জাগো
নিউজ: দেশে হঠাৎ করে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। এমন সংকটের
কারণে দেশজুড়ে প্রতিদিন লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের
লেখাপড়ায় বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটছে। তীব্র গরমের মধ্যে ক্লাসে বা রাতে বাসায়
বিদ্যুৎ চলে গেলে ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে।
রাজধানীর
মিরপুর ৬০ ফুট মনিপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে থাকেন মিথুন আক্তার। তার ছেলে
বাঙলা কলেজে একাদশে ও মেয়ে মনিপুর স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। তিনি বলেন, আগে
বিদ্যুৎ না থাকাটা ছিল কালেভদ্রে, এখন সেটি নিয়মিত হওয়ায় নানা ধরনের
সমস্যা দেখা দিয়েছে।
মিথুন আক্তার বলেন, প্রতিদিন দিনে, সন্ধ্যায় ও রাতে
লোডশেডিং হচ্ছে। এ ঘণ্টার ওপর অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে। রাতে বিদ্যুৎ চলে
গেলে ছেলে-মেয়েরা আর পড়তে বসতে চায় না। বিদ্যুৎ না থাকলে বাচ্চারা অন্ধকারে
না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ধমক দিয়ে ওদের খাওয়ানো গেলেও পড়তে বসানো সম্ভব হয় না।
মিরপুর
মনিপুর স্কুলের মিজানুর রহমান নামে সিনিয়র এক শিক্ষক বলেন, আগে সব
শিক্ষার্থী বাসার পড়া ঠিক মতো দিতে পারলেও এখন কেউ কেউ পিছিয়ে পড়ছে। বাসায়
বিদ্যুৎ থাকছে না বলে তারা কারণ দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে একাধিক অভিভাবককে ডেকে
সতর্ক করা হয়েছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও
কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ্ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ
থাকায় ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে কোনো সমস্যা হয়নি। বর্তমানে
লোডশেডিং শুরু হওয়ায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, সব
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জেনারেটর নেই বলে বিদ্যুৎ চলে গেলে তীব্র গরমের মধ্যে
শিক্ষকদের ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মনোযোগ ধরে রাখা
যাচ্ছে না। অনেক শিক্ষার্থী গরমের কারণে ক্লাসের বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে
ক্লাসে পাঠদানে বিঘ্ন ঘটে।
রহমত উল্লাহ্ বলেন, প্রতিদিন লোডশেডিং হওয়ায়
শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ভোগান্তি হচ্ছে। তবে এজন্য স্কুল-কলেজের ছুটি
বাড়িয়ে দেওয়া বা স্কুল বন্ধ রাখা কোনো সমাধান নয়, বরং দ্রুত সময়ের মধ্যে
আগের মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল
অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী নাজনীর সুরাইয়া বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে মতিঝিল
এলাকায় বসবাস করছি। সাধারণত আমি রাতে কলেজের পড়া ও বাসার কাজ করি। বর্তমানে
আমাদের এলাকায় দিন ও রাতে সমানতালে লোডশেডিং হচ্ছে। সে কারণে কলেজের
কাজগুলো ঠিকমতো করতে পারছি না। জরুরি কাজ থাকলে সেটি শেষ করতে অনেক রাত হয়ে
যাচ্ছে বলে ঘুমাতে দেরি হচ্ছে। আবার সকালে উঠতেও দেরি হচ্ছে।
সুরাইয়ার
মা নারগিস সুমাইয়া বলেন, কিছুদিন থেকে বিদ্যুৎ চলে গেলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা
পর আসছে। সে কারণে মেয়েটার রাতে ঘুমাতে অনেক দেরি হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকলে
চার্জার ফ্যান নিয়ে গরমের মধ্যে ঘরে বসে থাকা সম্ভব হয় না। সে কারণে
বিদ্যুৎ না থাকলে সময় অপচয় হচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিভাবক ফোরামের সভাপতি
জিয়াউল কবির দুলু বলেন, নিয়মিত লোডশেডিং শিক্ষার্থীদের জীবনের মূল্যবান সময়
নষ্ট হচ্ছে। শহরের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকলে
জেনারেটর বা বিকল্প ব্যবস্থা নেই বলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি আরও
বলেন, এমনিতে করোনার জন্য প্রায় দুই বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল বলে
শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে গেছে। নিয়মিত লোডশেডিং হলে তারা আরও পিছিয়ে পড়বে।