলের সয়াবিন তেলের দাম ৩৯৮ টাকা থেকে কমিয়ে করা হয় ৩৭০ টাকা এবং ৫ লিটারের বোতল ৯৮০ টাকা থেকে কমিয়ে আনা হয় ৯১০ টাকায়।
সরকার নির্ধারিত এ দাম ১৮ জুলাই থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। তবে এর তিনদিন পর নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল বিক্রির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) থেকেই বাজারে নতুন দামের তেল পাওয়ার কথা।
তবে শুক্রবার (২২ জুলাই) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানে সরকার নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল মিলছে না। অবশ্য আগের দাম উল্লেখ করা বোতলের সয়াবিন তেল কিছুটা কম দামে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এক লিটার বোতলের সয়াবিন তেল ১৯৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৯৫০ থেকে ৯৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রামপুরার ব্যবসায়ী মো. আলামিন বলেন, গতকাল রূপচাঁদার নতুন বোতলের তেল এসেছে। এক লিটারের বোতলে দাম উল্লেখ আছে ১৯৯ টাকা আর পাঁচ লিটারের বোতলে ৯৮০ টাকা। তবে আমরা এক লিটার ১৯৫ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৯৬০ টাকায় বিক্রি করছি।
এ ব্যবসায়ীর দোকানে থাকা বোতলে উল্লেখ করা মূল্যের পাশে উৎপাদনের তারিখ দেখা যায় ৭ জুলাই। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উৎপাদনের পর তেল বাজারে আসতে ১০-১৫ দিন লেগে যায়। কোম্পানির লোক গতকালই (বৃহস্পতিবার) আমাদের এ তেল দিয়ে গেছে।
বাজারের অন্য এক ব্যবসায়ী জুবায়ের হোসেন বলেন, নতুন দামের বোতলের সয়াবিন তেল আমরা এখনো পাইনি। তবে আগের তেল দাম কমিয়ে লোকসানে বিক্রি করছি। এক লিটারের বোতলের তেল ১৯৫ টাকা আর পাঁচ লিটারের বোতল ৯৫০ টাকায় বিক্রি করছি।
লোকসানে তেল বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার দাম কমানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে। হুট করে কখন কে অভিযান চালায় বলা মুশকিল। অভিযানে জরিমানা দেওয়ার চেয়ে লোকসানে বিক্রি করাই ভালো।
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী সাদ্দাম বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৮৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারের দাম ৯১০ টাকা হওয়ার কথা। তবে এ দামের তেল আমরা এখনো পাইনি। এরপরও আমরা আগের থেকে কম দামে বিক্রি করছি। ১৯৯ টাকা উল্লেখ থাকা বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেল ১৯৫ টাকা এবং ৯৮০ টাকার পাঁচ লিটারের বোতল ৯৫০ টাকা বিক্রি করছি।
আপনারা যে দামে বিক্রি করছেন সরকার নির্ধারিত মূল্য তো তার চেয়ে কম। কেন সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করছেন না- এমন প্রশ্নে এ ব্যবসায়ী বলেন, কোম্পানি কম দামে তেল না দিলে আমরা কীভাবে দাম কমিয়ে বিক্রি করবো? নতুন মূল্যের তেল পেলে অবশ্যই নির্ধারিত দামে বিক্রি করবো।
এদিকে সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৬ টাকা আর এক লিটার খোলা পাম তেল ১৫২ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। তবে এ দামে খোলা সয়াবিন বা পাম তেল কিনতে পারছেন না ক্রেতারা।
খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেল ও পাম তেল কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল কিনতে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা আর প্রতি কেজি পাম তেল কিনতে ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা।
সরকার নির্ধারিত দামে খোলা সয়াবিন ও পাম তেল বিক্রি না হওয়ায় কারণ হিসেবে মালিবাগের ব্যবসায়ী সিয়াম বলেন, পাইকারিতে খোলা সয়াবিন তেলের দাম এখনো কমেনি। আমরা বেশি দামে তেল কিনে এখন কম দামে কিভাবে বিক্রি করবো। লোকসান দিয়ে তো ব্যবসা করা যাবে না। পাইকারিতে যে দামে কিনেছি, কেউ চাইলে তার রশিদ দেখিয়ে দিতে পারবো।